পাকস্থলীতে এক ধরনের ‘ঘা’ হলেই তাকে আলসার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
‘‘এইচ পাইলোরি’’ নামে এক বিশেষ ধরনের ব্যাক্টেরিয়া পাকস্থলীতে নিঃসৃত এসিড ও পেপ্সি্ন নামক এনজাইমকে কাজে লাগিয়ে এ ক্ষত বা আলসার সৃষ্টি করে। আগে অবশ্য আমরা জানতাম পাকস্থলীর এসিড ও পেপসিনের আধিক্য কিংবা পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ মিউকাস আস্তরণটির প্রতিরক্ষার ক্ষমতা কমে যাওয়াই এ আলসারের অন্যতম কারণ। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষকরা সে ধারণা বদলে দিয়েছেন বছর কয়েক আগে।
এক বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান তারা পেয়েছেন। নাম ‘এইচ পাইলোরি’ ব্যাকটেরিয়া। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে এই ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন বারবার হয় বলেই তা পুরোপুরি সারানো খুব কঠিন। আর সে জন্যই আলসার রোগ নির্মূল করাও বেশ দুরূহ। এ সংক্রমনটি হয় সাধারণত দু’ভাবে।
(১) মুখ থেকে মুখে। অর্থাৎ মা যদি শিশুকে চুম্বন করে, মায়ের কাছ থেকে ঐ ব্যাকটেরিয়াল ইন্ফেকশন নিশ্চিতভাবেই শিশুর শরীরে বাহিত হয়।
(২) অস্বাস্থ্যকর নিকাশি ব্যবস্থা। মল থেকে এ ব্যাকটেরিয়া ক্রমশঃ মাটির নিচে জলে পরিবাহিত হয়। আর সে জল-পাতকুয়া বা টিউবওয়েলের মাধ্যমে আমরা ব্যবহার করি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের শরীরে ‘এইচ পাইলোরি’ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে।
তাই আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের এ উন্নয়নশীল দেশগুলিতে অজান্তেই আমরা বারংবার এ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হই। দেখা গিয়েছে এ ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা আমরা আক্রান্ত হই মাত্র সাত-আট বছর বয়সেই। তবে আলসার রোগের প্রকাশ নিশ্চয়ই সে মুহূর্তে পায় না। প্রকাশ পেতে পেতে বয়স হয়ে দাঁড়ায় অন্ততঃ কুড়ি বছর। উন্নত দেশগুলিতে এ চিত্রটা একটু অন্যরকম। এইচ পাইলোরির আধিপত্য ওখানেও আছে। তবে স্বাস্থ্য সচেতন পরিবেশ এ ব্যাক্টেরিয়াকে সহজে শরীরে জাল বুনতে দেয়না। তাই উন্নত দেশে ৪৫ বছর বয়সের আগে এ রোগ কম দেখতে পাওয়া যায়।পাকস্থলীর মিউকাস আস্তরনের নীচেই পাকস্থলীর মিউকাস এপিথেলিয়ম। এইচ পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধে এই মিউকাস এপিথেলিয়মে। সচেতন ঐ ব্যাকটেরিয়ার বেঁচে থাকার তাগিদে নিয়মিতভাবে এমোনিয়া তৈরী করে। ফলে বাইরে থেকে আঘাত হেনে এই ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করাও বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। শুধু এমোনিয়া নয়, এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থ তৈরী করে যার ফলে মিউকাস এপিথেলিয়মে ছিদ্র সৃষ্টি হয়। আর এই ছিদ্রই পাকস্থলীর এসিড ও পেপ্সিনকে সরাসরি মিউকাস এপিথেলিয়ম ভেদ করে সাব-মিউকাস স্তরের সংস্পশে আসার সুযোগ করে দেয়। ফলে ‘আলসার’, সাধারণ বাংলায় যা এক ধরনের ‘ঘা’-তার সূত্রপাত হয় সেই থেকেই। চিকিৎসা শাস্ত্রের গবেষকদের ভাবনায় আলসারের পিছনে এই ‘এইচ পাইলোরি’ ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা উদ্ঘাটিত হলেও বিশিষ্ট গবেষক সোয়ার্জ-এর ভাষা কিন্তু এখনও প্রমাণিত সত্য।
১৯১০ সালে সোয়ার্জ বলেছিলেন- নো-এসিড, নো আলসার, আজও আমরা তাই দেখছি। ব্যাকটেরিয়া থাকলেও যদি এসিড না থাকত, আলসার অন্ততঃ হত না।মানুষের পরিপাকতন্ত্রে বিভিন্ন অংশের ভিত্তিতে আলসারেরও বিভিন্ন নামকরণ করা হয়েছে।
(১) ইগোফেগাস আলসার,
(২) ডিওডিনাল আলসার এবং গ্যাসট্রিক আলসার।
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষই ডিওডিনাল আলসারে আক্রান্ত। আর গ্যাসট্রিক আলসারে আক্রান্তের সংখ্যা ডিওডিনাল আলসারের আক্রান্তের প্রায় এক-চতুর্থাংশ। আরও দেখা গেছে ওঙহ গ্রুপের রক্ত যাদের- তাদের ডিওডিনাল আলসারের প্রবণতা বেশী। তাই যথা সময়ে খাওয়া-দাওয়া করবেন। বেশী ঝাল খাবার খাবেন না। ‘পেইনকিলার’ অর্থাৎ ব্যথা কমানোর টেবলেট খাবেন না। জল ফুটিয়ে খান কিংবা বিজ্ঞানসম্মত স্বাস্থ্যকর পানীয় ব্যবহার করুন।
হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধান : আলসার সমস্যা নিয়ন্ত্রণে হোমিওপ্যাথিক ওষুধের প্রয়োগ সংকেত যুগান্তকারী। প্রাত্যহিক নিয়মবিধি মেনে চলা দরকার। শুরুতেই নির্দিষ্ট মাত্রায় ওষুধ সেবনে এটার পরিণতি থেকে রক্ষা করা সম্ভব। লক্ষণের মূল্যায়নের ওপর চিকিৎসা নির্ভর করে।
***********************************************************
ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল
01711-943435
ওয়েব সাইট –www.zamanhomeo.com
ব্লগ–https://zamanhomeo.com/blog
ফেসবুক–https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall