প্রতিনিধি
চাঁদপুরের বিশিষ্ট ডেকোরেটর ব্যবসায়ী মা ডেকোরেটরের কর্ণধার স্বপন সাহা এখনো রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ রয়েছেন। গত ১১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার তিনি চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ নেই। তার খোঁজ না পেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে তার ভাই মধু সাহা চাঁদপুর মডেল থানায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর জিডি করেন। জিডি নং-৭৫১। নিখোঁজ হওয়ার পর ৩৯ দিন পার হয়ে গেলেও তার কোনো হদিস মিলেনি। তবে তার এ নিখোঁজের ব্যাপারে পরিবারের সদস্যদের তেমন চিন্তিত মনে হচ্ছে না। এজন্যে স্বপন সাহা ‘রহস্যজনক নিখোঁজ’ বলছেন অনেকে। পাওনাদাররা বলছেন, স্বপন সাহা কি তাহলে গা ঢাকা দিলেন?
চাঁদপুর শহরে গত ১৩ সেপ্টেম্বর স্বপন সাহা উধাও হয়েছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে ব্যক্তিগত পাওনাদার ও সমিতির পাওনাদারদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ব্যবসা পরিচালনার জন্যে শহরের বিভিন্ন মাল্টিপারপাস ও সমিতি থেকে প্রচুর টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। আর ঋণ দেয়া সেই পাওনাদাররাই এখন চিন্তায় রয়েছেন। তিনি কি ফিরে আসবেন, তাদের টাকা কি ফিরে পাবেন-এই চিন্তায় চিন্তায় তারা অপেক্ষার প্রহর গুণছেন। জানা গেছে, বিভিন্ন মাল্টিপারপাস ও ব্যক্তি বিশেষের কাছ থেকে সব মিলিয়ে স্বপন সাহা কোটি টাকার মতো ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণের বোঝা থেকে বাঁচার জন্যেই হয়তো তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। তিনি শহরের গুয়াখোলায় যে বাসায় বসবাস করতেন সেই বাসায় তার স্ত্রী, ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী রয়েছেন। তার ১ ছেলে প্রলয় সাহা ও ১ মেয়ে ঝুমুর সাহা কলকাতায় বসবাস করছেন। তার একমাত্র মেয়ের জামাই ঢাকায় ব্যবসা করেন। পাওনাদারদের ধারণা, তিনি কলকাতায় ছেলে ও মেয়ের কাছে রয়েছেন।
স্বপন সাহার পাওনাদার রূপসী চাঁদপুর বহুমুখী সমবায় সমিতির সেক্রেটারী আঃ মালেক খানের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক কমিশনার ফণী ভূষণের পথ হয়তো ধরেছেন আরেক সাবেক কমিশনার ও ডেকোরেটর ব্যবসায়ী স্বপন সাহা। বহু বছর আগে মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যান পুরাণবাজার এলাকার ব্যবসায়ী সাবেক পৌর কমিশনার ফণী ভূষণ সাহা। তার পথ ধরেই হয়তো কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মগোপনে চলে গেলেন স্বপন বাবু। চাঁদপুর শহরে তার ব্যাপক পরিচিতি। তার মতো লোক যদি টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় তাহলে মানুষ কাকে বিশ্বাস করবে? তিনি উধাও হওয়ার পর তার মেয়ের জামাই আমাকে ফোন করেছিলেন, তার কললিস্টে নাকি আমার নাম পাওয়া গেছে। আমি তখন তাকে প্রশ্ন করি, কললিস্টে নাম পেলেন, তিনি তখন কোথায় ছিলেন সেটা জানেননি? এ কথা বলার পরই কোনো উত্তর না দিয়ে ফোন রেখে দেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের পাওনা টাকার মেয়াদ সময় শেষ হলেই আমরা তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবো।
সততা মাল্টিপারপাসের কর্মকর্তা মোঃ আবুল কাশেমের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, আমরা চাচ্ছি আপোষের মাধ্যমে তাদের লোকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে নেয়া। তার ঘনিষ্ঠজন ও শুভাকাক্সক্ষীরা আমাদের সাথে আলাপ আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন। আমরা চাচ্ছি তার ব্যবসাটা অব্যাহত থাকুক। মা ডেকোরেটরের ম্যানেজার স্বদেশ ভঞ্জ আমাদেরকে বলেছেন, ব্যবসা রানিং থাকলে আপনাদের টাকা আপনারা পাবেন।
মা ডেকোরেটরের কর্মকর্তা ও ম্যানেজার স্বদেশ ভঞ্জের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, লোকটা তো মারা যায়নি। আমি তো তার চাকুরি করছি। দোকানের ব্যবসা পরিচালনার জন্যে তিনি আমাকে চাবি দিয়ে গেছেন। তিনি যেদিন আসবেন ওইদিনই দেনাদারদের পাওনা পরিশোধ করা হবে। আমি বর্তমানে কর্মচারীদের নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। তিনি আসার পর আমি চাবি বুঝিয়ে দেবো।
গতকাল বিকেলে গুয়াখোলায় তার বাসায় তার ভাই মধু সাহার সাথে আলাপকালে তিনি জানান, তারাও ঠিকমতো জানেন না কোথায় আছেন। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ অব্যাহত রেখেছেন। পাওনাদারদের টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাল্টিপারপাস কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ চলছে, তাদেরকে আস্তে আস্তে টাকা দেবো।
নিখোঁজের তদন্তের ব্যাপারে চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আঃ কাইয়ুমের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, তার খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। তবে তিনি দেশে নেই।
চাঁদপুর হকার্স মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী ও পাওনাদাররা মনে করছেন তার মেয়ের জামাইকে চাপ প্রয়োগ করলেই তার শ্বশুর কোথায় আছে সে খবর জানা যাবে। আর তাতে করে চাঁদপুরের পাওনাদারদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে।