প্রতিনিধি
পরকীয়া প্রেমের ঘটনা ফরিদগঞ্জে যেনো একটি স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। পরকীয়ার জেরে সন্তানদের রেখে অন্যের হাত ধরে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা হরহামেশা ঘটছে। পুলিশকে এসব ঘটনা নিয়ে প্রায়ই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। এসব ঘটনা নিয়ে এতোদিন মামলার কথা শোনা গেলেও রোববার এর ব্যতিক্রম ঘটনার খবর পাওয়া গেলো। পরকীয়ার টানে নিজের অর্জিত সকল অর্থ হারিয়ে এবং প্রেমিকাকে না পাওয়ার হতাশায় ক্ষুব্ধ প্রেমিক প্রেমিকাসহ তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। রোববার উপজেলার গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের চরমথুরা গ্রামের মোল্লা বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ঘরে স্ত্রী ও ১৩ বছরের সন্তান রেখে প্রবাসে অবস্থানকালীন সময়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে সৌদি প্রবাসী আব্দুল। নিজের অর্জিত সকল অর্থ বিলিয়ে দেয় প্রেমিকা শিউলী ও তার মাকে। প্রেমিকাকে বিয়ে করার আশায় এক মাস পূর্বে দেশে ফিরে আসলেও প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ে হওয়ার ঘটনায় স্বপ্ন ভঙ্গ হয় তার। এরই জের ধরে বিক্ষুব্ধ প্রেমিক আব্দুল ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রেমিকা শিউলী, তার বোন রহিমা ও তাদের মা খাদিজা বেগমকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। গুরুতর আহত অবস্থায় বর্তমানে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পুলিশ এ ঘটনায় প্রেমিক আব্দুলকে আটক করেছে।
জানা গেছে, গত সাড়ে ১৩ বছর পূর্বে ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের ষোলদানা গ্রামের কালু বেপারীর ছেলে আব্দুল ধার দেনা করে সদ্য বিবাহিত ও অন্তঃসত্বা স্ত্রী অজুফা বেগমকে রেখে সৌদি আরব যান কর্মের সন্ধানে। এরই মাঝে গত ৩/৪ বছর পূর্বে আব্দুল মোবাইল ফোনে গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের চরমুথরা গ্রামের মোল্লা বাড়ির আব্দুল জব্বারের মেয়ে শিউলীর সাথে পরকীয়ার জড়িয়ে পড়েন। প্রেমে আসক্ত হয়ে আব্দুল শিউলী ও তার মায়ের বিকাশে দেদারছে টাকা পাঠান।
পরকীয়া প্রেমে মজা এবং প্রেমিকা শিউলীকে বিয়ে করার আশায় আব্দুল এক মাস পূর্বে দেশে আসেন। কিন্তু এসে তিনি জানতে পারেন প্রেমিকা শিউলীর অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে। রোববার রাতে সে শিউলীদের বাড়িতে যেয়ে ওইসব বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শিউলীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসা শিউলীর বোন রহিমা ও তাদের মা খাদিজাকেও কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে আবদুল।
আশপাশের লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে আব্দুলকে আটক করে। সংবাদ পেয়ে থানা পুলিশ আব্দুলকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। রাতেই শিউলীর পিতা আব্দুল জব্বার বাদী হয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। তবে বাদী এজাহারে পরীকয়ার কথা স্বীকার করেন।
এদিকে গুরুতর আহত তিনজনকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার করেন।
মামলার বাদী আব্দুল জব্বার জানান, আব্দুল তার ঘরে প্রবেশ করে মেয়ে শিউলীর সাথে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হওয়ার চেষ্টাকালে বাধা দিলে তাদেরকে কুপিয়ে আহত করে।
থানায় আটক আব্দুল জানান, শিউলী ও তার মা খাদিজা তার সাথে প্রতারণা করেছে। প্রেমে জড়িয়ে পড়ে সে বিয়ের আশায় গত ৩/৪ বছরে বিশ লক্ষ টাকা তাদের বিকাশ একাউন্টে পাঠায়। কিন্তু তারা শিউলীকে অন্যত্র বিয়ে দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে সে তাদেরকে কুপিয়েছে। এ সময় সে চিৎকার দিয়ে বলে, আমি চাই শিউলী শেষ হয়ে যাক। এতে আমার ফাঁসি হলেও আর কোনো লোক যেনো এভাবে প্রতারণার শিকার না হয়, তার জন্যে আমি নিজেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করার চেষ্টা করেছি।
আব্দুলের মামা সিরাজ বেপারী জানান, সাড়ে ১৩ বছর পূর্বে আব্দুল সৌদি আরবে গেলেও সে বাড়িতে কোনো অর্থ পাঠায় নি। এর ফাঁকে সে ছোট ভাইকে বিদেশ নেয়ার নাম করে বাড়ি থেকে উল্টো টাকা নিয়ে যায়। তিনি জানান, এতোদিন তারা আব্দুলের পরিবারকে দেখা শোনা করেছেন। গত একমাস পূর্বে সে সৌদি আরব থেকে দেশে আসলেও সংসারের প্রতি আচরণ সুখকর ছিলো না। সর্বশেষ রোববার রাতে সে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে এ কা- ঘটিয়েছে।
ফরিদগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজীব কুমার দাশ আব্দুলকে আটক ও মামলা দায়েরের কথা স্বীকার করেছেন।
এদিকে প্রবাসী আব্দুলের এই আচরণ নিয়ে সমাজ বিজ্ঞানীদের ভিন্ন মত রয়েছে। তারা জানান, প্রবাসে একাকীত্ম কাটাতে প্রবাসীরা পরকীয়ায় জড়িয়ে যাচ্ছে। আবার দেশে প্রবাসীদের স্ত্রীরা অনেক সময় এ অবস্থার মধ্যে পড়ে। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যে যৌথ পরিবার এবং সামাজিক বন্ধন আরো সুদৃঢ় করার উপর জোর দেন।