মিজানুর রহমান রানা, ॥
চাঁদপুর জেলার চরবাগাদী পাম্প হাউজ নেভিগেশন লক গেইটের মাধ্যমে নৌ পারাপারের জন্যে চলতি অর্থ বছরের ইজারাদার কর্তৃক সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কার্যাদেশে দেওয়া যে টোল আদায়ের নিয়ম রয়েছে তার চেয়েও বেশি টোল আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
একইভাবে ইজারাদার কর্তৃক খামখেয়ালীপনা ও যখন তখন নৌ-যান পারাপারের কারণে সরকার এ পাম্প হাউজ থেকে যে অর্থ এক বছরে আয় করে তা এক মাসের ব্যয়ের চেয়েও কম। যার ফলে এ পাম্প হাউজ ইজারা দিয়ে সরকারি রাজস্ব আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর যান্ত্রিক ও পওর বিভাগ কর্তৃক চলতি বছর চরবাগাদি পাম্প হাউজের নেভিগেশন লক গেইটের মাধ্যমে নৌ পারাপারের জন্য ইজারা দরপত্র বিজ্ঞপ্তি আহ্বান করে। যার মেয়াদকাল চলতি অর্থ বছরের জুন মাস থেকে শুরু আর শেষ হচ্ছে আগামী বছর মে মাস। কর্তৃপক্ষের ইজারা দরপত্র বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী চলতি অর্থ বছরে চরবাগাদী পাম্প হাউজে নৌ পারাপারের ইজারাদার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছে মোহাম্মদীয়া এন্টারপ্রাইজ প্রোপাইটর মোঃ গিয়াস উদ্দিন নান্নু মিয়াজী। এ বছর তিনি ১৩ লাখ ৫১ হাজার ৫শ টাকা সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে এ কাজটি পান। পাউবো চাঁদপুর যান্ত্রিক পওর বিভাগ কর্তৃক ঠিকাদারকে দেওয়া কার্যাদেশে উল্লেখ রয়েছে, এ পাম্প হাউজের গেইট দিয়ে নৌ পারাপারের জন্য ইঞ্জিনচালিত ট্রলার কর্তৃক ৩শ’ টাকা। যা তিনি সিআইপি বেড়ী বাধের ভিতরে ঢুকতে গিয়ে দিতে হবে। আবার বের হতে হলে একই পরিমাণ অর্থ তাকে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আপ এবং ডাউন অর্থাৎ আসা এবং যাওয়ায় ইজারাদার রশিদের মাধ্যমে ৬শ টাকা আদায় করতে পারবেন। কিন্তু এেেত্র বর্তমান ইজারাদার মেসার্স মোহাম্মদিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক মোঃ গিয়াস উদ্দিন নান্নু ৬শ টাকার স্থলে ৮শ টাকা আদায় করেন। ইঞ্জিনচালিত নৌকা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আসা ও যাওয়ার েেত্র ৩শ টাকার স্থলে ইজারাদার ৫শত টাকা ইঞ্জিনবিহীন নৌকা, আসা ও যাওয়ার েেত্র ২শ টাকার স্থলে ৩শত টাকা আদায় করে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয় রশিদ দিয়ে এই ইজারার টাকা আদায় করার নিয়ম থাকলেও বর্তমান ইজারাদার অনেক েেত্র রশিদ ব্যবহার করছেন না।
শুধু তাই নয়, সংশ্লিষ্ট অফিস কর্তৃক ইজাদারকে দেওয়া কার্যাদেশে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে শুধুমাত্র চরবাগাদী পাম্প হাউস নিভিগেশন লক গেইটের মাধ্যমে যে সকল নৌ যানগুলো পারাপার হবে ঐ সমস্ত নৌ যান থেকে ইজারাদার টাকা আদায় করবেন। কিন্তু তিনি ওই নিয়মকে তোয়াক্কা না করে এ পাম্প হাউজের কাছ থেকে প্রায় ১০ কি.মি. পশ্চিমে চাঁদপুর-রায়পুর সংযোগ সড়কের চাঁদপুর সেতু এবং পূর্বে ৮ কি. মি. দূরবর্তী সাহেববাজার এলাকা পর্যন্ত যে কোনো ইঞ্জিনচালিত ও ইঞ্জিনবিহীন সকল নৌযান থেকে অবৈধভাবে তার লালিত বাহিনী দ্বারা চাঁদা আদায় করে যাচ্ছে। শুধু চাঁদা আদায় করেই এ ইজারাদার ্যান্ত হননি। চরবাগাদী পাম্প হাউস স্টাফ কোয়াটার সম্মুখে প্রায় ৫ একর সম্পত্তির একটি বিশাল মাঠ অবৈধভাবে দখল করে বালু ব্যবসা করে যাচ্ছেন। একইভাবে সরকার কর্তৃক এ পাম্প হাউজের প্রয়োজনে তাদের নির্দিষ্ট স্থানে বালু ভর্তি করে রাখা হয়েছে পাম্প হাউজের বিভিন্ন কাজে এ বালুগুলো তাদের কাজে লাগানো হয়। কিন্তু ঠিকাদার সরকারি ঐ বালু পর্যন্ত বিক্রি করছে। চলতি বছরের এই ঠিকাদার গিয়াস উদ্দিন নান্নু সকল অপকর্মগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপরে চোখের সামনে করলেও সকলে এ বিষয়গুলি শুনে ও দেখে চোখ বন্ধ করে রাখছেন। শুধু তাই নয় এ ঠিকাদার মতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে এখানে এ অপকর্মগুলো দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছেন। তারই অপকর্মের কারণে সরকারি দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝেও ব্যাপক ােভ রয়েছে।
জানা যায়, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পাম্প হাউজ লক গেইটের মাধ্যমে নৌ যান পারাপার করতে সরকার কার্যাদেশে ৩টি সময় বেধে দিয়েছেন। সময়গুলো হচ্ছে সকাল ৭টা থেকে ৮টা, দুপুর ১২টা থেকে ১টা, রাত্র ৬টা থেকে ৯টা। এ সময়ের মধ্যে সকল নৌযান পারাপার হতে পারবেন কিন্তু সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার স্থানীয় কিছু অসৎ কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নিয়ে সময়ের প্রতি তোয়াক্কা না করে যখন-তখন গেইট খুলে নৌযান পারাপারের ফলে প্রতি মাসে চরবাগাদী পাম্প হাউজ কর্তৃপ সরকারিভাবে ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে। যার ফলে সরকার এ পাম্প হাউজ গেট এক বছরের জন্য ইজারা দিয়ে যে রাজস্ব লাভ করেন তা এক মাসের বিদ্যুৎ বিল। বাকী ১১ মাসের টাকাই একজন ঠিকাদার ও স্থানীয় কিছু অসৎ কর্মকর্তাদের কারণে সরকারের গচ্ছা দিতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় এসও মোঃ বদর উদ্দিন মোল্লার সাথে উল্লেখিত অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ সকল বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। আপনার অফিস সম্মুখে গেইটটি রয়েছে আর ঠিকাদার রশিদ বিহীন এবং সরকারি নির্দেশ মতে নির্দিষ্ট টাকার বাহিরে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে এটিও আপনার নজরে নেই কি? এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।
স্থানীয় বেশ ক’জন সরকার দলীয় নেতাকর্মী নাম প্রকাশ না করা সত্ত্বে বলেন, ইজারাদার গিয়াস উদ্দিন নান্নু শুধুই পাম্প হাউজে ইজারার মাধ্যমে লুটপাট করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি এলাকাতেও মতার দাপট দেখিয়ে এলাকার অসহায় ও গরীব লোকদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। জেলার দু’একজন শীর্ষ নেতার আত্মীয়ের পরিচয়ে তিনি এ সকল অপকর্ম করছেন। যার ফলে এলাকায় দলের ভাবমুর্তি দিন দিন হ্রাস হচ্ছে।
এ সকল দুর্নীতি অনিয়মের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার গিয়াস উদ্দিন নান্নু মিয়াজীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়া মাত্রই তিনি মোবাইল ফোনটি কেটে দেন। বহুবার অচেনা নাম্বার দিয়ে ফোন করা হলে তিনি ফোনটি রিসিভ করে দলের জেলার শীর্ষ পর্যায়ের দু’একজন নেতার আত্মীয়তার সুবাদে তাদের জানিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট অফিসকে ম্যানেজ করে সব কাজ করছেন বলে জানান। এর বাইরে অন্য কোন কথা বলতে তিনি রাজি হননি।
শিরোনাম:
শুক্রবার , ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ২৫ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।