প্রতিনিধি
চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার শহর রক্ষা বাঁধের রামঠাকুর মন্দির সংলগ্ন এলাকার ৫০ মিটার জায়গা জুড়ে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গত ২দিনের প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়ায় নদীতে প্রচন্ড ঢেউয়ের সৃষ্টি হলে এ স্থানে থাকা ব্লক সরে গিয়ে এ ভাঙ্গন দেখা দেয়। এতে অত্র স্থানে বসবাসরত মানুষজনসহ ব্যবসায়ীদের মাঝে ভাঙ্গন আতঙ্ক শুরু হয়।
বর্ষার আগ থেকে এই ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হওয়ায় অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়েন। তারা বর্ষা মৌসুমের আগেই অত্রস্থানে ভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থাগ্রহণেরও দাবি জানান। গতকাল ১৫মে বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়া শুরু হলে মেঘনার বক্ষে প্রবল ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। এতে মন্দির সংলগ্ন প্রায় ৫০ মিটার জায়গা জুড়ে থাকা জিও টেক্সের বালুভর্তি বস্তা ও ব্লক সরে যায়। সংবাদ পেয়ে তড়িৎ গতিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রফিক উল্লাহ হক, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আশ্রাফুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন পূর্বক ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থাগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং জরুরি ভিত্তিতে জিও টেক্সের বালভর্তি ব্যাগ স্থাপনের আশ্বাস দেন। তিনি আরো জানান, অত্র স্থানের ভাঙ্গন প্রতিরোধ ১০০ মিটার স্থান জুড়ে ব্লক স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। সহসাই ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকার প্রকল্পের এই কাজ শুরু হবে। এলাকাবাসী জরুরি ভিত্তিতে অত্র কাজ শুরু করারও দাবি জানান।
জানা যায়, প্রায় ৭/৮ মাস পূর্বে হঠাৎ করেই ভোরের দিকে অত্র স্থানে ভাঙ্গন দেখা দেয়। তখন জরুরি ভিত্তিতে ভাঙ্গন প্রতিরোধে বালু ভর্তি বস্তা ফেলা হয়। যার অধিকাংশই ছিলো প্লাস্টিকের বস্তা, প্রচণ্ড ঢেউয়ের কারণে ভিতরে থাকা বালু সরে গিয়ে অধিকাংশ প্লাস্টিকের বস্তা নদীতে ভেসে যায়। অবশ্য যখন বালু ভর্তি বস্তা ফেলা হয় তখন বলা হয়েছিলো এই সকল বস্তার উপর ব্লক স্থাপন করা হবে। কিন্তু ৭/৮মাস অতিবাহিত হলেও বালুর বস্তা ব্লকের মুখ দেখেনি। তখনকার সময় এই ভাঙ্গন প্রক্রিয়ায় এলাকার মানুষসহ পুরাণবাজারের ব্যবসায়ী সমাজ আতংকিত হয়ে পড়ে। তখন ভাঙ্গন প্রক্রিয়া সরোজমিনে দেখার জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা সুজিত রায় নন্দীসহ অনেক নেতাই ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণে জরুরি ভিত্তিতে সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও আশ্বাস প্রদান করেন।
কিন্তু ঘটনার এত মাস পরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ না করায় অনেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করেন। অত্র ভাঙ্গন কবলিত স্থান শহর রক্ষা বাঁধের আওতায় থাকার পরও শুষ্ক মৌসুমে অত্র স্থানে প্রয়োজনীয় কোনো কাজ না হওয়ায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, শুষ্ক মৌসুমে যদি ভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হতো, তাহলে হয়তো এখন এই ভাঙ্গন দেখা দিতো না। পুরাণবাজার এলাকার এ স্থানের ভাঙ্গন প্রতিরোধ যদি এখনই কার্যকর কোনো ব্যবস্থাগ্রহণ করা না হয় তাহলে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রামচন্দ্র দেবের দোল মন্দিরসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মিল কারখানা নদী বক্ষে বিলীন হয়ে যাবে। হারাবে শত-শত মানুষ তাদের মাথা গোঁজার স্থান। ভাঙ্গন সংবাদ শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন পৌর কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম নজু বেপারী, জেলা নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটির নেতা ফয়েজ আহম্মদ মন্টু, মমতাজ উদ্দিন মন্টু, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সেক্রেটারী গোপাল চন্দ্র সাহা, মন্দির কমিটির জ্যোতিষ চন্দ্র রায়, পরেশ চন্দ্র মালাকার, অমল কৃষ্ণ ঘোষ, ডাঃ হিমাংশু দে, দিলীপ সাহা, শ্যামাপদ সাহা শ্যামসহ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।