প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জ শহরের দুই নম্বর বাবুরাইল এলাকায় বাসার মধ্যে একই পরিবারের পাঁচজনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল শনিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যার মধ্যে কোনো এক সময় এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তারা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় রাত সাড়ে আটটার দিকে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন তাসলিমা বেগম (৪০), তাঁর ছেলে শান্ত (১০), মেয়ে সুমাইয়া (৫), ভাই মোরশেদুল (২৫) এবং তাসলিমার জা লামিয়া (২৫)। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত লামিয়ার স্বামী শরীফ মিয়াসহ দুজনকে আটক করেছে। শরীফ ঢাকায় একটি মুঠোফোনের দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেন। খবর পেয়ে ঢাকা থেকে যাওয়ার পর ঘটনাস্থল থেকেই তাঁকে আটক করা হয়।
গতকাল রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদউদ্দিন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-১১-এর কমান্ডিং অফিসার আনোয়ার লতিফ খানসহ পুলিশ ও র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছিলেন। যে ফ্ল্যাটে ঘটনা ঘটেছে, সেখানে পুলিশ, র্যাব, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া অন্য কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। রাত ১২টার দিকে ঢাকা থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্তকাজ শুরু করে।
নিহত তাসলিমার খালাতো বোন নয়নতারা জানান, ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ভেলাবাড়ি গ্রামে তাসলিমাদের বাড়ি। তাঁর বাবার নাম বারেক মিয়া। গত শুক্রবার বিকেলে তাসলিমার ভাই মোরশেদুল নারায়ণগঞ্জ শহরের দুই নম্বর বাবুরাইল এলাকার তাসলিমার ভাড়া বাড়িতে বেড়াতে আসেন। ওই রাতে বেশ কয়েকবার ফোন করেও তাসলিমার মা মোর্শেদা বেগম মোরশেদুল বা তাসলিমাকে পাচ্ছিলেন না। সকালে মোর্শেদা বেগম নারায়ণগঞ্জে থাকা তাঁদের কয়েকজন আত্মীয়কে ফোন করে জানান, মোরশেদুল ও তাসলিমা ফোন ধরছেন না। তাসলিমার বাসায় গিয়ে খোঁজ নিতে আত্মীয়দের অনুরোধ করেন মোর্শেদা বেগম। দুপুরের পরে আত্মীয়দের কয়েকজন ওই বাসায় গিয়ে দরজায় তালা দেখে ফিরে যান। সন্ধ্যায় ওই ঘর থেকে গন্ধ বের হলে এলাকাবাসী তাসলিমার আত্মীয়দের ও পুলিশকে খবর দেয়। রাত আটটায় পুলিশ এসে তালা ভেঙে ঘরে ঢোকে। এরপর ঘরের ভেতর পাঁচজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও স্থানীয় কাউন্সিলর ওবায়েদ উল্লাহ বলেন, বাসার এক কক্ষে দুটি লাশ এবং অন্য কক্ষে তিনজনের লাশ পড়ে থাকতে তিনি দেখেছেন। প্রত্যেক লাশের সঙ্গে রক্ত রয়েছে। জবাই করে বা মাথায় আঘাত করে তাদের হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
নগরের দুই নম্বর বাবুরাইল এলাকার প্রবাসী ইসমাইল হোসেনের পাঁচতলা বাড়ির নিচতলার পূর্ব দিকের ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকত তাসলিমা ও তাঁর স্বামী শফিকুল ইসলামের পরিবার। শফিকুল ঢাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি চালান।
যে ফ্ল্যাটে ঘটেছে এই রোমহর্ষক ঘটনা, তার পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের একজন রহিমা খাতুন। তিনি বলেন, আগের রাত ১০টা পর্যন্ত তাঁরা তাসলিমাদের ফ্ল্যাটে মানুষের আসা-যাওয়ার শব্দ, কথাবার্তার শব্দ শুনেছেন। তবে কোনো চিৎকার কিংবা চেঁচামেচির শব্দ পাওয়া যায়নি।
নিহত তাসলিমা ও মোরশেদুলের মা মোর্শেদা বেগম বলেন, তাঁর ছেলে মোরশেদুলের সঙ্গে ঢাকার একটি পক্ষের বিরোধ ছিল বলে জানতেন। তবে কী নিয়ে বিরোধ, তা তিনি জানেন না।
আর তাসলিমার খালাতো বোন নয়নতারার স্বামী মোহাম্মদ মিলন বলেন, সুদের টাকা নিয়ে নিহত মোরশেদুল ইসলামের সঙ্গে ঢাকার একটি পক্ষের বিরোধ ছিল। সে বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।
অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আলী ও জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) খন্দকার মহিদউদ্দিন বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে এই হত্যাকাণ্ড হতে পারে। কারণ, বাইরে থেকে ঘরের দরজা তালাবদ্ধ ছিল এবং হত্যাকাণ্ডের সময় প্রতিবেশী বা অন্য কেউ কোনো শব্দ পায়নি। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, হত্যাকারীরা পূর্ব পরিচিত।
শিরোনাম:
শনিবার , ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ , ২৩ ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।