মিজান লিটন=
চাঁদপুর পৌরসভার ১০ ও ১১ নং ওয়ার্ডের সংমিশ্রণস্থল পৌর ট্রাকঘাট এলাকা। এটি মূলতঃ মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদ জাবেদের নামে নামকরণ করা হয়েছে শহীদ জাবেদ সড়ক। পূর্ব নাম ছিলো বাগাদী সড়ক। শহরের এক সময়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি ব্যস্ততম সড়ক বলেই খ্যাত ছিলো। পৌর এলাকার ওয়ারলেছ এলাকা দিয়ে চাঁদপুর-রায়পুর সড়কের চাঁদপুর সেতু নির্মিত হওয়ার পরই এ সড়কটি অনেকটাই নিরব সড়কে পরিণত হয়। কিন্তু সড়কটি ঘিরে অঘোষিত শিল্পাঞ্চল এলাকা হিসেবে খ্যাত ইচলী ও ঢালীঘাট নামক স্থানে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। পৌর এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক শিল্প বা বড় ধরনের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বর্তমানে চলমান রয়েছে ইচলী ও ঢালীঘাট এলাকায়। পাশাপাশি আরো প্রায় অর্ধশতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান চারুর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এমনকি লক্ষাধিক লোকের বসবাসও এই সড়কের আশেপাশে। তাছাড়া প্রতিদিন হাজার হাজার জনগণের যাতায়াতের একমাত্র সড়ক এটি।
ডাকাতিয়া নদীর তীরবর্তী এ সড়কটির পাশে নদীর চর পড়ে যাওয়ায় বিশাল খালি অংশে দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নদীর পাড়কে দখল করে ব্যবসা করে আসছে। ট্রাকঘাট এলাকাটি এমনিতেই ব্যস্ততম এলাকা। প্রতিদিন প্রায় শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাকের আসা এবং যাওয়ার ফলে আশেপাশের বসবাসরত জনগণ সেখানে বসবাস করা অনেকটাই দূরুহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার শহরের প্রায় ১৫ থেকে ২০টি স’ মিল এ সড়কে অবস্থিত। যার ফলে প্রতিনিয়ত গাছ স’মিলগুলোতে কাটার ফলে গাছের গুড়ি জনগণের বা পথচারীদের যাতায়াতে বিঘœ ঘটায়। ভুরি ভুরি অভিযোগ সত্ত্বেও স’মিলগুলো তাদের এ ব্যবসা অব্যাহত রেখে চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ দিয়ে কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় আশেপাশের বসবাসরত জনগণ ও পথচারীরা এখন অনেকটাই নীরব দর্শক হয়ে তা সহ্য করে যাচ্ছেন।
আবার ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ নদীর তীরবর্তী এ সড়কটির ট্রাকঘাট এলাকা থেকে শুরু করে একেবারে হযরত শাহেনশাহ (রহ.) মাজার শরীফ পর্যন্ত কিছু ব্যবসায়ী নদীর তীর অবৈধভাবে দখল করে ইট, বালি, কংক্রিট ও পাথরের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রথমে গুটি কয়েক ব্যবসায়ী শুরু করলেও এখন প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী এ ব্যবসাটি প্রসার ঘটিয়ে দুর্দণ্ড প্রতাপে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন নদীর পাড় দখল শেষে স্বয়ং মূল সড়ক দখলের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ওই সকল ব্যবসায়ীরা। আর এতে করে এ ধরনের ব্যবসার কারণে এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী কোমলমতি শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে পথচারী এবং ওই স্থানের আশেপাশে বসবাসরত জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বালু, কংক্রিটের গুড়ি আর স’ মিলের কাঠের গুড়ির কারণে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়সের মানুষের চোখের অকাল মৃত্যু হয়েছে তা হিসাব করা মুশকিল হবে।
অপরদিকে শুধু মানুষের অঙ্গহানি চোখ নয়, এ সড়কের আশেপাশের এলাকায় বসবাসরত জনগণের বাসাবাড়ি এখন আর বসবাস করার মতো উপযোগী নয়। তাছাড়া বালু, কংক্রিট, আর ইটের বহনকারী দানব ট্রাক্টরের যন্ত্রণা যে কত কষ্টের তা যারা ওই স্থানে বসবাস করে বা ওই সড়ক দিয়ে চলাফেরা করে তারাই বলতে পারবেন। আবার দৈত্য-দানব এই ট্রাক্টর অনেক মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে, অনেককে পঙ্গুও করেছে। অথচ এদের এ বেপরোয়া চালানোর কোনো বিচার আদৌ হয়নি।
এসব কারণে ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী স্কুল, কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, স্থানীয় এলাকাবাসী সহ চাঁদপুরের সুধীজন এ এলাকা থেকে উল্লেখিত ব্যবসাগুলো সরিয়ে অন্যত্র স্থানান্তরের বিষয়ে মানব বন্ধন, সভা-সমাবেশ, স্মারকলিপি পেশ ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করে। তারা এসব কর্মসূচি পালনকালে চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের সহযোগিতা চেয়ে বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও সর্বশেষ গত দু’বছর পূর্বে চাঁদপুর জেলা আইন-শৃঙ্খলা, উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় এ বিষয়টি সুধীজনদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত হলে সর্বসম্মতিক্রমে এ স্থান থেকে এ ব্যবসাগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত হয়। এবং পরিবেশ যেন নষ্ট না হয় এমন স্থানে ব্যবসাগুলো স্থানান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ওই সিদ্ধান্ত শুধু কাগজে-কলমের সমন্বয়ে লিখিত হয়ে ফাইলের চাপায় পিষ্ট হয়ে আছে। বাস্তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নেয়া শুরু করা মাত্রই কোনো অদৃশ্য শক্তির কারণে পদক্ষেপের পা পিছিয়ে পড়ে। এ পা এক ইঞ্চিও আর সামনে এগিয়ে আসেনি। বার বার আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় উত্থাপন হয় মুখের বুলিতে কিন্তু বাস্তবে কোনো কাজ আর হয়নি। পরবর্তীতে বর্তমান মহাজোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁদপুরে আগমন উপলক্ষে এ ব্যবসাগুলো উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হলেও তাও অজ্ঞাতশক্তির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ গত নভেম্বর মাসে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উল্লেখিত ব্যবসাগুলো অন্যত্র স্থানান্তরের বিষয়ে জেলা প্রশাসক নিজ নামে একটি নোটিশ জারি করেন। যা স্থানীয় পত্রপত্রিকাগুলোতেও প্রকাশিত হয়। উক্ত নোটিশে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হয়। আর এই নোটিশটি পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পর স্থানীয় জনগণ সহ চাঁদপুরের সুধীজন পত্রিকার মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের সাহসী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে অভিনন্দন জানান।
কিন্তু ভুক্তভোগী জনগণের পোড়া কপাল আর জোড়া লাগেনি। এটি সে অবস্থায়ই থেকে গেলো। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে চাঁদপুরের সচেতন সুধীজনসহ সকলের একটিই প্রশ্ন- নদীর তীর ও পৌরসভার মূল সড়ক অবৈধভাবে দখল করে বালি, ইট আর কংক্রিটের এ ব্যবসায়ীদের মূল শেকড় এতোই শক্ত যে, এটি কোনোমতেই মনে হয় যেন বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। আর স্থানীয় এলাকাবাসী ও যাতায়াতকারী পথচারীগণ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এরা যেনো ভিনদেশের নাগরিক প্রতিকার পাওয়ার কোনো অধিকার নেই। তাই সকলের প্রশ্ন, আদৌ এই স্থান থেকে জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী ব্যবসাগুলো স্থানান্তর হবে কি?
শিরোনাম:
রবিবার , ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ১৩ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।