এম.সাখাওয়াত হোসেন মিথুনহাজীগঞ্জ-
কুমিল্ল্লা চাঁদপুর জেলার প্রাণ হিসেবে খ্যাত ডাকাতিয়া নদীটিকে রক্ষা করা না হলে অচিরেই এ নদীটি বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। ডাকাতিয়া নদীটির উৎপত্তি নিয়ে অনেকের মধ্যে মতভেদ থাকলেও ভারতের ত্রিপুরা থেকে নদীটির উৎপত্তি থেকে প্রায় শত কিলোমিটারেরও অধিক এলাকা নিয়ে প্রবাহিত হয়ে এটি চাঁদপুরের মেঘনা নদীর সাথে মিশে গেছে।
নদীটি অবশ্য চাঁদপুর-ক্লুমিল্লা জেলার প্রায় লক্ষাধিক একর কৃষি জমির আবাদি ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তার মূল কারণ হিসেবে যেটি প্রথম ও প্রধান সেটি হচ্ছে নদীটির নব্যতা ও গভীরতা হারিয়ে যাওয়ার কারণে বন্যা ও অধিক বৃষ্টিপাত হলে অঞ্চলের পানি তাৎক্ষনিক প্রবাহিত না হওয়ার কারণে অন্যটি নদীটির দু’পাড়ের মাটি ভেঙ্গে এবং পলি মাটি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে পানি প্রবাহের প্রতিবন্ধকর্তা সৃষ্টি হচ্ছে। আবার অনেক স্থানে ভূমি দস্যূরা অবৈধভাবে দখলকরে নদী ভরাট করে সেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি নির্মানের কারণে নদীটির দু’পাড় ভরাট হয়ে গেছে। তা ছাড়া অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে বন্দোবস্ত দেওয়ায় অনেক স্থানে প্রতিযোগিতামূলক ভাবে নদীর সংযোগ খালগুলো ভারাট করা হচ্ছে নির্বিচারে। যার কারণে প্রতিনিয়তই নদীটির কোন কোন অংশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নদীটির উৎপত্তি স্থান থেকে কিছু দূরে পারাক্কা নামক বাদ দেওয়ার কারণে নদীটির স্রোত ও পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় অধিক পরিমান পলিজমে নদীটির বিভিন্ন স্থানে ভরাট হয়ে যায়। এর সাথে উক্ত নদীটিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে।
কুমিল্লা অঞ্চলের অনেক স্থানে অসুধা মৎস্য চাষীগণ নদীতে বাঁধ দিয়ে দীর্ঘ স্থান জুড়ে মাছ চাষ করার কারণে নদীটিতে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে। এ নদীটি কেবল কৃষি কাজেই নয় এক কালে এটি দিয়ে লক্ষীপুর, বরিশাল, ভোলা, হাতিয়া, চট্টগ্রাম, খুলনা এবং সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলার সাথে ব্যবসা বানিজ্যের একমাত্র অবলম্বন ছিল। তারই আলোকে দেখা যায়, ডাকাতিয়া নদীটির পাড়ে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল।
বর্তমানে নদীটির পানি কমে যাওয়ায় হাজার হাজার মৎস্যজীবি মাঝি মাল্লা বেকার হয় পড়ার কারণে মানবেতর জীবন যাপন করছে। যদিও এতদাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ এ নদীটি থেকে মাছ শিকার ও নৌকার মাধ্যমে মালামাল বহন করে জীবিকা নির্বাহ করত কিন্তু বর্তমানে তা সম্ভব হচ্ছে না। তা ছাড়া ডাকাতিয়া নদীর শাখাগুলো অবৈধ দখলদারদের দখলের কারণে ও শুকিয়ে যাওয়ায় ইরি-বোরো চাষ মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। তাই অধিক ফসল উৎপাদন বন্যার হাত থেকে অত্র এলাকাকে রক্ষা, মৎস্য সম্পদ পূনরুদ্ধার ও মাঝি-মাল্লাদের কর্মস্থানের জন্য জরুরীভিত্তিতে এ নদীটির খনন এখন সময়ের দাবী হিসেবে পরিণত হচ্ছে।
চাঁদপুর নিউজ সংবাদ