মিজানুর রহমান রানা
চাঁদপুর সদর উপজেলার ১২নং চান্দ্রা ইউনিয়নের ১ ও ২ নং ওয়ার্ড মেম্বারদের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে জেলেদের কাছে তাদের প্রাপ্য ত্রাণ কার্ড বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, ১২নং চান্দ্রা ইউনিয়নের ৮শ’ ৬৭ জন জেলে জাটকার চাল নেয়ার জন্যে চৈত্রের উত্তপ্ত রোদে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে দীর্ঘ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু অর্থনৈতিক হিসাব না মিলাতে পেরে চেয়ারম্যান ও মেম্বার ও সচিবের মাঝে ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় প্রায় ৪ ঘণ্টা পর জেলেদেরকে পরবর্তীতে চাল বিতরণ করা হবে বলে কর্তৃপ জানিয়ে দেয়। ইউনিয়ন পরিষদের প্রবেশ করে দেখা যায়, ইউনিয়নের সচিব দীর্ঘণ চেয়ারম্যান ইউসুফ খানকে মোবাইলের মাধ্যমে চেষ্টা করেও ইউনিয়ন পরিষদের আনতে ব্যর্থ হন। কারণ জানতে চাইলে তিনি অসুস্থ রয়েছেন বলে জানিয়ে দেন।
এদিকে বাহিরে অপোরত দীর্ঘ লাইনের ১ ও ২নং ওয়ার্ডের প্রায় ২০-২৫জন জেলেরা জানায়, ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার ইসমাইল ঢালী জনপ্রতি ১০০-৫০০শ’ টাকা করে প্রতি কার্ডে চাঁদা উত্তোলণ করে। অনেকে মোটা অঙ্কের অর্থ দিলেও তাদের ভাগ্যে মিলেনি জাটকা না ধরার বিনিময়ে সরকার কর্তৃক প্রদেয় ত্রাণের চাল। এছাড়াও ইলিয়াছ মেম্বারের বিরুদ্ধে অত্র ওয়ার্ডের অনেকেই জানান, নির্বাচনের পূর্বে বিভিন্ন ইশতেহার প্রদান করে থাকলেও এলাকার উন্নয়নে তার কোনো ভ্রুপে নেই। তিনি বিভিন্ন প্রকল্পের নাম করে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে ভুরি ভুরি। ইদানীংকালে একটি কবরস্থানে উন্নয়নের নামে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ২টন গম বরাদ্দকৃত পুরো টাকাই তিনি আত্মসাৎ করে। অথচ কবরস্থানের কোনো কাজই হয়নি। চেয়ারম্যান ইউসুফ কেরানী মেম্বারদের মাধ্যমে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করে নিজে ধরাছোয়ার বাইরে থাকে।
অপরদিকে ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার দুলালের বিরুদ্ধেও গোটাকয়েকজন ১শ’ টাকা করে জনপ্রতি ত্রাণ বিতরণের কার্ড বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে ইসমাইল মেম্বারের সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, টাকা নিয়েছি সত্য, কিন্তু তা এলাকার কাঠের পুল পুনঃসংস্কার করার জন্য। কবরস্থানের নামের যে বরাদ্দ নেয়া হয়েছে তা এখনো কাজ করা হয়নি। কারণ, কবরস্থানের কয়েকটি গাছ রয়েছে; তা বিক্রির পর কাজ করানো হবে। ১নং ওয়ার্ডের দুলাল মেম্বার জানান, শত্র“তাবশত তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। গুটিকয়েকজন চা-নাস্তা খাওয়ার জন্য তাকে দিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে চাল বিতরণের কথা থাকলেও তা না দেওয়ায় অধিকাংশ জেলেরা হৈ-চৈ করতে থাকে। এসময় বাখরপুরের শাহ্আলম ও আবুল বাশার জানায়, প্রকৃত জেলে হওয়া সত্বেও তারা ত্রাণের কার্ড পায়নি। স্লিপ দেয়ার পরও তাদেরকে চেয়ারম্যান ও মেম্বার কার্ড দেয়নি। ৬নং ওয়ার্ডের শফিক মেম্বার নামের তালিকায় প্রকৃত জেলেদের নাম না দিয়ে তার আত্মীয়স্বজনদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নাম দিয়ায় অনেক জেলেরা কার্ড থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সরকার ৪০ কেজি করে জেলেদের জন্য জাটকার চাল দেয়ার বরাদ্দ থাকলেও চেয়ারম্যান, মেম্বাররা জেলেদেরকে বঞ্চিত করার জন্য ৩০ কেজি চাল দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ খবর শুনে সকল জেলেরা পরিষদের সামনে আন্দোলন করায় তারা আর চাল দেয়নি।
এব্যাপারে সচিব আবুল কালাম আজদ জানায়, জেলেদের নাম নিবন্ধন করার জন্য ইউএনও অফিস থেকে শিক আলী আহাম্মদকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি যাচাই-বাছাই করে ৮শ’ ৮৭ জন জেলের নামের তালিকা উপজেলা কার্যালয়ে পাঠায়। সেখান থেকে ট্রান্সপোর্ট ৮শ’ ৬৭ জনের তালিকা পাঠিয়েছে। বাকীদের ভুলের কারণে না দেয়ায় তা পুনরায় তালিকা করে পাঠানো হবে। তখন বাকীরা সবাই জাটকার কার্ড পাবে।
শিরোনাম:
বৃহস্পতিবার , ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ১০ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।