মহিলা ও শিশু বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান রেবেকা মোমেনা বলেছেন, নারীর অশালীন চলাফেরা ও পারিবারিক শৃঙ্খলা না থাকার কারণে দেশে ধর্ষণ এবং নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ আয়োজিত ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আমাদের অর্জন ও ব্যর্থতা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
রেবেকা মোমেনা বলেন, পুরুষরা আক্রমণ করবে এটা তার স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য কিন্তু নারী যদি শ্রদ্ধাবোধ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন না করতে পারে তবে দেশে নারী নির্যাতন বাড়বেই, কমবে না।
এ সময় তিনি আরো বলেন, আমি পুরুষের কোন দোষ দেখি না। এখনকার মেয়েদের মাঝে শালীনতাবোধের অভাব লক্ষ্য করে মন কাঁদে। তারা অশালীনভাবে চলাফেরা করলে পুরুষ আক্রমণ করবে।
এই নারী নেত্রী আরো বলেন, আমরা স্বামীর সংসারে মানিয়ে চলতে শিখেছি। এখনকার মেয়েদের মাঝে তা দেখতে পাচ্ছি না।
স্বামীর সংসারে মানিয়ে না নেয়ার কারণে বেশি মাত্রায় বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, নারী নির্যাতন বন্ধে পুরুষের নীতি-নৈতিকতার পরিবর্তন করতে হবে। নারীকে মর্যাদা দেয়ার মানসিকতার ভেতর থেকে আসতে হবে।
সভা-সেমিনারে নারীর মর্যাদার কথা বলবেন অথচ ঘরে বসে অবজ্ঞা করবেন এতে করে নারী নীতির কোন উন্নয়ন হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, নারীর প্রতি উদার হন। আপনার মা নারী।
নারীদের উদ্দেশ্যে রেবেকা মোমেনা বলেন, আমি আপনাদের মানুষ। আমার কথায় নারীরা রাগ করবেন না। তবে আপনাদের আরো সহনশীল ও সচেতন হতে হবে। তাহলেই নারী নির্যাতনের মাত্রা কমবে।
সভায় ইউএন উইমেন-এর জরিপ উল্লেখ করে অন্যান্য বক্তারা বলেন, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার কারণে দেশের মোট আয়ের এক হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা ক্ষতি হয়। যা জিডিপির ২ দশমিক ১২ শতাংশ। বিগত পাঁচ বছরে ৯৩ হাজার ৬৮৬টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। শুধু নারী নয় শিশু নির্যাতন, ধর্ষণের ঘটনাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে।
তারা বলেন, ধর্ষণের ঘটনার প্রতিকার চেয়ে যেসব মামলা করা হয় দীর্ঘসূত্রিতার কারণে তার বেশির ভাগ মামলাই শেষ পর্যন্ত টিকে না। পুলিশ টাকা ছাড়া কাজ করতে চায় না। ফলে নারীরা আজ হুমকির মুখে। এমন পরিস্থিতিতে নারীকে অর্থনৈতিক কাজে যুক্ত করার কথা বললেও আমরা পরিবেশ নিশ্চিত করছি না।
সেমিনারে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য দেন জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি, ইউএন উইমেন কর্মসূচি সমন্বয়কারী মাহতাবুল হামিক প্রমুখ।
এসময় বক্তারা এসকল ক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগ, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, মনিটরিং বৃদ্ধি, প্রতিরোধ এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের ক্ষেত্রে ঝুঁকিসঙ্কুল বাস্তবতা থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজে বের করার আহ্বান জানান।