নারায়ণপুর:
নৌ-মানচিত্রের দিক থেকে মেঘনা-ধনাগোদা নদীর পূর্ব প্রান্তের অনতিদূরে বোয়ালজুড়ি খালের পাড়ে এবং স্থল-মানচিত্রের দিক থেকে বাবুরহাট-মতলব-পেন্নাই-ঢাকা সড়কের কোল ঘেঁষে নারায়ণপুর ইউনিয়নের অবস্থান। এই ইউনিয়নটির অবস্থান মতলব দক্ষিণ উপজেলায় হলেও কচুয়া ও হাজীগঞ্জ উপজেলার সংলগ্ন এটি। যা এখন নারায়ণপুর পৌরসভা নাম ধারণ করেছে।
গত ২৭ মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পৌর শাখা-২ থেকে ফ্যাক্স বার্তায় মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে যখন নারায়ণপুর পৌরসভার প্রশাসক নিয়োগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন পৌঁছায় তখন তা এলাকায় জানাজানি হয়ে যায়। নারায়ণপুর এলাকায় পৌরসভার সংবাদটি পৌঁছলে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। কাউকে আবেগপ্রবণ হতে দেখা গেছে, আবার কেউ বিস্ময় প্রকাশ করেছে।
সাবেক ছাত্র নেতা আসিফ ইকবাল ডন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, নারায়ণপুর ইউনিয়নকে পৌরসভা ঘোষণা করায় বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে অভিনন্দন জানাই। পাশাপাশি তিনি বলেন, এই পৌরসভার পার্শ্ববর্তী দু’টি ইউনিয়নের কিছু অংশ নিয়ে গেজেট প্রকাশ করলে তা এলাকার জন্য খুবই কল্যাণকর হতো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, যেখানে ৮০ ভাগ লোক কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে, সেখানে পৌরসভার ঘোষণায় খুশির কিছুই নেই।
ডাটিকারা নিবাসী মাওঃ মোঃ মনির হোসেন ফয়েজী বলেন, কৃষি অধ্যুষিত নারায়ণপুর ইউনিয়ন পৌরসভা ঘোষণা হওয়ায় এলাকাবাসীর ভাগ্যের খুব পরিবর্তন হবে বলে আমি মনে করি না।
হরিদাস পাড়া গ্রামের কৃষক মোঃ আবিদ আলী মোল্লা বলেন, আমরা কৃষক মানুষ। গতর খেটে খাই। হতাশা নিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা উপজেলার শেষ সীমানায় বসবাস করি। পৌরসভা আমাগো কি দিব?
পদুয়া গ্রামের কৃষক দুলাল প্রধান বলেন, আমরা কৃষি কাজ করে জমিতে যা ফলাই তাই দিয়ে সংসার চালাইতে কষ্ট হয়। এর মধ্যে আবার পৌরসভা হলে মাসে মাসে খাজনা টাজনা দিমু কেমনে ?
নারায়ণপুর বাসস্ট্যান্ডের দোকানদার মোঃ খোকন হাওলাদার বলেন, কেবলমাত্র নারায়ণপুর ইউনিয়নকে পৌরসভা ঘোষণা করায় পৌরসভা হিসেবে এর গুরুত্ব কমে গেছে। খাদেরগাঁও ইউনিয়নের নারায়ণপুর, ঘিলাতলী ও নায়েরগাঁও দক্ষিণ ইউনিয়নের আধারা গ্রাম নিয়ে যদি পৌরসভা ঘোষণা করা হতো তাহলে এটি হতো একটি মডেল পৌরসভা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক ব্যক্তি বলেন, নারায়ণপুর বাজারকে জিরো পয়েন্টে রেখে যদি আশপাশের এলাকা নিয়ে পৌরসভা ঘোষণা করা হতো তাহলে এটি হতো একটি আদর্শ পৌরসভা। ব্যক্তি ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে একটি মহল এ গরিব এলাকাকে পৌরসভা ঘোষণা করে, যার ৮০ ভাগ লোক শ্রম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে।
নারায়ণপুর বাজার ঔষধ ব্যবসায়ী ও চিকিৎসক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মোঃ বাকী বিল্লাহ বলেন, পৌরসভা ঘোষণা হওয়ায় বাজারের ব্যবসায়ীদের জন্য সিসি লোনসহ ব্যাংক সাপোর্ট পাওয়া সহজ হবে। কিন্তু সীমিত এলাকার জনগণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এ বাজারের ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স, ড্রাগ লাইসেন্স, ড্রিলিং লাইসেন্স ফিসহ বিভিন্ন সরকারি ট্যাক্স আগের তুলনায় দ্বিগুণের চেয়ে বেশি হবে বলে আমার ধারণা। যা ব্যবসায়ীদের জন্য অতিরিক্ত চাপ হবে। নারায়ণপুর বাজার বণিক ও জনকল্যাণ সমিতির সভাপতি সফিকুল ইসলাম স্বপন মজুমদার পৌরসভা সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পৌরসভা প্রসঙ্গে নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল মোস্তফা তালুকদার জানান, নারায়ণপুর ইউনিয়নের মতো একটি গরিব এলাকা পৌরসভার জন্য যোগ্য নয়। পৌরসভা ঘোষণার গেজেট সম্পর্কে তিনি বলেন, ২০১০ সালের ১৩ অক্টোবর মহামান্য হাইকোর্টে পৌরসভা ঘোষণার প্রজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে করা রিটের কার্যক্রম বর্তমানে চলমান।
প্রায় ৬০ হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত বর্তমান নারায়ণপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা এখনো বিদ্যুৎবিহীন রয়ে গেছে। রাস্তা-ঘাটসহ নানা উন্নয়ন অবকাঠামোর অভাব আছে ইউনিয়নটির প্রত্যন্ত এলাকায়। পৌরসভা যেমন এ এলাকার উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে ঠিক তেমনি দুর্ভোগ পোহাতে হবে এর মধ্যে বসবাসকারী দরিদ্র জনগোষ্ঠির। তবে ভৌগোলিক সীমারেখা পরিবর্তন করে পৌরসভাটি ঘোষিত হলে পৌরসভার কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জিত হবে বলে বিশিষ্টজনরা মনে করেন।