
মাওলানা এম এ মান্নান
বুখারী ও মুসলিম শরীফের এক হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি আল্লাহর ক্বসম করে বলছি, কোন ব্যক্তি নিজের জন্য যা পছন্দ করে তা অপর ভাইয়ের জন্য যতক্ষণ পছন্দ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না। তিনি আরও বলতেন, আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। স্বয়ং আল্লাহ তা’আলার দৃষ্টিতেও সকল মানুষকে সমান বিবেচনা করা হয়। আরও অতি সূক্ষ্মভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সার্বিক দিক দিয়ে যে যত বড় তার আচার আচরণও তত উন্নত। তার রুচিবোধও তত বেশি। তারা কেউ কাউকে ছোট জ্ঞান করেন না। আজ আমরাই পরস্পরকে ছোট জ্ঞান করছি। সমাজের মানুষকে নানা দিক দিয়ে ছোট বা খাট করার যে প্রবণতা দেখা দিয়েছে তা বড়ই আপত্তিকর ও দুঃখজনক। আমরা যেন সবাই সবচেয়ে বড়। কেউ কাউকে মূল্যায়ণ করতে রাজী নই। অথচ কবির ভাষায় বলতে হয়, ‘বড় যদি হতে চাও, ছোট হও তবে। মূল্য যদি পেতে চাও, মূল্যায়ণ কর সবে।’
আল্লাহর দেয়া সম্পদ থেকে নিজেরটা রেখে গরীবেরটা আলাদা করে তাদের যাকাত বা ফিতরার টাকাটা যথাযথভাবে দিতে আমরা কৃপণতা করি। যারাও বা দেই তারাও সঠিকভাবে দেই না। বিষয়গুলো নিযে ফিকির করা উচিৎ নয় কি ? যাকাত বা ফিতরা হিসেবে কেউ কেউ অতি অল্পমূল্যের পাতলা কাপড় দিয়ে থাকেন, যা পরনের অযোগ্য। এমন অযোগ্য কাপড় বুনার জন্য বেশ কিছু কুরুচিপূর্ণ কোম্পানীও জেগে ওঠেছে। ফলে, বাজার যাকাত বা ফিতরার কাপড় বলে পরিচিত অতি নি¤œমানের কাপড়ে সয়লাব হয়ে গেছে। যা এক থেকে দুইবার ধুইলেই ন্যাকড়া বা তেনার মত হয়ে যায়। পরনের অযোগ্য যে কাপড় পরে গরীব স্বাচ্ছন্দবোধ করতে পারে না, এমন কাপড় যাকাত বা ফিতরা হিসেবে দেয়া ঠিক নয়। পরিমাণে বেশি মানুষকে যাকাত বা ফিতরা দেয়া ফরজ বা ওয়াজিব নয়। বরং পরার যোগ্য, ভাল কাপড়, যা পরলে গরীবের মন খুশি হয়, গরীব আনন্দ পায়, উৎফুল্ল বা উল্লসিত হয়, সে রকম কাপড় অল্প ২ থেকে ১জনকে দেয়াও ভাল। আমি সরকারী ও বেসরকারী সকল বিজ্ঞজনের প্রতি আবেদন জানাব, তারা যেন নি¤œমানের কাপড় ক্রয় না করে এ ধরনের কাপড় তৈরির প্রতিষ্ঠানকে নিরুৎসাহিত করেন। তাহলে ভবিষ্যতে পরনের অযোগ্য পাতলা কাপড় তৈরিতে কোম্পানীগুলো আগ্রহী হবে না। এতে করে গরীবরা লাভবান হবে। তাদের ভাগে যে টাকাটা ধনীর মালের সাথে মিশে আছে, তারা যেন এর সঠিক হিস্যা পায়। যাকাত ফিতরা ছাড়াও ভাল মানের কিছু হাদিয়া দিয়ে গরীবের মনে আনন্দ দান করার চেষ্টা করা সকল মুমিন মুসলমানেরই উচিৎ। এটুকু করতে পারলেই আমাদের ঈদুল ফিতর সার্থক হবে বলে আমরা মনে করি।
লেখক : প্রিন্সিপাল, এক্সিলেন্ট স্কুল এন্ড মাদ্রাসা, কলেজ রোড, ফুলপুর, ময়মনসিংহ।
শিরোনাম:
রবিবার , ৯ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ২৫ কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।
