প্রতিটি মানুষই তার যোগ্যতা অনুযায়ী পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে চায়। ভালোভাবে বেঁচে থাকার তাগিদে প্রয়োজন কঠোর অধ্যবস্যায়। গ্রামীন সমাজের প্রেক্ষাপটে লোকদের বিশ্বাস লেখা-পড়া করে যে গাড়ী-ঘোড়া চড়ে সে।সে গাড়ী-ঘোড়ার নাগাল পেতে মক্তব হতে ফিরে মেঘনার জলে স্নান সেরে নুন মরিচের পানতা খেয়ে বগলের নীচে অংক, ইংরেজী এবং আমার বাংলা বই তিনখানা পুস্তক সঙ্গী করে ছুটি আমার পাঠশালায়।
তবে রাগী মাস্টারের পড়াটা মুখস্ত করেই পা বাড়াতাম। পাঠশালার বারান্দায় পা রাখতেই দপ্তরীর ঘন্টার সংকেত। দাড়িয়ে যেতাম লাইনে সমবেত কন্ঠে গাইতাম রবীন্দ্রনাথের লেখা জাতীয় সংগীত। “আমার সোনার বাংলা,আমি তোমায় ভালবাসি” ।
তারপর ধারাবাহিক বাংলা ঘন্টা শুরু। আজ বাংলা পাঠ পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের ‘মামার বাড়ি’ কবিতাটি “আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা”
এই কবিতাটির সাথে শৈশবের আরো কয়েকটি কবির কবিতা মনে পড়ে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য যতীন্দ্রমোহন বাগচীর ‘কাজলা দিদি’ খান মুহাম্মদ মঈনুউদ্দীনের ‘কানা বগীর ছা’ বিদ্রোহকবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সংকল্প’।
কয়েক ঘন্টার পাঠ চুকিয়ে পাঠ বিরতি। পাঠ বিরতিতে বাড়ি ফেরা হত না।পাঠশালার এককোনে ছিল গাজীদের বসতভিটা। বসতভিটার চারপাশ ঘিরে ছিল আম, চালতা এবং কুলের বাগান। কুল প্রসঙ্গে এলে মনে পড়ে কবি সুফিয়া কামালের বিখ্যাত সেই পংঙতিটি “বহুদিন পরে মনে আজি পল্লী মায়ের কোল,
ঝাউশাখে যেথা বনলতা বাঁধি হরষে খেয়েছি দোল।
কুলের কাঁটার আঘাত সহিয়া কাঁচা পাকা কূল খেয়ে
অমৃত স্বাদ যেন লভিয়াছি গায়ের দুলালী মেয়ে”।
আর আমরা দুপুরের ক্ষুধা নিবারনে কয়েকজন সহপাঠী মিলে দলগঠন করে মহড়া দিতাম গাজীদের কুলের ডালে। মহড়ার মাধ্যম ছিল পথ ঢিল, ডাবের খোসা এবং আমের বাড়া। ঢিল ছুড়তে ডান বা বাম হাতের ব্যবহার নির্ধারিত ছিল না।
কুলের গাযে ঢিলের আঘাত স্পর্শ করলেই চলত। কয়েক মিনিটের মহড়ায় মিলত মুস্টিময়েক কুল। “কুলের স্বাদ বাড়িয়ে তুলতে পোড়া মরিচের সাথে মোটা লবনের আলিঙ্গন” এছাড়া পাঠশালা সংক্রান্ত আরো কিছু স্মৃতি আমারে মন নাড়া দেয়।
তার মাঝে প্রাথমিক পাঠশালার পঞ্চম শ্রেণী হতে বিদায় অনুস্ঠান । সেদিন কেঁদেছিলাম প্রানখুলে । কান্নাতে কোনরুপ ভেজাল মেশানো ছিল না । সে অনুস্ঠানে কয়েকজন গুরুজীর চরন ছুয়ে দোয়া নিয়েছি। তাদেরই একজন ওস্তাদ দেলোয়ার মাস্টার। ওস্তাদজী আমি আজ আপনার জন্য প্রার্থনারত অবস্হায় দোয়া করি আল্লাহ যেন যেন আপনাকে বেহেশত দান করে । আপনার উছিলায় আমি দেখেছি ভূবন আলো । এই আলোর স্পর্শে আমার এ কথিকা।
লেখক,
এম.এইচ.মাহিন