শাহরিয়ার খাঁন কৌশিক ॥
চাঁদপুর পুরানবাজারে কাজের মেয়ে তানজিলা আক্তার (৯) কে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর টয়লেটে ভিতরে ঢুকিয়ে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘাতকরা রাতের আধারে লাশ ট্রলার যোগে চরে নিয়ে গোপনে দাফন করার চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার পর পুরান বাজার পুলিশ ফাড়ির তৎপরতায় অবশেষে উদ্ধার করা হয়েছে। এ হত্যার ঘটনায় গৃহ পরিচালিকা জোৎস্না বেগম(৩০) সহ ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে লাশ ময়না তদন্তের জন্য চাঁদপুর মডেল থানায় পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার বিবরনে জানা যায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের কাচিকাটা চরের তৈয়ব আলীর মেয়ে তানজিলা আক্তার গত ৯ মাস যাবত পুরানবাজার নিতাইগঞ্জের কুলিবাগান এলাকার নুরু হাওলাদারের ছেলে মাছ ঘাটের মৎস ব্যবসায়ি নান্টু হাওলাদারের বাসায় পরিচালিকার কাজ করে আসছে। নান্টুর স্ত্রী জোৎস্না বেগমের খালাতো বোন বেগমের মেয়ে তানজিলা আক্তার। তানজিলার মার শর্ত মতে জোৎস্না বেগম তাকে পুরানবাজার মার্চ্চেন্টস একাডেমীতে ভর্তি করায়। গত সোমবার দুপুরে স্কুল শেষে তানজিলা বাসায় ফিরে কাপড় কাচা ও হাড়ি পাতিল ধুয়ে বাসার পাশে খেলাধূলা করে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে জোৎস্না বেগম বাইরে কাজ শেষ করে বাসা আসার পর এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। রাতে জোৎস্না ও তার স্বামী নান্টু হাওলাদার লাশ গুম করার জন্য কাউকে বুঝতে না দিয়ে তানজিলা আক্তারের মাকে
টাকার লোভ দেখিয়ে সে আত্বহত্যা করেছে বলে চালিয়ে দিয়ে চরে নেওয়ার পরামর্শ দেয়। সোমবার রাত সাড়ে ১০ টায় পুরানবাজার কুলিবাগান (সুরুজ মহল) থেকে নান্টুর তার শালা ফকরুল, মৎস ব্যাবসায়ী সুমন খাঁন ও শাহজাহান মোল্লাসহ কয়েকজন তানজিলার লাশ কাথা দিয়ে পেচিয়ে ট্রলার যোগে কাচি কাটা চরে নিয়ে যায়। লাশ নেওয়ার পর চরাঞ্চলের লোকজন ও তানজিলার আত্বিয় স্বজনরা তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত চিহ্ন দেখতে পেয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে মন্তব্য করে তার লাশ দাফনে বাঁধা প্রদান করে। পরে নান্টু ও তার শশুর শাহজাহান মোল্লা সহ তাদের কয়েকজন আত্বিয় স্বজন নিহত তানজিলার মা বেগমকে লক্ষ টাকার লোভ দেখিয়ে ও পুরান বাজার পুলিশ ফাড়ি এবং মডেল থানাকে ম্যানেজ করে পুনরায় লাশ দাফন করার জন্য অনুরোধ করে। এ খবর রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ৯নং ওয়ার্ডের হানিফ মেম্বার জানতে পেরে লাশ দাফন করতে বাধা প্রদান করে। পুরান বাজার পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে ফোন করে দাফন বন্ধ করে তানজিলার লাশ পুনরায় পুরানবাজারে পাঠাতে বলে। মঙ্গলবার দুপুর আড়াই টায় তানজিলার লাশ নিয়ে পুরানবাজার আসার পর পুলিশ ঘটনার সাথে জরিত সন্দেহে নান্টুর হাওলাদারের স্ত্রী জোৎস্না বেগম (৩০) মম ফ্যাক্টরীর রওশন আলীর পুত্র নূর মোহাম্মদ হাওলাদার (৬০) ও রওশন কুড়ালীর পুত্র আব্দুল খালেক (৬০) কে আটক করে। এ দিকে পুরানবাজার পুলিশ ফাড়িতে লাশ আনার পর শত শত উৎসুক জনতা তানজিলার লাশ এক নজর দেখার জন্য ভীড় জমায়। পরে লাশ সুরতাল শেষে পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য মডেল থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় তানজিলার বাবা তৈয়ব আলী বাদী হয়ে চাঁদপুর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
এ ব্যপারে তানজিলার মা বেগম জানায়, গত ৯ মাস পূর্বে খালাতো বোনের বাসায় কাজে দিয়েছি।সোমবার সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পর খালাতো বোন জোৎস্না জানায় তানজিলা টয়লেটের দরজা আটকিয়ে ফাসি দিয়েছে। পরে চরে নিয়ে লাশ দাফন করার জন্য জানালে তারা কয়েকজন লাশ নিয়ে আসে। কি কারনে তার মৃত্যু হয়েছে তা জানা নেই। তার শরীরের গলায়, হাতে ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিলো।
নান্টুর স্ত্রী জোৎস্না বেগম জানায়, সোমবার দুপুর আড়াই টায় পদ্মা লাইফ ইন্সুরেন্সে কাজ শেষে বিকেল ৫ টায় বাড়িতে ফিরে প্রস্বরা করার জন্য টয়লেটে গেলে দেখি দরজা ভিতর থেকে আটকানো। পরে সারা শব্দ না পেয়ে ভাড়াটিয়া ও পাশ্ববর্তী মানুষের উপস্থিতি টের পেয়ে শাবাল দিয়ে দরজা খুলে তানজিলকে ঝুলন্ত দেখতে পায়। এসময় বাসায় ছোট বোন পারুল,মামাতো ভাই মানিকের হবু স্ত্রী, ভাড়াটিয়া শিউলি ছিলো। কি কারনে সে আত্বহত্যা করেছে জানা নেই।
এদিকে নান্টুর পার্শ্ববর্তী লোকজন জানায়, তাকে নির্যাতন করে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে টয়লেটের ভিতরে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। নান্টু ও তার স্ত্রী এ হত্যার ঘটনার সাথে জরিত রয়েছে। আত্বহত্যার নাটক সাজাতে তানজিলার গলায় দড়ি পেচিয়ে টয়লেটের ভিতর রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে লাশ চাঁদপুরে এনে আসামীদের গ্রেফতার করলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে চাঁদপুর মডেল থানার ওসি মামুনুর রশীদ পুরানবাজার কুলি বাগান (সুরুজ মহল) নান্টুর বাসায় আসে। এসময় হত্যার ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, টয়লেটের মধ্যে কোনভাবেই গলায় ফাশ দেওয়া সম্ভব নয়। প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে এটা আত্বহত্যা নয়, হত্যা করা হয়েছে। তদন্ত করার পর আসল ঘটনা বেড়িয়ে আসবে। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যপারে পুরানবাজার ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও জেলা যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক মোহাম্মদ আলী মাঝি জানায়, তানজিলা হত্যার সঙ্গে যারা জরিত রয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। এ ঘটনায় নিরাপোরাধ মানুষ যেনো এ মামলায় না জরানো হয় সেদিকে পুলিশকে নজর রাখতে হবে।