ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি: ফরিদগঞ্জ উপজেলার লাউতলিতে মেয়ের জামাতা নির্মমভাবে কুপিয়ে শ্বশুরকে খুন করেছে| একই সাথে শাশুড়িকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে| পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে ১জনকে আটক করেছে| ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৮টার দিকে|
ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৬নং গুপ্টি ইউনিয়নের লাউতলির মান্দারতলি গ্রামের শেখ বাড়ির মৃত নূরুল ইসলাম শেখের ছেলে সিরাজ শেখ ওরফে টুকু মিয়া (৬০)কে তারই মেয়ের জামাতা আরিফ শেখ দলবল নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে| আর আহত করা করে শাশুড়ি হনুফা বেগমকে|
দেড় বছর পূর্বে সিরাজ শেখের মেয়ে নূরুন নাহার (১৬)কে তারই আপন জেঠাতো ভাই আজিজ শেখের ছেলে আরিফ শেখ (২৩) প্রেমের পরিণতিতে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে| এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিরাজ শেখ তার বড় ভাই আজিজ শেখ ও তার ছেলে আরিফ শেখকে আসামী করে চাঁদপুর আদালতে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন| ওই মামলায় আরিফ শেখ ও তার পিতা আজিজ শেখ ১ মাস জেল খাটে| নুরুননাহারের অভিভাবক এ বিয়ে কোনো মতেই মেনে নেয়নি| এই মামলাকে কেন্দ্র করেই দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিলো| আরিফ শেখ নুরুননাহারের মাধ্যমে তার পরিবারের কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করে| এই টাকা না দেয়ায় আরিফের পরিবার সিরাজ শেখের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে| এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় আরিফ ও তার পরিবারের লোকদের অভিযুক্ত করে সিরাজ শেখ চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করে| ওই মামলায়ও তারা বাপ-ছেলে জেল খেটেছে| জেল থেকে বেরিয়ে এসে আরিফ তার শাশুড়ি হনুফা বেগমকে পিটিয়ে আহত করে| ওই ঘটনায়ও আরিফের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা দায়ের করে সিরাজ শেখ| এরপর গত ১৫-১৬ দিন পূর্বে আরিফ তার শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে পুনরায় ৪ লাখ টাকা দাবি করে| ওই টাকা না দেয়ায় আরিফ ও তার পরিবার সিরাজ শেখের উপর আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং বিভিন্নভাবে হত্যার হুমকি-ধমকি দেয়| এতে হনুফা বেগম বাদী হয়ে ১০-১২জনকে আসামী করে আরো একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন| ৪টি মামলাই বর্তমানে চলমান অবস্থায় রয়েছে|
হনুফা বেগম আরো জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি ও তার স্বামী সিরাজ শেখ তাদের ছোট ছেলে বাদশা শেখ (৬)কে ডাক্তার দেখানোর জন্যে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান| সেখান থেকে চিকিৎসা শেষে রিক্সা যোগে বাড়ি ফেরার সময় বাড়ির কাছাকাছি আসলেই ওঁৎ পেতে থাকা আরিফ শেখ ও তার সহযোগী সাকির, আজিজ, সায়ক, রানা, বাসু মেম্বার, টেলু, রাজু, বাচ্চু, তোফাজ্জল ও জীবনী মেম্বারসহ অজ্ঞাত আরো ৮-১০ জন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়| এ সময় দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাদের দু’জনকেই কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে| হামলার সময় হনুফার ডাক-চিৎকারে আশপাশের বাড়ির লোকজন ছুটে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়| পরে গুরুতর আহত সিরাজ শেখ ও তার স্ত্রী হনুফাকে উদ্ধার করে প্রথমে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়| প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাতেই তাদেরকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির জন্য নিয়ে আসা হয়| পথিমধ্যেই সিরাজ শেখ মারা যান| হনুফা বেগমকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে| তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক|
গুরুতর আহত হনুফা বেগম আরো জানান, তাদের বড় মেয়ে নুরুন্নাহার প্রেমের মাধ্যমে আরিফের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে| এই ব্যাপারেই অপহরণ মামলা করলে সেই থেকে আরিফ ও তার পরিবারের লোকজন আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে এই হামলা চালিয়ে আমার স্বামীকে খুন করে| তিনি আরো জানান, আরিফ ছাড়াও আরও অজ্ঞাত ব্যক্তিরা মিলে আমার ও আমার স্বামীর উপর এই হামলা চালায়| দুঃখজনক বিষয় হলো, যে মেয়ের জন্য এই খুনের ঘটনা ঘটেছে সেই মেয়ে নুরুন্নাহার তার মৃত বাবা ও আহত মাকে হাসপাতালে দেখতে আসেনি| ঘটনার পর থেকেই ঘাতক আরিফ শেখ তার পিতা আজিজ শেখসহ অন্যরা পলাতক রয়েছে| একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ বাসু মেম্বারকে আটক করেছে| সিরাজ হত্যার ঘটনায় ফরিদগঞ্জ থানায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলার প্রস্তুতি চলছিলো| গতকাল সকালে এএসপি হেড কোয়ার্টার শচীন চাকমা হাসপাতালে আহত হনুফা বেগমের খোঁজ-খবর নেন|