প্রতিনিধি ==
চাঁদপুর শহরের আল-আমিন মডেল মাদ্রাসার ছাত্র ২০১৩ শিক্ষা বর্ষের জেডিসি ফলপ্রার্থী মনোয়ার জাওয়াত সিয়াম (১৩) পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। সিয়াম চাঁদপুর শহরের ট্রাক রোডস্থ মোস্তান বাড়ির অধিবাসী। মোঃ মজিবুর রহমান মোস্তান ও ফারজানা বেগমের ২য় পুত্র সে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে অবরোধের সমর্থনে ১৮ দলীয় জোট নেতৃবৃন্দ বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সম্মুখ স্থানে আসলে হঠাৎ মিছিলকারীদের উপর পুলিশের গুলি বর্ষণ হয়। এতে মিছিলে থাকা সিয়াম গুলিবিদ্ধ হলে সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
এদিকে সিয়ামের মৃত্যুর খবর তার এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে চলতে থাকে শোকের মাতম। তার বাবা, মা ও ভাইদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। সিয়ামরা ৪ ভাই। সিয়াম ছিলো দ্বিতীয়। বড় ভাই মাহফুজুর রহমান ইমন (১৫) নবম শ্রেণীর ছাত্র ও তৃতীয় ভাই নাজমুস সাকিব (৯) তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। আর ছোট ভাই আঃ মাহাইমিন ৮ মাস বয়সের। তারা ৩ ভাই আল-আমিন মডেল মাদ্রাসার ছাত্র।
ঘটনার দিন সিয়াম ভোরে ঘুম থেকে উঠে মসজিদে গিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করে। মসজিদ থেকে এসে তার মাকে বলে, আমি সবজি দিয়ে রুটি খাবো না। আমি ডিম দিয়ে রুটি খাবো। এ কথা বলে সিয়াম ঘর থেকে বের হয়ে যায়। সিয়ামের ক�জন বন্ধু সাংবাদিকদের জানান, আমরা ক্রিকেট খেলছিলাম। এক বড় ভাই এসে বলে, মিছিলে যাবি? ১০০ টাকা করে পাবি। সিয়াম চলে গেলেও আমরা যাইনি। সিয়াম কোনো রাজনৈতিক দল করে কিনা তা জানতে চাইলে তার বন্ধুরা বলে, আমরা জানি না। তবে চাঁদপুর শহর জামায়াতের আমীর অ্যাডঃ শাহজাহান মিয়া চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, সিয়াম নিশ্চিতভাবে ছাত্র শিবিরের কর্মী ছিলো।
সিয়ামের মা ছেলের শোকে পাগল প্রায়। বুকফাটা কান্নায় তিনি বলেন, আমার ছেলে নামাজ পড়ে এসে আমাকে বলল, আমাকে ডিম দিয়া নাস্তা দেন, না দিলে খামু না। আমার ছেলের লুঙ্গি আমি ধুইয়া রাখছি। আমারে আর কে বলবো, মা নামাজ পড়তে উঠেন। আমার এ অবুঝ ছেলেরে পুলিশ কেন গুলি করে মারলো। ওদিকে সিয়ামের বাবা মজিবুর রহমান ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সিয়াম কোনো রাজনৈতিক দল করে কিনা জানতে চাইলে তার বড় ভাই ইমন সাংবাদিকদের জানায়, সে ছোট। তার রাজনীতি করার বয়সতো এখনো হয়নি।
আল-আমিন মডেল মাদ্রাসার শিক্ষকরা এ খবর শুনে সিয়ামদের বাড়িতে গিয়ে তার বাবাকে সান্ত্বনা দেন।