অধ্যাপক দেলোয়ার আহমেদ: মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) ছিলো চাঁদপুর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শ্রদ্ধেয় কামরুজ্জামান চৌধুরীর মৃত্যু দিবস। নীরবেই কেটে গেলো দিনটি।
২০১৪ সালের এ দিনে বাধর্ক্যজনিত রোগে ভোগার পর তিনি না ফেরার দেশে চলে গেছেন। ওই দিন আমি পরীক্ষক হিসেবে গাজীপুরস্থ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ের উত্তর পত্র আনতে গিয়েছিলাম। কর্তৃপক্ষকে “আমার এক প্রিয় স্যারের জানাজায় এটেন্ড করবো’’ বলতেই আমাকে দ্রুত উত্তরপত্রগুলি হস্তান্তর করলেন। আমি তাঁর জানাজায় অংশ গ্রহন করার জন্য খুবই দ্রুত ও সংক্ষিপ্তভাবে মতলব সড়ক দিয়ে চাঁদপুর ফিরে আসি। বিকেলে চাঁদপুর সরকাারি কলেজ প্রাঙ্গনে তাঁর জানাজায় অংশ নেই। দাফন হলো পৌর গোরস্থানে মসজিদের ওয়াল ঘেষে।
আজ এ দিনে সত্যিই মানসপটে ভেসে উঠে তাঁর সাথে আমার অনেক কথা ও স্মৃতি। তিনি ছিলেন সৎ ও সাদা মনের মানুষ। নদীর পাড়ে অবস্থিত বিধায় তিনি, সকলের সহযোগিতায় গড়ে তুলেছিলেন বাংলো টাইপের প্রেসক্লাব। মাত্র ১৬৮ টাকা তহবিল নিয়ে কাজ শুরু করেন- যা আজ ধাপে ধাপে এক বিশাল অট্টালিকা। এর পেছনে রয়েছে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের প্রচন্ড উদ্যম ও আগ্রহ এবং বতর্মান সরকার ও জেলা পরিষদের প্রচুর আর্থিক সহায়তা ও অনুদান। ঠিক যেমন সদরঘাটের উত্তরে অবস্থিত জগা বাবু’র সেই ছোট্ট পাঠশালা। যা একসময় স্কুল, পরে কলেজ, এখন যে এটা বিশ্ববিদ্যালয় হবে তাও কি কেউ ভেবেছিলো!
ষাটের দশকে তিনি চাঁদপুর সরকারি কলেজের ক্রীড়া শিক্ষক ছিলেন। তাঁর হাতে গড়ে উঠেছিলো চাঁদপুরে এক সমৃদ্ধ ক্রীড়াঙ্গন। কি ভলিবল, কি বাস্কেটবল, দৌড়, জাম্প, ফুটবল, ক্রিকেট, সাঁতার। এসব ক্ষেত্রে অনেক কৃতি খেলোয়ারের জন্ম তাঁর হাত ধরেই। তখন, ষাটের দশকে চাঁদপুর কলেজ পুরো চট্টগ্রাম বিভাগে ক্রীড়াঙ্গনে একটা বিশেষ কৃতিত্বের স্থান দখল করেছিলো-যা সত্যিই ইর্ষণীয় । কলেজ ক্যাম্পাস খেলাধূলায় মুখরিত থাকতো প্রতিদিন বিকেল বেলায়।
পরবর্তীতে তিনি ক্রীড়া অফিসার হিসেবে যোগ দেন কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে। বোর্ডে কাজ করাকালীন তিনি চাঁদপুরের এমন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই যে তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেননি। তিনি আগেভাগে খবর দিতেন যে অমুক অফিসার তদন্তে আসতেছে, সতর্ক থেকো।
১৯৮১ সালে পুরানবাজার কলেজের একাডেমিক স্বীকৃতি পেতে তারঁ ভূমিকা ছিলো অনন্য। ১৯৮২ তে আমি এ কলেজে যোগদানের ৬ মাসের মাথায় শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক ইংরেজির পরীক্ষক নিযুক্ত হই। যা ছিলো মরহুম ওয়ালিউল্লাহ স্যারের ভাষায় “আনপ্রিসিডেনটেড’। বোর্ডে গেলে তাঁর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত বাদ যেতো না। মাঝে মাঝে তার ভগ্নিপতির বাসায় দুপুরের খাবার ও বিশ্রাম। সময়মতো পরীক্ষার ফলাফলের জন্য শিক্ষা বোর্ডের অনেক সংকটকালে তিনি আমাকে ও প্রফেসর রনজিত বণিককে অতিরিক্ত উত্তরপত্র (ইংরেজি) বিতরণ করতেন।
এভাবে বছরের পর বছর কতো যে উপকার করেছেন তারঁ হিসেবে কষা সহজ হবে না। আমিও তাঁর অবতর্মানে তাঁর যতো জরুরি সংবাদ তাঁর পক্ষে দ্য বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকায় টেলিগ্রাম করতাম। পরদিন এগুলো ছাপা হতো গুরুত্ব সহকারে। পরে তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে আমায় ছুটির দিনে “হেলো’’ বলতেন “ওয়ান মিনিটে’’। চলতো চা-সিংগারা, সন্দেশ ইত্যাদি গপ্পগুজারি।
আজ তাঁর মৃত্যু দিবসে তারঁ স্মৃতির প্রতি রইলো অগাধ ও বিনম্র শ্রদ্ধা। আল্লাহ তাঁকে মাফ করে জান্নাতি করুন। বাস স্ট্যান্ড গোর-এ-গরীবা জামে মসজিদে শুক্রবার ও অন্য সময়ে নামাজে দাঁড়ালে খানিক দক্ষিনেই (১০ ফুট দূরে) দৃষ্টি গেলেই দেখি তাঁর শেষ ঠিকানা “মাটির ঘর’। পাশেই তাঁর ছোট ছেলে ও আমাদের স্নেহের ছাত্র ইমরান। এর পশ্চিম পাশেই চাঁদপুর সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক হেলাল স্যারের ছেলে শহীদ হাসান টিপুর কবর। হেলাল স্যার একদিন বললো “টিপুর জানাযা’য় কামরুজ্জামান স্যার উপস্থিত ছিলো। আজ তার পাশেই কামরুজ্জামান সাহেব চির নিদ্রায়! আল্লাহর কী শান!
চাঁদপুরনিউজ/এমএমএ/