বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো-১৯৯৫ অনুযায়ী উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রী কলেজ পর্যায়ে ব্যবহারিক বিষয়ের পদ হলো প্রদর্শক পদ যা শিক্ষক পদমর্যাদা পদ (বেতন কোড ১০)।তখন জনবল কাঠামো অনুযায়ী নিয়োগ পেতে শিক্ষাগত যোগ্যতা চাইতো ও সরকার জারিকৃত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামোতে লেখা থাকতো (১) স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) পাস। অথবা কলামে লেখা থাকতো স্নাতক পাস। বেশির ভাগ প্রদর্শক স্নাতকোত্তর পাস যোগ্যতা দিয়ে প্রদর্শক পদে নিয়োগ নিয়েছে। অনেকে অথবা কলামে স্নাতক পাস যোগ্যতা নিয়ে প্রদর্শক পদে নিয়োগ নিলেও পরবর্তীতে স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) করেছে। কলেজে যেখানে প্রায় শিক্ষক স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) করা। ফলে প্রদর্শক`রা স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) করা আছে বা পরে করেছে বা করছে।
বর্তমান বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ অনুযায়ী প্রদর্শকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা সরাসরি স্নাতক পাস লেখা আছে। বর্তমান সরকার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ অধিকতর সংশোধন ও সংযোজন করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাউশি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন এর প্রতিনিধি সহ অন্যান্য প্রতিনিধি দ্বারা কমিটি করেছে।
বাংলাদেশের উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক কলেজ গুলোর প্রদর্শকগণ চায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জনবল কাঠামোতে প্রদর্শকদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে শুধু গ্রেড পরিবর্তন নয়, পদোন্নতি হোক, পরবর্তী উচ্চধাপ পদবী পরিবর্তন হোক। যাতে স্নাতকোত্তর পাস বা দীর্ঘদিন অভিজ্ঞতার আলোকে প্রদর্শকগণ পরবর্তী ধাপ প্রভাষক পদবী/সহকারি অধ্যাপক পদবী ও প্রশাসনে উচ্চপদে যেতে পারে।
বেতন কোড পরিবর্তন এক বিষয় ও শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার আলোকে নিদিষ্ট সময় পর পদ/পদবী পরিবর্তন অন্য বিষয়। একজন শিক্ষকের নিদিষ্ট বছর অতিক্রম করার পর অভিজ্ঞতার আলোকে পরবর্তী পদ/পদবী পরিবর্তন বা পদবী/ধাপ পরিবর্তনের সঙ্গে শিক্ষকের পারিবারিক/সামাজিক মর্যাদা ও সন্মান নিহিত (সব জায়গায় বেতন বৃদ্ধি বা স্কেল বৃদ্ধি করা তাদের প্রধান বিষয় নয়)।
একজন প্রভাষক (বেতন কোড ৯) বর্তমান জনবল কাঠামো-২০১৮ অনুযায়ী এমপিও হতে এমপিও ৮ বছর পূর্ণ হলে (যা বৈষম্যমূলক, চাকুরির সিনিয়র অনুপাতে ৫ জনের মধ্যে ২ জন) ৫ঃ২ গড় হার অনুযায়ী প্রভাষক পদবী হতে সহকারী অধ্যাপক (বেতন কোড ৬) পদবী প্রাপ্ত হবেন। আর যারা সহকারী অধ্যাপক (পদবী) হতে পারবেন না সে সমস্ত প্রভাষক সাধারণত প্রভাষক পদে চাকুরি জীবনে ১০ বছর পর উচ্চতর গ্রেড (বেতন কোড ৮) প্রাপ্ত হবেন ও তার পর ৬ বছর অতিক্রম হবার পর আবারও উচ্চতর গ্রেড (বেতন কোড ৭) প্রাপ্ত হবেন।তবে নিদিষ্ট মেয়াদ অতিক্রম হবার পর প্রয়োজনে অভিজ্ঞতার আলোকে একজন প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক কলেজের প্রশাসনিক পদ/পদবী উপাধ্যক্ষ ও সর্বোচ্চ পদ/পদবী অধ্যক্ষ হতে পারে।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো-২০১৮ অনুযায়ী একজন প্রদর্শক বেতন কোড ১০ (যা মাধ্যমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষক স্কেল) চাকুরিতে যোগদান হতে দীর্ঘ প্রায় ২৫-৩০ বছর চাকুরি করে চাকুরি জীবনে কোন পদোন্নতি না পেয়ে একই পদ যা প্রদর্শক পদ হতে অবসর যায়।তবে প্রদর্শক পদে চাকুরিরত`রা এমপিও হতে এমপিও ১০ বছর অতিক্রম হবার পর উচ্চতর গ্রেড (বেতন কোড ৯) (যা প্রভাষক পদের প্রথম বেতন গ্রেড/বেতন কোড/বেতন স্কেল) প্রদর্শক পদবী`রা প্রাপ্ত হবেন ও পরবর্তী আরও ৬ বছর অতিবাহিত করার পরে উচ্চতর গ্রেড (বেতন কোড ৮) (যা প্রভাষক পদের চাকুরির ২য় উচ্চতর গ্রেড/বেতন কোড/বেতন স্কেল) প্রদর্শক পদবী`রা প্রাপ্ত হবেন।দীর্ঘ চাকুরি জীবনে পদ/পদবী পরিবর্তন হয় না। ফলে প্রদর্শকদের মধ্যে কর্মজীবনে পদোন্নতিহীনতা কাজ করে ও কর্মজীবনে একঘেয়েমি চলে আসা অস্বাভাবিক নয়।
যেখানে মাধ্যমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষক (বেতন কোড ১০) নিদিষ্ট অনেক বছর পর গ্রেড/স্কেল নং ৯ পান ও অভিজ্ঞতা আলোকে সহকারী প্রধান শিক্ষক বা পর্যায়ক্রমে প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদ/পদবী প্রধান শিক্ষক হতে পারছেন। সেখানে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বা স্নাতক/ডিগ্রী স্তরের কলেজে একজন প্রদর্শক (শিক্ষক) (বেতন কোড ১০) হয়েও কর্মজীবনে অভিজ্ঞতা ও উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেও প্রদর্শক পদ/পদবীরা পরবর্তী প্রভাষক (বেতন কোড ৯) পদবীতে যেতে পারছেনা।এজন্য বেসরকারি জনবল কাঠামোতে প্রদর্শক পদবী অভিজ্ঞতা বা উচ্চশিক্ষা অর্জন মাধ্যমে প্রভাষক পদবিতে বা প্রশাসনের উচ্চপদে যেতে পারে তার বিধিমালা/নির্দেশনা জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। তা না হলে প্রদর্শকদের সঙ্গে বৈষম্য বন্ধ হবে না। যা গণতান্ত্রীক রাষ্ট্রে কাম্য নয়।
সরকারি চাকুরিতে যেখানে বিভিন্ন পদে পদোন্নতি আছে। বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুলে সহকারী শিক্ষক (বেতন কোড ১০) উচ্চপদে পদবীতে যেতে পারে, সরকারী কলেজ গুলোতে প্রদর্শকগণ বিধিমোতাবেক প্রভাষক পদে পদোন্নতি পেয়ে থাকে। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রী কলেজে নিয়োগ প্রাপ্ত-কর্মরত প্রদর্শক পদবী শিক্ষক (প্রথম বেতন কোড ১০, তারপর চাকুরি জীবনে ১০ বছর পর বেতন কোড ৯, তারপর চাকুরি জীবনে ৬ বছর পর বেতন কোড ৮ প্রাপ্ত) গণরা পরবর্তী উচ্চপদ/পদবী/পদোন্নতি পেতে কোন বিধিমালা লেখা নেই। চাকুরি জীবনে প্রদর্শক পদবীরা প্রদর্শকদের পরবর্তী উচ্চপদে যেতে/পদোন্নতি পেতে বিধিমালা প্রণয়ন করা অতিপ্রয়োজন। তা হলে প্রদর্শকদের কর্মপৃহা বৃদ্ধি পাবে ও শিক্ষা ক্ষেত্রে একমাত্র প্রদর্শক পদবীদের পরবর্তী উচ্চপদ না পাবার বৈষম্য দূর হবে। কয়েকদশকে প্রদর্শক পদবীদের পদোন্নতি বা উচ্চপদে পদায়ন ও পরবর্তী পদ/পদবী না পাবার বিষয়টি কেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/শিক্ষক সংগঠন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) দৃষ্টি গোচর হয়নি? শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলের এ বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া ও যথাযথভাবে জনবল কাঠামোতে প্রদর্শকদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করে পরবর্তী ধাপ/উচ্চতর স্তর পদ/পদবী লিখে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।প্রদর্শক পদ শিক্ষক পদমর্যাদা হলেও সরকারি কলেজ গুলোতে কর্মরতগণ পদোন্নতি পেলেও বেসরকারি কলেজ গুলোতে কর্মরতদের কোন পদোন্নতি নেই! এ দ্বৈত নীতি ও বৈষম্যের অবসান হওয়া দরকার। অবিলম্বে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো সংশোধন ও সংযোজন করে যথাযথভাবে প্রদর্শকদের পদোন্নতি ও অধিকার অন্তর্ভুক্ত করা।(মতামত)
লেখক পরিচিতি :
মো. আব্দুস সালাম (শিপলু)ডিপ্লোমা (কম্পিউটার), এমএসএস (এশিয়ান ইউনিভার্সিটি)প্রদর্শক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি)জয়লাজুয়ান ডিগ্রী কলেজ, শেরপুর, বগুড়া, বাংলাদেশ।