মিজান লিটন
প্রচণ্ড গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। একটু ঠাণ্ডা আবহাওয়ার জন্য শীতল পরশ পেতে মানুষ ছুটছে দিগিবিদিক। কিন্তু কোথাও স্বস্তির নিঃশ্বাস নেই, সর্বত্র গরম আর গরম। প্রচণ্ড গরমের তাড়নায় দিনের বেলায় রাস্তাঘাটও থাকে অনেকটা ফাঁকা। বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত এ গরমে কেউই রাস্তায় বের হতে চায় না। দিন মজুর থেকে খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট ছিলো ব্যাপক। তারা কিছুক্ষণ পরপরই ছুটেছে তৃষ্ণা নিবারণের জন্যে। চাহিদা বেড়েছে ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানিসহ বোতলজাত কোমল পানীয়। যে মিনারেল ওয়াটার ৮/৯ টাকা দাম তা’ বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। কোনো আওয়াজ নেই, ফ্রিজের ঠাণ্ডা বলে কথা। খেতে হবে খেয়ে যাচ্ছে। গ্রামগঞ্জে বসবাসরত মানুষজন ঠাণ্ডা হাওয়া পাওয়ার লক্ষ্যে গাছের নিচে আশ্রয় নিলেও মিলছে না কোনো বাতাস। আর শহরের মানুষ নির্ভর হয়ে পড়ছে বৈদ্যুতিক পাখার উপর। কিন্তু সে বিদ্যুৎও এখন প্রচণ্ড গরমে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বারবার। এ আছে এ নেই। বিদ্যুতের এ ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে জনজীবন আরো অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। একদিকে প্রচণ্ড গরম, আর অপর দিকে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে মানুষ দিশেহারা। অবশ্য অবস্থা সম্পন্ন মানুষ গরম আর বিদ্যুতের এ সঙ্কটে তেমন বিচলিত নয়। তাদের রয়েছে আইপিএস ব্যবস্থা। বিদ্যুৎ থাকাকালীন তারা বিদ্যুৎ জমা করে রাখতে পারলেও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের দ্বারা তা সম্ভব না হওয়ায় এ প্রচণ্ড গরমে তাদের ভোগান্তি পৌঁছছে চরমে।
গতকাল চাঁদপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, এ জেলায় গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন ৮ জুন ছিলো সর্বোচ্চ ৩৫.৭ এবং ৭ জুনও একই তাপমাত্রা ছিলো। অবস্থা দৃষ্টে সামান্য ব্যবধানের মাঝেই গত ক’দিন ধরে এ তাপমাত্রা চলে আসছে। হয়তো এ তাপমাত্রাও কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে দেখা দিতে পারতো, যদি না ঘন ঘন লোডশেডিং হতো।
হঠাৎ হঠাৎ এ লোডশেডিং হওয়ার কারণ সম্পর্কে চাঁদপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ার কারণেই এ লোডশেডিং হচ্ছে। আর এ লোডশেডিং শুধু চাঁদপুরেই নয়, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপন্ন না থাকায় সারাদেশেই এ বিপর্যয় চলছে। চাঁদপুর পিডিবির সর্বনিম্ন চাহিদা ১৮ মেগাওয়াট থাকলেও গতকাল পাওয়া গেছে মাত্র ১০ মেগাওয়াট। যা চাহিদানুযায়ী অর্ধেকের সামান্য বেশি। প্রচণ্ড গরম থেকে একটু স্বস্তি পেতে প্রয়োজন বিদ্যুৎ। সে বিদ্যুৎ যদি নিরবচ্ছিন্নভাবে পাওয়া যেতো হয়তো মানুষের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসতো। কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের বদলে ঘন ঘন লোডশেডিং মানুষকে আরো চরম করে তুলছে। জানা যায়, ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির কথা থাকলেও ওই পরিমাণ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না বাংলাদেশ। কমতে কমতে এখন সর্বোচ্চ চাহিদার সময়ে তা ৩৫০ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে।