শহরিয়ার খাঁন কৌশিক ॥ চাঁদপুরের সমাজিক ও পারিবারিক অপরাধ এবং মাদক নিরসনকল্পে পুলিশ প্রশাসন প্রসংশনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কমিউনিটি পুলিশিং, জনপ্রতিনিধি ও এলাকাভিত্তিক গণ্যমান্য ব্যাক্তি বর্গের সাথে সমন্বয় করে নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ওয়ার্ড ভিত্তিক কাউন্সিলিং এই প্রথম চাঁদপুরে শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল ১১টায় পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশ্রাফুজ্জামানের নেতৃত্বে জেলা পুলিশ প্রশাসনের একটি টিম পুরানবাজার মধ্য শ্রীরামদী বউ বাজার এলাকা সফর করেন। পুলিশ সুপার এসময় মধ্য শ্রীরামদী মেয়র রোড, বৌ-বাজার এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ পরিবার গুলোর স্বামী-স্ত্রী, স্কুল পড়–য়া মেয়ে, বৃদ্ধ বাবা-মা ও শিশুদের সাথে কথা বলেন এবং তাদের সমস্যাগুলোর কথা শুনেন।
উপস্থিত সাংবাদিক ও এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার এই কাউন্সিলিং সম্পর্কে বলেন, পুলিশ একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। পুলিশের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন হয়েছে। সামাজিক কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার মানুষের সমস্যাগুলোর কথা শুনছি। পরিবারের কোন ছেলে মাদকাসক্ত, পারিবারিক অশান্তি আছে কিনা, মেয়েরা স্কুলে আসা যাওয়ার পথে ইভটিজিং, সৎ মায়ের দ্বারা কোন এতিম সন্তান অবহেলার শিকার হচ্ছে কিনা এবং বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে তাদের ছেলেরা ঠিকমত দেখছে কিনা, কোন স্ত্রী স্বামী দ্বারা অত্যাচারিত হচ্ছে কিনা তা জানার জন্য তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। কারন অনেক পরিবারের মা বৌ- ঘর থেকে বের হয়ে এসব বিষয়ে কাউকে কিছু বলতে পারছে না বা পুলিশের কাছে নালিশ জানাতে গেলে তার অত্যাচারের মাত্রা আরো বেড়ে যাবে সে জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে আলাদা ভাবে পুলিশ সদস্যরা কথা বলছে। এসব বিষয়গুলোর খোজ খবর নেয়া পারিবারিক সুখ-শান্তিতে কোন বিঘœ ঘটলো কিনা আমরা যদি এই রকম ভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারি, স্বাভাবিক ভাবে পুলিশের বিচরনের মাত্রা বেড়ে যাবে এবং পারিবারিকভাবে অপরাধের মাত্রাও কমে আসবে। এছাড়া পুরানবাজারে মাদকের কারনে যুবসমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই মাদক নিমূল করার লক্ষে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। আর মাদক ব্যাবসায়িদের আটক করে এলাকা মাদক মূক্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি দেখে সে সকল অপরাধিদের মাঝে ভয় কাজ করবে।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিকারের জন্য চাঁদপুর পুলিশ প্রশাসন আলাদা পুলিশ অফিসার নিয়োগ করে সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা শুনছে। দূর দুরান্ত থেকে সাধারণ মানুষের আসা-যাওয়া অনেক কষ্ট আবার নিজের স্বামীর বিরুদ্ধে এসে কথা বলাটাও বেশি কঠিন সেই জন্য আমরা ঘরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করছি।
এই কার্যক্রম এখান থেকে শুরু পুরো চাঁদপুরের ওয়ার্ড ভিত্তিক করা হবে। এই কর্মকান্ডের সাথে পুলিশ প্রশাসন ও কমিনিউটি পুলিশের প্রতিনিধি থাকবে। সাথে সাথে অঞ্চল ভিত্তিক বা পৌর এলাকার কাউন্সিলর ও ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ সদস্য নিয়ে টিম করা হবে। সবাই মিলে ৫ জনের একটি গ্র“ফ বাড়ি বাড়ি গিয়ে জিজ্ঞাসা করবে তাদের সংসারে কোন অশান্তি আছে কিনা পুলিশ কে জানানো প্রয়োজন। ঘরে বসে তারা সমস্যা খুজে নিতে পারে সেই কাজটি করা হলে কোন ধরনের অপরাধের পরিকল্পনা পরিবারিকভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। তারা সর্তক হবে এবং পরিবারে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। সমাজে একটি গতিশীলতা আসবে। এসময় তাদের সাথে ছিলেন, চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি সহ-সভাপতি ও কমিউনিটি পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চল-২ এর সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ, চাঁদপুর জেলার কমিউনিটি পুলিশিং সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুফী খায়রুল আলম খোকন, চাঁদপুর পৌর কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি আলহাজ্ব শেখ মনির হোসেন বাবুল, সাধারণ সম্পাদক সাইদুল হক মোর্শেদ। আরো উপস্থিত ছিলেন, পুরানবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই জাহাঙ্গীর হোসেন, এসআই প্রতিভা রানী সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স । এলাকারবাসীর পক্ষে ছিলেন শাহজাহান মাতাব্বর, তাছির বেপারী, মনোয়ারা মনু সহ আরো অনেকে।
ছবি ক্যাপশনঃ- পুরানবাজার মধ্য শ্রীরামদী বৌ-বাজার এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই ভাবেই নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার মানুষের সমস্যার কথা শুনছেন পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার।
চাঁদপুর নিউজ সংবাদ
