নাইওর বলতে গ্রাম বাংলার প্রচলিত নিয়মানুযায়ী বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি থেকে বাপের বাড়িতে স্বীয় কন্যা অতিথি হয়ে আসাকে নাইওর বলে। আট- নাইওর, মাইসা – নাইওর, জ্যৈষ্ঠমাসে নাইওর ,এবংকি প্রথম সন্তানটি বাপের ভিটায় হবে এর জন্যও নাইওর আনা হয়। হতদরিদ্র সখিনা সবেমাত্র সাদী হয়েছে। হাতের মেহেদী রংও শেষ হয়নি শুরু হয়ে গেছে শ্বশুর বাড়ির অমানবিক নির্যাতন। সখিনা মেঘনা পাড়ের সিরাজল বেপারীর মেয়ে। বাবার সংসারে হারভাঙ্গা পরিশ্রম করেছে তবুও দেখা মিলেনি দিনশেষে ঠিকমত তিনবেলা আহার। এরূপ দারিদ্রকষাঘাতের মাঝেও সিরাজ মেয়ের ভবিষৎতের কথা মাথায় রেখে সাদী দেন উজান- ভাটির দেশে মানছুর হাওলাদারের ছাওয়ালের সনে। ছাওয়ালটা খেটে খাওয়া কর্মী যথেষ্ট ভালো । সখিনার নিয়তির সুখে বাধা শ্বাশুড়ি- ননদ ।মাস কয়েক গেলেই বলতে থাকে কেমন বাপ-মা মেয়েটা বেঁচে আছে না নাকি মরে গেছে একবারতো খোঁজখবর নিতে পারে আরও কত কি ? সখিনা দিক না পেয়ে দু:খ নিবারনে পা বাড়ায় কলসি কাঁখে নদীর বুকে।
এতেও বাধা মাঝ দুপুরে নদীর ঘাটে কি? সখিনার বিশ্বাস আমার মত নদীও কত শত দু:খ বয়ে বেড়ায় যাই তার কাছে গেলে হয়ত একটু শান্তি পাব। সখিনা হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাপের ভিটার পানে। হঠাৎ দেখে একটা পাল তোলা নাউ সখিনার দিকে ধেয়ে আসছে। মাঝির সাথে সখিনার কথপোকথন । মাঝি তোমার গায়েই আমার বসতি নিবাস পরিচয় সুবিধার্থে বলি জোড় তালগাছওয়ালা বাড়িটা আমাদের । মাঝি আমার মাথার কিড়া মাঝি – বড় কষ্টে আছি । মাঝি বুঝেছি আমি আশ্বাস দিলাম – থাকো থাকো থাকোরে বইন পন্হের দিকে চাইয়া/ বাপ- ভায়ে কমু খবর নাইওর নিত আইয়া।