মতলব উত্তর: মতলব উত্তর উপজেলায় পছন্দের পাত্রীকে বিয়ে করতে না পেরে তার জেএসসি পরীক্ষার্থী ভাইকে সহপাঠীদের সামনে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে হত্যা চেষ্টা করেছে এক পাষন্ড। গুরুতর জখম জেএসসি শিক্ষার্থী জাহিদ হোসেন বর্তমানে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। ঘাতক ইমরান (২৮) পলাতক রয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় এমরানের পিতা ও ভাইকে আটক করেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার মতলব উত্তর উপজেলার সুলতানাবাদ ইউনিয়নরে চরপাথালিয়া দাসকান্দি গ্রামের আরশাদ বেপারীর ছেলে ইমরান সকাল ৮ টায় জাহিদ পরীক্ষা কেন্দ্রে যাবার পথে তাকে ডেকে এনে দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে দু’হাত ও মেরুদন্ড দ্বি-খন্ডিত করে পালিয়ে যায়। জাহিদ চরপাথালিয়া নূরুল হুদা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। জাহিদ মতলব দক্ষিণ উপজেলার দক্ষিণ নায়েরগাঁও ইউনিয়নের তাতখানা গ্রামের মোঃ শাহজালালের একমাত্র ছেলে। মোঃ শাহজালালের ১ছেলে ও ২ মেয়ে।
এ সংবাদ পেয়ে মতলব উত্তর থানার ওসি রোস্তম আলী সিকদার পিপিএমসহ পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) সফিকুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
ঘাতক ইমরানের পরিবার সুত্রে জানা যায় ১ বছর পূর্বে জাহিদের বোন রুমার সাথে ইমরানের বিয়ের কথা হওয়ার পর ইমরান ওমানে প্রবাসে চলে যায়। গত রমজান মাসে রুমা কুমিল¬ার জাকারিয়া নামে এক যুবকের সাথে পালিয়ে বিয়ে করে। খবর পেয়ে ইমরান দেশে আসে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, জেএসসি পরীক্ষার্থী জাহিদ হোসেনের বোন রুমা আক্তার (১৮) কে বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করাকালীন অবস্থায় আরশাদ আলী বেপারীর ছেলে আসামী এমরান হোসেনের সাথে রুমা আক্তারের আংটি বদল হয়। পরে সে ওমান চলে যায়। এমরান হোসেন ওমান চলে যাওয়ার পর রুমা আক্তারকে পার্শ্ববর্তী বরুড়া উপজেলায় হয়। সে সেখানে সুখে শান্তিতে বসবাস করতেছিল। রুমা আক্তারের বিবাহের কথা শুনে এমরান হোসেন গত ঈদুল আযহার দু’সপ্তাহ পূর্বে ওমান থেকে চলে আসে। এরপর বিভিন্ন প্রকারে রুমা আক্তারের পরিবারকে হুমকি দেয়। যার ফলশ্রুতিতে বৃহস্পতিবার সকালে রুমার ভাই জেএসসি পরীক্ষার্থী জাহিদ হোসেন ট্রলারযোগে নন্দলালপুর সামাদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার পথে চরপাথালিয়া খেয়াঘাটে আসলে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা এমরান হোসেন গংরা জাহিদ হোসানকে দা দিয়ে এলোপাথারী কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এতে তার পুরো শরীর জখমপ্রাপ্ত হয়। আসামীরা পালিয়ে যাওয়া সময় এলাকার লোকজন আরশাদ বেপারী (৪৬) ও জাহিদ হোসেন (২২) কে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ব্যাপারে জাহিদ হোসেনের চাচা রওশান আলী বাদী হয়ে মতলব উত্তর থানায় ৫জনকে আসামী করে মামলা করেন।
সহপাঠী প্রত্যক্ষদর্শী হাসান, জাহিদের চাচাতো বোন নাছরিন বলেন, আমরা ট্রলারের জন্য খেয়া ঘাটে শ্রীশ্রী রক্ষাকালী ও শীতরা মায়ের মন্দিরের সামনে ও বিদ্যালয়ের পাশে দাড়িয়ে ছিলাম। এমরান জাহিদকে ডেকে নেয়। ব্যাগ থেকে দা বের করে জাহিদকে কুপাতে থাকে। আমরা ডাকচিৎকার দিয়ে এগিয়ে গেলে এমরান দৌড়ে পালিয়ে যায়। জাহিদের এ সংবাদশুনে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। দূরদুরান্ত থেকে নারী-পুর“ষ, শিশুরা ছুটে আসে। জাহিদের আত্মীয়-স্বজন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। জাহিদের মা হাসিমনির কান্নায় সকল মানুষের চোখে পানি এসে যায়।
সুলতানাবাদ ইউনিয়নের সদস্য ও চরপাথালিয়া নূরুল হুদা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো. সিরাজ জানান, সকালে স্কুলের সামনে ডাকচিৎকার শুণে ছুটে এসে দেখি এমরান রক্তমাখা দা নিয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছে। লোকজনকে তাকে ধরতে বলে এমরানের পিছনে দৌড়ে থাকি। কিন্তু তাকে ধরতে পারিনি।
চরপাথালিয়া নূরুল হুদা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, জাহিদ মেধাবী ছাত্র। তার আঘাতকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করি। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জাহিদের সুস্থতা কামনা করেন কালো ব্যাচ ধারন সহ দোষীদের শাস্তির দাবী করেন।
মতলব উত্তর থানার ওসি রুস্তম আলী সিকদার পিপিএম জানান, পুলিশ ঘাতককে আটক করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অব্যাহত রেখেছে।
শিরোনাম:
শনিবার , ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ১২ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।