মিজানুর রহমান রানা/এম এ আকিব
মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তম উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা গত ৬ অক্টোবর সোমবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাবা-মা, ভাই-বোনসহ পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদ করতে মানুষ বাড়ি-ঘরে ছুটে এসেছে। মানুষ জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রিয়জনদের ছেড়ে দূর-দূরান্তে কর্মস্থলে ফিরছে শুরু করেছে। আর কিছু অসাধু লোক সে সুযোগে যাত্রীদের হয়রানির কাজে লিপ্ত থাকে।
তেমনি সরজমিনে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায়, গত শুক্রবার থেকেই যাত্রীরা ঈদের ছুটি কাটিয়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিড়তে শুরু করে। কর্মস্থলে যাবার জন্য চাঁদপুর মাদ্রাসা ঘাটস্থ বিকল্প লঞ্চঘাটে যাত্রীরা ভিড় জমায়। এসময় যাত্রীরা অভিযোগ করে লঞ্চে দ্বিগুন ভাড়া আদায়, লঞ্চের সিডুইল বিপর্যয়, যাত্রী হয়রানি, চাঁদপুর রুটের লঞ্চ রেখে অন্যাস্থানের লঞ্চ চলাচল এবং যাত্রী নিয়ে টানা হেচড়াসহ বিভিন্ন সমস্য। আজও যাত্রীর ভিড় হবার আশংঙ্খা। ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষ শত কষ্ট ও দুর্ভোগ শিকার করে কর্মস্থলে ফিরার চেষ্টা।
নদী বন্দর কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন জানান, কর্মস্থলে ফিরা মানুষের ভিড় হওয়া লঞ্চ গুলো নিদিষ্ট সময়ের ১ থেকে দেড় ঘন্টা আগে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যাত্রী নিরাপদে ঢাকা যেতে পারে সেজন্য শুক্রবার ৪টি স্পেশাল লঞ্চ ও গতকাল শনিবার বেশ কয়েকটি স্পেশাল লঞ্চ দেওয়া হয়েছে। যাত্রীর চাহিদামতো আমরা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। চাঁদপুর রুটের লঞ্চ বিহীন অন্য রুটের লঞ্চ স্পেশাল হিসেবে দেওয়ার প্রসঙ্গে যাত্রীরা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন স্পেশাল লঞ্চ আমার ইচ্ছে মতো দেওয়া হবে। তাই দিয়েছি।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জয় কুমার মহোন্ত জানায়, লঞ্চের ছাদে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের দায়ে আবে-এ-জম জম-০ কে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নৌ পুলিশ এবং বিআইডাব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নিয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নিয়েছি। যাত্রীরা যাতে সমস্যায় না পড়ে সেজন্য একটির পর একটি লঞ্চ ঘাটে ভিড়িয়ে যাত্রীদের নিরাপদে পৌছানোর চেষ্টা করছি।
পুলিশ সার্বিক নিরাপত্তা দায়িত্ব পালন করে বলে নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির এএসপি রিভার রিপন কুমার মোদত জানায়, এবছর মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তম উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহত্তম উৎসব দুর্গোৎসোব এক সাথে হওয়ায় যাত্রীদের চাপ একটু বেশী। ঈদ ও পুজার ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরা মানুষদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশি টহল জোর দার রয়েছে।
লঞ্চ মালিক প্রতিনিধিরা জানান, চাঁদপুর রুটের লঞ্চ রেখে অভিযান-৫ নামে ঢাকা-শৌলা-মুলাদী রুটের লঞ্চ স্পেশাল দেওয়া হয়েছে। এত করে যাত্রীরা বিপাকে পড়ে। তারা আরো জানান চাঁদপুর রুটের লঞ্চ ঘাটে থাকা স্বর্তেও অন্যা রুটের কি কারণে নৌ বন্দর কর্মকর্তা দিয়েছে তা আমরা জানি না। এত করে লঞ্চ মালিক প্রতিনিধিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যাত্রীদের অভিযোগ মতে বাড়তি ভাড়া আদায় প্রসঙ্গে তারা বলেন ঈদ উপলক্ষে একটু বেশি ভাড়া নেওয়া হতে পারে।
এম ভি মিতালী লঞ্চের যাত্রী রায়পুরের যাত্রী আসলাম পাটওয়ারী জানায়, শুক্রবার ভিড় কম হবে ভেবে আমি শনিবারে ঢাকা যাবার জন্য ঘাটে আসি। এসে দেখি যাত্রীদের ভিড়। অনেক ধাক্কা ধাক্কি করে কোন রকমে লঞ্চে উঠি। লঞ্চের এক ষ্টাফকে জিজ্ঞাসা করলাম সিঙ্গেল কেবিন আছে কি না। জবাবে সে বললো আছে ১হাজার টাকা পড়বে। আমি বললাম সিঙ্গেল কেবিনতো ৪শ’ টাকা আপনি ৫শ’ টাকা নিতে পারেন। ষ্টাফ বলে ১হাজার টাকায় গেলে যাবেন না গেলে হাটা ধরেন।
শহরের স্টেডিয়াম রোড়ের আয়শা মেমোরিয়াল হাসপাতালের আলী ইমাম জানান, সোনার তরী-২ লঞ্চে উঠে কেবিনের টিকেট করেছি। পরে লঞ্চ ষ্টাফরা বলেন সোনার তরী যাবে না অভিযান-৫ লঞ্চ যাবে। আমাদের যাত্রীদের এভাবে হয়রানী করার অধিকার কাউর নেই। এভাবে আরো বেশ কিছু যাত্রীরা এক লঞ্চের টিকেট করে অন্য লঞ্চে যাবার হয়রানী স্বিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বেশ কিছু যাত্রীরা নৌ-বন্দর কর্মকর্তার প্রতি চড়াও হয়ে উঠে এবং তাকে চোরের গুষ্ঠি চোর বলে গাল মন্দ করে। যাত্রী সেবার নামে যাত্রী হয়রানী করছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে।
এভাবেই দুর্ভোগ স্বিকার করে যাত্রীরা কর্মস্থলে ফেরিছে হাজার হাজার মানুষ। এ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ থাকলেও প্রতিকার পাননি কর্মস্থলমুখো মানুষ। যাত্রীর চাপ বেশি থাকার সুযোগে বাড়তি ভাড়া আদায় করেছে লঞ্চগুলোতে। যাত্রীরা লঞ্চের ভেতর ও ছাদে যেখানেই জায়গা পেয়েছেন সেখানে উঠে বসেছেন। তবে যাত্রীদের অভিযোগ, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে লঞ্চগুলো অতিরিক্ত যাত্রী তুলছে। আগের তুলনায় বেশি ভাড়া আদায় করছে। পথে পথে এসব ভোগান্তির পরও কর্মস্থলে ফিরছে তারা। তাছাড়াও নৌ-বন্দর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ উঠে, তিনি তার ইচ্ছে মতো লঞ্চ পরিচালনা করছেন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশ থাকা স্বর্তেও এখনো ইচুলী ঘাটে লঞ্চ চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। ইচুলী লঞ্চ ঘাটটি চালু হলে রায়পুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফরিদগঞ্জ উপজেলার যাত্রীরা ইচুলী ঘাট দিয়ে চলাচল করতো। তাহলে শহরে কিছুটা যানজট কমে যেতো।
শিরোনাম:
মঙ্গলবার , ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ২৯ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।