চাঁদপুর নিউজ রিপোর্ট
চাঁদপুর শহরের বকুলতলা রোড এবং কুমিল্লা রোডের একটি অংশ পালবাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী তথা তরকারির আড়তদারদের দখলে থাকে। অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দু’টি ব্যবসায়ীরা কাঁচামাল ও ভ্যানগাড়ি দিয়ে দখলে রাখায় মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এ দু’টি রোড দিয়ে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারে না। পথচারীদের সাথে এ নিয়ে প্রায়ই ব্যবসায়ীদের ঝগড়া হয়।
চাঁদপুর শহরের সবচেয়ে বড় বাজার এবং কাঁচামাল তথা তরকারির আড়ত হচ্ছে পালবাজার। এই বাজার মাছ, মাংস, মুদি, তরকারিসহ সবধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর জন্য প্রসিদ্ধ। বাজারটির পশ্চিম অংশ জুড়ে এবং দক্ষিণ অংশে (কুমিল্লা রোড লাগোয়া) রয়েছে তরকারির আড়ত। বাজারের পশ্চিম অংশ বকুলতলা রোডের দু’ পাশেই রয়েছে প্রায় অর্ধশত তরকারির আড়ত। আর বাজারের দক্ষিণ অংশে কুমিল্লা রোডের এক পাশে রয়েছে অন্তত ৮/১০টির তরকারি ও মুদি মালের আড়ত। এই বাজার থেকে শহর এবং শহরের আশপাশের বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরা তরকারিসহ অন্যান্য মালামাল নিয়ে থাকে। সে জন্য বাজারের আড়তগুলো সবসময় জমজমাট থাকে। কুমিল্লা রোড এবং বকুলতলা রোড দু’টিই অত্যন্ত সরু। এই সরু রাস্তায় যদি মালামাল এবং ভ্যানগাড়ি রেখে মালামাল উঠানামা করা হয় তাহলে সেখানকার অবস্থা কী হয় তা বাস্তবে না দেখলে বুঝানো যাবে না। অর্থাৎ এই সড়ক দিয়ে তখন কোনোভাবেই চলাফেরা করা যায় না। বকুলতলার রোডটি এমনিতেই খুবই সরু। রোডটির দু’পাশেই রয়েছে তরকারির আড়ত। বলতে গেলে রাস্তাজুড়ে থাকে আড়তদারদের মালামাল। তার উপরে আবার থাকে ভ্যানগাড়ি। দিনের অধিকাংশ সময়ই মালামাল সরবরাহের কাজ হয়ে থাকে। বিশেষ করে ভোর থেকে সকাল ৯টা/১০টা পর্যন্ত এবং বিকেল থেকে রাত ৯টা/১০টা পর্যন্ত ভিড় থাকে খুব বেশি। এ সময়ে এ রোডটি দিয়ে কোনো পথচারী চলাচল করতে পারে না। অথচ এই রোডটি দিয়ে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের মেয়েরা প্রতিদিন আসা-যাওয়া করে। আর সকাল ও বিকেল হচ্ছে স্কুল ও কলেজ শুরু এবং ছুটির সময়। এ দু’টি সময়ই বকুলতলা রোডটির অবস্থা থাকে চলাচলের অনুপযোগী। আর কুমিল্লা রোডের ওই অংশটির দু’পাশেও ভ্যানগাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে মালামাল নেয়ার জন্যে। তার উপর আবার রাস্তার পাশে ফলের দোকান বসানো হয়েছে। এ অবস্থায় রোডটি দিয়ে অন্য যানবাহন ও মানুষ চলাচল করতে খুবই কষ্ট হয় এবং দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। অথচ এ রোড দিয়ে ঢাকা-চাঁদপুর লঞ্চযাত্রীরা লঞ্চঘাটে যাতায়াত করে থাকে। অর্থাৎ সবকিছু মিলিয়ে পালবাজারের এই কাঁচামালের আড়তে চলছে চরম অব্যবস্থাপনা, বিশৃঙ্খলা এবং নিয়ন্ত্রণহীন।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ভারপ্রাপ্ত পৌর কাউন্সিলর ফরিদ ইলিয়াছ জানান, মানুষের চলাচলের পথ নির্বিঘ্নে রাখতে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া উচিত। আমি পৌর মেয়র, ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে সমস্যার সমাধানের ব্যাপারের উদ্যোগ নেবো। জেলা ক্যাবের সভাপতি জীবন কানাই চক্রবর্তীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে পৌর মেয়র এবং প্রশাসনের সাথে বৈঠকে একাধিকবার কথা হয়েছে। এটি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়। এ ব্যাপারে অবশ্যই পদক্ষেপ নেয়া উচিত। বিশেষ করে বকুলতলা রোড দিয়ে স্কুল-কলেজের মেয়েরা যাতে নির্বিঘ্নে আসা-যাওয়া করতে পারে আমি এ ব্যাপারে পৌর মেয়র এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী নেতা মোঃ সামছুল হক পাটওয়ারী বলেন, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনসহ এ ব্যাপারে বসা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট। জনগণের পথচলায়ও যাতে কোনো সমস্যা না হয়, আবার ব্যবসায়ীদের সুবিধা-অসুবিধাও দেখতে হবে। উভয়ই জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট।
পালবাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী নেতা মিজানুর রহমান হাওলাদার এ ব্যাপারে বলেন, বাজারের সামনে কুমিল্লা রোডের অবস্থা খুবই খারাপ। সেখানে একপাশে তো তরকারির দোকানের মালামালের জন্য ভ্যানগাড়ি থাকেই, তারপর এখন আবার নতুন করে আরেক পাশে ফলের দোকান দেয়া হয়েছে। এ কারণে জনবহুল এ রাস্তাটিতে দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে। আর বকুলতলা রোডের ব্যাপারে তিনি বলেন, ব্যবসার পরিধি বাড়ায় বেচাকেনার সময় ভিড় থাকাটা স্বাভাবিক। আর আমরা যেহেতু পাইকার ব্যবসায়ী আমাদের দোকানের সামনে মালামাল নেয়ার জন্য গাড়ি থাকাটা স্বাভাবিক। তবে মানুষের নিরাপদ চলাচলের বিষয়টিও দেখতে হবে। তিনি বলেন, আমরা আড়তদাররা নদীর পাড়ে জায়গা চেয়েছিলাম। সেখানে যদি আমাদের জন্য ব্যবস্থা করে দেয়া হয় তাহলে কোনো সমস্যাই থাকে না।
সার্বিক বিষয় বিবেচনায় এনে বকুলতলা ও কুমিল্লা রোডের এই দুর্ভোগ দূর করতে শহরবাসী পৌর কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের কাজে জোর দাবি জানিয়েছেন।