চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারস্থ ঐতিহ্যবাহী জাফরাবাদ জামিয়া আরাবিয়া এমদাদিয়া (দাওরায়ে হাদীস) মাদ্রাসা এতিমখানা ও লিল্লাহ বোডিং-এর বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে মাদ্রাসার ছাত্রবৃন্দ। গতকাল ১৮ নভেম্বর বুধবার সকাল ৯টা থেকে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে তারা মোহতামিমের অফিস ভাংচুর করে। প্রায় দু ঘণ্টা ক্ষুব্ধ ছাত্ররা মাদ্রাসার অভ্যন্তরে অবস্থান করে মাদ্রাসার মুহতামিম ও নাজেমে তা’লিমাতকে অপসারণের দাবিতে শ্লোগান দেয়। এ সময় তারা পুরানো শিক্ষক হাফেজ মনসুর সাহেবকে পুনর্বহালেরও দাবি জানান। খবর পেয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানা, পুরাণবাজার ফাঁড়ি পুলিশ, ম্যানেজিং কমিটির লোকজন এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এসে উত্তেজিত ছাত্রদের শান্ত করার উদ্যোগ নেন। আগামী শনিবারের মধ্যে যেসব কারণে ছাত্র বিক্ষোভ হয়েছে বিষয়গুলোর মীমাংসা করা আশ্বাস দেয়া হলে ছাত্ররা তাদের শ্রেণিকক্ষে ফিরে যায়।
মাদ্রাসায় হট্টগোলের খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) স্নিগ্ধা সরকারও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন, পরিদর্শক (তদন্ত) হারুনুর রশিদ, পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম, বেগম স্টিলের পরিচালক হাবিবুর রহমান, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি হাজী বিল্লাল পাটওয়ারী, কোষাধ্যক্ষ হাজী আবুল কাসেম গাজী, গণ্যমান্য ব্যক্তি আরশাদ মিজি, আওয়ামী লীগ নেতা গাজী মোঃ হাসান, হারুন খাঁ, নিলু হাওলাদারসহ আরো অনেকে।
ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও এলাকার লোকজন জানান, ব্যাপক অনিয়মের মধ্য দিয়ে মাদ্রাসার কার্যক্রম চলে আসলেও কোনো অডিট হয় না। কোনো শিক্ষক মোহতামিমের মতের বিরুদ্ধে গেলে তাকে নানাভাবে কষ্ট দিয়ে হেনস্তা করেন। হাফেজ মনসুর নামে একজন শিক্ষক ২১ বছর যাবত শিক্ষকতা করলেও তাকে কৌশলে মাদ্রাসা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
বিক্ষোভকালে শিক্ষার্থীরা ৬ দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হচ্ছে : মাদ্রাসা পরিচালনায় শুরা কমিটি গঠন করতে হবে, মুহতামিম ও নাজেমে তা’লীমাতকে বহিষ্কার করতে হবে, নতুন নায়েবে মুহতামিম নিযুক্ত করতে হবে, নাজেম ও নায়েবে নাজেমের পরিবর্তে যোগ্য নাজেম ও নায়েবে নাজেম নিযুক্ত করতে হবে, স্থায়ীভাবে দারুল ইক্বামা নিযুক্ত করতে হবে, যখন-তখন মুহতামিম কর্তৃক ওস্তাদগণের হেনস্তা করা চলবে না, যাবে না এবং সকল ছাত্র ও মজলুম ওস্তাদদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা জাফর আহমদ জানান, শিক্ষক হাফেজ মনসুরকে আমরা বাদ দেইনি, তিনি অব্যাহতি নিয়েছেন। আমি দীর্ঘবছর এই মাদ্রাসার দায়িত্বে আছি। মাদ্রাসাটি সুন্দরভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে আমার কোনো আন্তরিকতার অভাব নেই। মনে হয় কারো ইন্ধনে কিছু ছাত্র আমার কক্ষে হামলা করেছে। দরজা-জানালার গ্লাস ভাংচুর করে। তাদের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ আশা করিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাঁদপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারুনুর রশীদ জানান, মাদ্রাসার সমস্যাগুলো নিয়ে কমিটি শনিবার বসে মীমাংসা করবে। সবাইকে শান্ত থাকার জন্যে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক।