জিয়াউর রহমান বেলাল॥ গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত একটানা প্রবল বর্ষণে এবং গত পরশু শুক্রবার ও গতকাল শনিবার থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হওয়ায় চাঁদপুর শহরের অনেক নিম্নাঞ্চলের ন্যায় চাঁদপুর সরকারি কলেজ মসজিদেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। প্রচুর বৃষ্টির পানিতে মসজিদের ফ্লোর ৩ ফুট নিমজ্জিত হয়। এর ফলে বৃহস্পতিবার কয়েকশ’ ধর্মপ্রাণ মুসল্লির এশা’ এবং তারাবির নামাজ আদায়ে মারাত্মক বিঘœ ঘটে। তথাপিও নামাজরত মুসল্লিরা বৃষ্টির পানিতে ভিজে কোনোরকমে এশা’ এবং তারাবির নামাজ আদায় করতে সক্ষম হন। বর্তমানে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত আযান হলেও মসজিদের ফ্লোর ৩ ফুট বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে থাকায় মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং পবিত্র রমজান মাসের তারাবির নামাজ ও জুমা’র নামাজ আদায় করা সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। তবে বিশেষ ব্যবস্থায় চাঁদপুর সরকারি কলেজ মসজিদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুমা’ এবং তারাবির নামাজ মুসল্লিরা নিকটবর্তী বিপনীবাগস্থ পৌর সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় অবস্থিত পার্টি হাউজে আদায় করছেন। গত শুক্রবার সকালে চাঁদপুর সরকারি কলেজ মসজিদের মাইকযোগে মসজিদের ভিতরে বৃষ্টির পানি উঠার কারণে বিপণীবাগ পার্টি হাউজে জুমা’র নামাজ, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং তারাবির নামাজ আদায় করা হবে মর্মে ঘোষণা দেয়া হয়। সে অনুযায়ী চাঁদপুর সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম মাওলানা মো: নিজামুল হকের ইমামতিতে পার্টি হাউজে বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসল্লি জুমা’র নামাজ আদায় করেন।
জানা যায়, চাঁদপুর শহরের নাজির পাড়া নিবাসী মরহুম মো: খলিলুর রহমান নাজির এবং মরহুম মো: সুলতান বক্স দারোগার যৌথভাবে দানকৃত সম্পত্তিতে নাজির পাড়া মসজিদটি আজ থেকে প্রায় ৭০/৮০ বছর পূর্বে গড়ে উঠে। যা পরবর্তীতে ‘চুন্নু মিয়ার মসজিদ’ নামে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। এককালে পুকুরের পানির ওপর প্রথমে বাঁশ ও কাঠের মাচা দিয়ে নির্মিত মসজিদটি কালের পরিক্রমায় তথা ধীরে ধীরে এলাকাবাসীর সাহায্য-সহযোগিতার দানে একতলা মসজিদ হিসেবে রূপান্তরিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে মসজিদটিকে আধুনিকীকরণ এবং ব্যাপক উন্নয়নের জন্য ‘চাঁদপুর সরকারি কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ’ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত স্বাপেক্ষে সম্পূর্ণভাবে সরকারিকরণ করা হয়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সুদীর্ঘ ৩০ বছর যাবত প্রতি মাসে কলেজের কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রীর কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করা হলেও আজ পর্যন্ত মসজিদের আধুনিকীকরণ এবং সামান্য উন্নয়নও এতটুকুও করা হয়নি। অথচ মাত্র ১০/১৫ বছর পূর্বে চাঁদপুর শহরে নির্মিত অনেক মসজিদ বহুতল মসজিদ হিসেবে আধুনিক উন্নয়নের ছোঁয়ায় স্থাপিত হয়ে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করার অসংখ্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। উপরন্তু বেশ কয়েক বছর যাবত চাঁদপুর সরকারি কলেজ মসজিদের পুরনো ছাদের বিভিন্নস্থানে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়ে দেবে গেছে এবং মসজিদের ভিতরে বেশ কয়েকস্থানের ভিমে ও দেয়ালে বিশাল বিশাল ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। এহেন পরিস্থিতির পরও শতভাগ মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন শত শত ধর্মপ্রাণ মুসল্লি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়া সামান্য বৃষ্টি হলেই ছাদ চুইয়ে মসজিদের বিভিন্নস্থান দিয়ে মসজিদের ভিতরে পানি পড়ে এবং প্রতিবছরই বর্ষার সময় ব্যাপক বৃষ্টিপাতের দরুণ মসজিদের ফ্লোর ২/৩ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। এসময় মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত আযান হলেও শত শত ধর্মপ্রাণ মুসল্লির মসজিদে নামাজ আদায় করা আদৌ সম্ভব হয় না। তাই মুসল্লিরা অন্য মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে বাধ্য হন। এহেন পরিস্থিতির কারণে গত বছরও পবিত্র রমজান মাসের কয়েকদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জুমা’র নামাজ এবং তারাবির নামাজ বিপণীবাগ পৌর সুপার মার্কেটের বারান্দায় আদায় করতে হয়েছে। বিপণীবাগ পার্টি হাউজের স্বত্ত্বাধিকারী বিশিষ্ট ধর্মানুরাগী নাজির পাড়া নিবাসী ডা. মো: ছফিউল্যাহ্ এ প্রতিবেদককে জানান, ‘যতদিন পর্যন্ত চাঁদপুর সরকারি কলেজ মসজিদ থেকে বৃষ্টির পানি না সরবে ততদিন পর্যন্ত পার্টি হাউজে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং তারাবির নামাজ ও জুমা’র নামাজ আদায় করা হবে। এ জন্য ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা আমার প্রতিষ্ঠানের বিদ্য্যু ও পানি ফ্রি-ভাবে ব্যবহার করতে পারবে।’
এছাড়া প্রতি জুমা’র নামাজে মসজিদে স্থান সংকুলানের অভাবে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায় কয়েকশ’ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি বিপণীবাগ বাজার এবং নাজির পাড়ার রাস্তার ওপর ধূলা-বালির মধ্যে রোদে পুড়ে আবার কখনো বৃষ্টির পানিতে ভিজে লোধ-কাদার মধ্যে নামাজ আদায় করতে বাধ্য হন। সেইসাথে গোটা মসজিদের ছাদ বেশ কয়েকবছর যাবত মারাত্মকভাবে ড্যাম হয়ে আছে। যে-কোনো মুহুর্তে মসজিদের জরাজীর্ণ বিশাল ছাদ ধ্বসে পড়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটার জোর আশংকা রয়েছে। এতে অকালে শত শত লোকের প্রাণহানীরও আশংকা রয়েছে। এহেন অমানবিক অবস্থার কথা আন্তরিকভাবে চিন্তা করে নাজির পাড়ার পুরনো ও স্থায়ী অধিবাসী এবং চাঁদপুর জেলার সিনিয়র সাংবাদিক জিয়াউর রহমান বেলাল স্বপ্রণোদিত হয়ে মহান আল্লাহ্’র ঘর পবিত্র মসজিদের খেদমতের উদ্দেশ্যে প্রায় ৪ বছর পূর্বে চাঁদপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মিহির লাল সাহা ও কলেজের শিক্ষক পরিচালনা কমিটির সাহায্য-সহযোগিতায় শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক এবং শিক্ষামন্ত্রণালয়ে ব্যাপক অফিসিয়াল চেষ্টা-তদ্বিরের মাধ্যমে ‘চাঁদপুর সরকারি কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ’ সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের লিখিত অনুমতি লাভ করেন। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে সরকারিভাবে একাধিক সরকারি বিভাগের মাধ্যমে ব্যাপক মাপ-ঝোঁক, পাঁচ তলা বিশিষ্ট মসজিদ ভবনের ড্রয়িং-ডিজাইন, ব্যয়ের পরিমাণ নির্ধারণ এবং সয়েল টেস্ট সম্পন্ন করা হয়। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, চাঁদপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মিহির লাল সাহা ও কলেজের শিক্ষক পরিচালনা কমিটি এবং সাংবাদিক জিয়াউর রহমান বেলালের ব্যাপক চেষ্টা-তদ্বিরে চাঁদপুরের বিদায়ী জেলা প্রশাসক মো: ইসমাইল হোসেন প্রায় ৪ বছর পূর্বে জেলা প্রশাসকের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত চাঁদপুর জেলার উন্নয়ন সভায় মসজিদের ভয়াবহ দুরাবস্থার কথা তুলে ধরা স্বাপেক্ষে জরুরীভাবে মসজিদের সংস্কার ও উন্নয়ন করা একান্ত প্রয়োজন মর্মে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে মাসিক রেজুলেশনে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। পরবর্তীতে চাঁদপুর সরকারি কলেজ মসজিদের সংস্কার এবং উন্নয়নের কাজ অফিসিয়ালী অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়েও চূড়ান্ত নক্শা অনুমোদনের প্রয়োজনীয় বিষয়টি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের জনৈক কর্মচারীর (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) লং টার্ম বা দীর্ঘ ঘুষ বাণিজ্যের কারণে প্রায় একবছর যাবত ঝুলে আছে। যা শুধু ধর্মীয়ভাবে দু:খজনকই নয় অমানবিকও বটে। এদিকে চাঁদপুর সরকারি কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. এ. এস. এম দেলওয়ার হোসেন এবং কলেজের শিক্ষক পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ওয়াহেদুজ্জামান মসজিদের সংস্কার ও উন্নয়নের বিষয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান। বর্তমান অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর মসজিদের বিষয়টি আগাবে বলে তাঁরা বিশেষভাবে আশাবাদী।
শিরোনাম:
বুধবার , ১৪ মে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৩১ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।