বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। দুদিনে খুচরা বাজারে ১১টি পণ্যের দাম বেড়েছে।
এজন্য ভোক্তাকে বাড়তি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। একে একে মোটা চাল, সয়াবিন, পাম অয়েল সুপার, পেঁয়াজ, রসুন, ব্রয়লার মুরগি, চিনি, জিরা, খোলা ময়দা ও এলাচের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি সব ধরনের সবজিও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ভোক্তারা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার ও মালিবাগ বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সব ধরনের পণ্যের দাম বৃদ্ধির চিত্র সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার পণ্য মূল্য তালিকায় লক্ষ করা গেছে। টিসিবি জানায়, একদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়েছে।
দুদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৪২ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের দাম শূন্য দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি প্রতি লিটার পাম অয়েল সুপারের দাম ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি কেজি দেশি রসুন ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ ও আমদানি করা রসুন ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া একদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ, চিনি ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ, জিরা ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ, খোলা ময়দা ৪ দশমিক ৭১ শতাংশ ও ছোট দানার এলাচ ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
জানতে চাইলে দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ও ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, দেড় বছরে আয় কমে যাওয়ায় ভোক্তাকে সব কিছুতেই ব্যয় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নিত্যপণ্যের বাড়তি দর তাকে দিশেহারা করে তুলছে। তাই সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে পর্যালোচনা করা উচিত।
বাজার তদারকির পাশাপাশি পণ্যের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সরবরাহ ও মজুত গড়ে তোলা উচিত। এতে বাজারে পণ্যের দাম কমবে। ভোক্তারাও সুফল পাবেন। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চালের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে।
সব ধরনের চালের দাম না বাড়লেও বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। যা একদিন আগে বিক্রি হয়েছে ৪৮ টাকায়।
মালিবাগ কাঁচাবাজারের খালেক রাইস এজেন্সির মালিক ও খুচরা চাল বিক্রেতা দিদার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, কয়েকদিন চালের দাম কিছুটা কমতির দিকে থাকলেও মিলাররা আবার চালের দাম বাড়াতে শুরু করেছেন। তারা প্রথম ধাপে মোটা চালের দাম বাড়িয়েছেন। ফলে তাদের বেশি দরে এনে বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
শনিবার থেকে ধাপে ধাপে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে। সরবরাহ ও মজুত ঠিক থাকলেও পূজায় আমদানি কমার অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম বাড়িয়েছেন বিক্রেতারা। ফলে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ৮২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা দুদিন আগেও ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকায়।
বৃহস্পতিবার নতুন করে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। দুদিনের ব্যবধানে বোতলজাত সয়াবিনের মধ্যে পাঁচ লিটারে ১০ টাকা বেড়ে ৭৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাম অয়েল সুপার লিটারে ৫ টাকা বেড়ে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি চিনি ৭৮-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা একদিন আগেও ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১০ টাকা বেড়ে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
রাজধানীর কাওরান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা আব্দুল মুহিত যুগান্তরকে বলেন, বাজারে ক্রেতাদের অনুকূল পরিবেশ নেই। পণ্যের কোনো সংকট না থাকলেও দাম বাড়তি। বাজারে সব পণ্য পাওয়া গেলেও বাড়তি দরে কিনতে হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের নজরদারি নেই। যা করা হয় তা সবই লোক দেখানো। কাজের কাজ কিছু হয় না।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- প্রতি কেজি আমদানি করা রসুন ১০ টাকা বেড়ে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি জিরা ২০ টাকা বেড়ে ৪২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খোলা ময়দা কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৪৩ টাকায় বিক্রি হয়ে হয়েছে পাশাপাশি প্রতি কেজি ছোট দানার এলাচ ২০০ টাকা বেড়ে ৩৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
খুচরা বাজারে আকার ভেদে লাউ ৬০-৮০ টাকা, ফুলকপি ৪৫-৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি ঝিঙা ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পটোল ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, আকার ভেদে বেগুন ৬০-৮৫ টাকা, শিম ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৪০ টাকা, টমেটো ১৪০-১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া কাঁচামরিচ ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল যুগান্তরকে বলেন, বাজারে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তদারকি জোরদার করা হয়েছে। যৌক্তিক দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনো অনিয়ম পেলেই শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে।