চাঁদপুর নিউজ রিপোর্ট
চাঁদপুর শহরে এখন যানবাহনের মধ্যে সম্ভবত সিএনজি স্কুটারের সংখ্যাই বেশি। রিক্সার চেয়েও এ যানবাহনটির সংখ্যা বোধ হয় এখন বেশি হবে। তবে বৈধ যা আছে তার সমপরিমাণ হবে অবৈধ। প্রায় প্রতিদিনই ২/১টি সিএনজি স্কুটার রাস্তায় নামছে। অথচ এগুলোর কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এই মোটরযানটির সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে, শহরবাসীর জীবনকে অসহনীয় করে তুলছে। অপরিপক্ক ও আনাড়ি ড্রাইভার, বেপরোয়াভাবে নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ি চালানো, যত্রতত্র পার্কিং ও যাত্রী উঠানো-নামানো এসব মিলিয়ে কোনো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই এই মোটর যানটি। এর নিয়ন্ত্রক যেনো কেউ নেই। আর যে সংস্থাটি এর দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে সেই বিআরটিএ�র বিরুদ্ধেই রয়েছে যতসব অনিয়মের অভিযোগ। চাঁদপুর বিআরটিএ অফিসকে ম্যানেজ করেই এসব হচ্ছে। আর মাঝে মধ্যে নামে মাত্র কিছু অভিযান চালানো হলেও খুবই সামান্য কিছু গাড়ি আটক করে জরিমানা করে সেগুলো ছেড়ে দেয়া হয়। সিএনজি স্কুটারের এই উপদ্রব শুধু চাঁদপুর শহরেই নয়, উপজেলা শহরসহ গ্রামগঞ্জেও রয়েছে।
সিএনজি চালিত তিন চাকার ছোট্ট মোটর যানটি এখন লোকাল-দূরপাল্লা সব ক্ষেত্রেই চলাচল করে। স্কুটার নামে এই মোটর যানটির বৈধ সংখ্যা চাঁদপুর জেলায় রয়েছে ৫ হাজার ৩শ�। এই সংখ্যা কয়েক বছর আগের, যা এখনো রয়েছে। কাগজপত্রে বৈধ গাড়ির সংখ্যা বাড়েও না কমেও না। অথচ রাস্তায় চলছে এর দ্বিগুণ সংখ্যক গাড়ি। গাড়ির শো-রুম থেকে নতুন গাড়ি বিক্রি বন্ধ নেই। গাড়ি বিক্রি হচ্ছে, সে গাড়ি রাস্তায় নামছে। এর সংখ্যা দিন দিনই বাড়ছে। অথচ সরকারি খাতায় রেজিস্ট্রেশনকৃত গাড়ির সংখ্যা কয়েক বছর আগে যে ৫ হাজার ৩শ� ছিলো এখনো সে সংখ্যাই বিদ্যমান। প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে রেজিস্ট্রেশন বিহীন এসব গাড়ি রাস্তায় চলছে কীভাবে। এখন রাস্তায় অনেক নম্বরবিহীন সিএনজি স্কুটার চলাচল করতে দেখা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুরে যে ক�টি সিএনজি স্কুটার বিক্রয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলো থেকে বর্তমানে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকায় একটি গাড়ি বিক্রি হচ্ছে। গাড়ির সাথে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্রসহ সবকিছুই ওই টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। অর্থাৎ ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকায় গাড়ি কিনেই রাস্তায় নেমে যেতে পারে গাড়ি নিয়ে। আরো জানা যায়, শুধু গাড়ির দাম ৪ লাখ ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। আর বাদ বাকি টাকা নেয়া হয় রেজিস্ট্রেশন বাবদ। এই রেজিস্ট্রেশনের কাজটি গাড়ির শো-রুমের মালিকরাই করে থাকেন। আর এটি করা হয় চাঁদপুর বিআরটিএ অফিসের মাধ্যমেই। আরো জানা গেছে, গাড়ির শো-রুমের মালিকরা গাড়ির নম্বরসহ রেজিস্ট্রেশন অগ্রিম করিয়ে রাখেন। এই সম্পূর্ণ প্রস্তুত গাড়ি তারা শো-রুম থেকে বিক্রি করেন। এই রেজিস্ট্রেশনের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি�র চেয়ে অনেক গুণ বেশি টাকা দিতে হয়। এই টাকা বিআরটিএ অফিসসহ প্রশাসনের আরো বিভিন্ন সেক্টরে দিতে হয়। জেলা প্রশাসকের এলআর ফান্ডের নামেও একটি নির্ধারিত হার বিআরটিএ অফিসে রেখে দেয়। একটি গাড়ি কেনার পর রেজিস্ট্রেশনের জন্যই ২০/২৫ হাজার টাকার মতো ব্যয় হয়। আবার গাড়ি রাস্তায় নামার পর পুলিশ প্রশাসনকে প্রতি মাসে প্রতি গাড়ি বাবদ বাধ্যতামূলক ২শ� থেকে ৩শ� টাকা করে দিতে হয়। এ টাকা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর ও ট্রাফিক সার্জেন্টের মাধ্যমে আদায় হয়। গাড়ি বৈধ হোক আর অবৈধ হোক টাকা দিতেই হবে। এ টাকাকে সিএনজি স্কুটার ড্রাইভারদের ভাষায় �মান্থলি� বলা হয়। সিএনজি স্কুটার মালিক, চালকদের সাথে আলাপ করে এসব তথ্য জানার পর এটাই বুঝা গেলো যে, সবকিছু ম্যানেজ করেই রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ি রাস্তায় বীরদর্পে চলছে।
এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁদপুর বিআরটিএ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকের কাছে যাওয়া হয়। তার রুমে ঢুকতে গেলে প্রথমে একজন স্টাফ বাধা দিয়ে বলেন স্যার ভেতরে এক লোকের সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছেন, এখন যাওয়া যাবে না। সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পরও ভেতরে ঢোকা গেলো না। সহকারী পরিচালকের রুমের দরজা লাগানো। কিছুক্ষণ পর এক লোক ভেতর থেকে বের হন। তখন ওই স্টাফ ভেতরে ঢুকে দু�জন সাংবাদিক দেখা করার জন্য আসছে বলে সহকারী পরিচালক ফারহানুল ইসলামকে জানায়। সে ভেতর থেকে এসে বলে, স্যার গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত, বলছেন এখন সময় দিতে পারবেন না। আপনাদেরকে চলে যেতে বলেছেন। তারপরও যখন সাংবাদিকরা তার সাথে কথা বলার জন্য অনড় ছিলেন তখন তিনি তার চেয়ার থেকে উঠে দরজায় এসে দাঁড়িয়ে থেকেই বলেন, কী কথা? এরপর তার অনেকটা অনীহা সত্ত্বেও রুমের ভেতরে ঢুকে তার সাথে কথা হয়। প্রথমে তিনি সিএনজি স্কুটারের ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে রাজি হন নি। এ বিষয়ে ডিসি স্যার ও এডিএম স্যার বলতে পারবেন বলে তিনি জানান। তারপর তিনি জানান, বর্তমানে ৫ হাজার ৩শ� সিএনজি স্কুটারের রেজিস্ট্রেশন আছে। তাহলে রেজিস্ট্রেশন বিহীন গাড়ি কিভাবে রাস্তায় চলছে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়টি ডিসি স্যার ও এডিএম স্যার বলতে পারবেন। তাছাড়া এখন অভিযান চলছে। এদিকে বিআরটিএ অফিসে সব সময় সিএনজি স্কুটার শো-রুমের মালিক, শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ও এক শ্রেণীর দালালের আনাগোনা থাকে। তাদের সাথে ঠিকই সহকারী পরিচালক পর্যাপ্ত সময় দেন।