মাহবুব আলম লাভলু; মতলব উত্তর, চাঁদপুর : বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কর্মকর্তাদের খামখেয়ালীর কারনে বোরো চাষের নির্ধারিত সময়ে পানি পাচ্ছে না চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের কৃষকরা। পানির জন্য সেচ প্রকল্পের কৃষকের মাঝে হাহাকার চলছে। সেচ প্রকল্পে সঠিক সময়ে সেচ দিচ্ছে না বিধায় আমনের পর বোরো উৎপাদনেও বিপর্যয় ঘটবে। এছাড়া প্রতি বছর বোরো মৌসুমের সময় ক্যানেল সংস্কারের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠে। বোরো আবাদের জন্য সঠিক সময়ে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে সেচ সুবিধা না পাওয়ার ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কর্মকর্তাদের খামখেয়ালী প্রতিবাদে জনপ্রতিনিধি কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় কৃষকের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৭৯-৮০ অর্থবছরে বন্যানিয়ন্ত্রণ, পানি সেচের মাধ্যমে বেশি ধান উৎপাদন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণে পানি নিষ্কাশনের উদ্দেশ্যে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা-ধনাগোদার সেচ প্রকল্প নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরে শেষ হয়।
কৃষক ও সচেতন মহলের দাবি প্রকল্পের উদ্দেশ্য ২৪ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি। সংস্কারের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে। পকেট ভারী হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মতলব উত্তর উপজেলায় এবার ৯ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে । তার মধ্যে সিংহভাগ আবাদ হবে সেচ প্রকল্পের ভিতরে। কৃষকরা এ লক্ষ্যমাত্রা সামনে নিয়ে বীজতলা ও জমি তৈরি করে পানির জন্য বসে আছে। নির্দ্দিষ্ট সময় পানি দেয়ার জন্য স্থানীয় এমপি ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে লেখালেখি করলেও পাউবো কোনো প্রকার কর্ণপাত করছে না। কিন্তু বোরো আবাদের জন্য যখন পানি প্রয়োজন তখন পাউবো সেচ ক্যানেলগুলো সংস্কারের দরপত্র আহবান করেন। নামেমাত্র সেচ ক্যানেল সংস্কার করে বরাদ্দকৃত টাকা পাউবোর স্থানীয় কর্মকর্তারা লুটপাটের ব্যবস্থা করে দেন এবং লুটপাটের টাকা পাউবোর স্থানীয় কর্মকর্তারা ও ঠিকাদাররা ভাগ করে নেন বলে সচেতন মহলের অভিযোগ। সংস্কার কাজগুলো দেখলেই লুটপাটের আলামত পাওয়া যাবে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত প্রকল্পে পানি সেচ দেয়নি পাউবো কর্তৃপক্ষ। পানি না পাওয়ায় কৃষকরা বোরো ধানের জালা রোপণ করতে পারছে না। সঠিক সময় বোরো ধান রোপণ করতে না পারায় উৎপাদন হ্রাস । কৃষিবিদরা জানান, ১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বোরোর বীজতলা করার উপযুক্ত সময়। ১৫ ডিসেম্বর থেকে জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে হয়। ধানের চারার বয়স ২১ দিন থেকে ৪০ দিনের মধ্যে জমিতে রোপণ করতে হয়। বীজতলার বয়স ৪০ দিন থেকে বাড়তে থাকলে ক্রমেই ধান উৎপাদন কমতে থাকবে। এদিকে কৃষকের বীজতলার বয়স ৪০ দিন পার হয়ে গেছে ডিসেম্বর মাসেই। বেশির ভাগ বীজতলার বয়স চলছে ৬০-৭০ দিন।
চারা রোপণের সঠিক সময় পার হয়ে গেলেও সেচ প্রকল্পে পানি সেচ এখনও দেয়া হচ্ছে না। কবে পানি পাওয়া যাবে কৃষকের অজানা। কৃষিবিদদের মত অনুযায়ী চারার বয়স বেশি হলে কৃষকরা ধানের সঠিক উৎপাদন পাবে না। মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে বোরো ধান উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটবে। কৃষকরা জানিয়েছেন, আমন ধান চাষে তাদের চালান হারাতে হয়েছে। ইউরিয়া সার ও ডিজেলের দাম বাড়ায় এবার বোরো আবাদ করতে এ উপজেলায় কৃষকদের বাড়তি খরচ করতে হবে কয়েক কোটি টাকা। প্রতি বছর বোরো চাষের সঠিক সময়ে পানি না দেয়ায় উৎপাদন বিপর্যয়ে ও ধানের ন্যায্যা মূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা তাদের মূলধন হারাচ্ছে। এবাবে চলতে থাকলে কৃষকরা বোরো চাষের অগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। ফলে প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে না। শুধু প্রকল্পটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকবে