চাঁদপুর নিউজ রিপোর্ট
রাতের অাঁধারে দোকানঘর দখলে নেয়ার পর তাতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদগঞ্জের কালিরবাজারে। এই দোকানঘরটিতে দীর্ঘ ক’বছর পানের ব্যবসা করে আসছিলেন জনৈক ব্যবসায়ী। দোকানঘর দখলের সময় দোকানের মালামাল সরিয়ে রাখা হয়েছে রাস্তায়। দোকানের ভেতরে ঝুলানো হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি। এই সম্পত্তি ফিরে পেতে দোকান মালিক এখন ঘুরছেন বিভিন্ন জনের দ্বারে দ্বারে। তবে দলীয় সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে রাতের অাঁধারে দোকানঘর দখলের বিষয়টি দলের ভাবমূতি ক্ষুণ্ন করা ছাড়া অন্য কিছু নয় বলে এলাকাবাসী মনে করছেন।
সরেজমিনে গেলে ওই বাজারের দোকানঘরটির ভাড়াটিয়া লেদু মিয়া মোল্লা (৬৫) জানান, গত রোববার তিনি প্রতিদিনকার ন্যায় দোকানে বেচাকেনা শেষে দোকান বন্ধ করে রাত সাড়ে ১০টায় বাড়ি যান। সকালে এসে দেখেন দোকানের চিহ্ন নেই। ঘরের ভেতর ঝুলছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। সামনে দুটি বাঁশ পুঁতে তাতে ঝুলানো হয়েছে একটি ডিজিটাল সাইনবোর্ড। এতে লেখা রয়েছে, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ১৪নং ইউনিয়ন কার্যালয়। লেদু মিয়া মোল্লা বলেন, এ দৃশ্য দেখে হতভম্ব হয়ে যাই। খুঁজতে গিয়ে দেখি বাজারের একটি গলির ওপর দোকানের মালামাল পান, সুপারি, তামাক পাতা, আসবাবপত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে। গতকাল বিকেলে দোকানী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, গত প্রায় ১৬ বছর যাবৎ এ ঘরে ব্যবসা করছেন তিনি। স্থানীয় দুর্গাপুর গ্রামের মৃত আজিজুর রহমান জমাদারের কাছ থেকে দোকানঘরটি ভাড়া নিয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পর তার দু’ ছেলে খোরশেদ আলম ও শরিফ জমাদারকে ভাড়া দিচ্ছেন। কয়েক মাস আগে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া নবায়ন করেছেন। দোকান হারিয়ে এখন তিনি বড় অসহায় হয়ে পড়েছেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে কথা হয় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি নান্টু পাটওয়ারী ও সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম সোহেলের সঙ্গে। এ সময় সোহেল খান বলেন, এখানে কিছু সরকারি খাস সম্পত্তি আছে। আওয়ামী লীগ ১৪নং ইউনিয়ন কার্যালয়ের জন্য লিজ প্রাপ্তির জন্য আমি নিজে গত ২৫ জুলাই উপজেলা ভূমি অফিসে আবেদন করেছি। সে মোতাবেক দলের পোলাপান দলীয় কার্যালয় স্থাপন করেছে। রাতের অন্ধকারে দোকান উচ্ছেদ ও ভূমি দখল বিধি সম্মত কি না এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান তিনি। লিজ পেয়েছেন কি না এমন প্রশ্নে বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অবশ্যই আমি লীজ পাবেন বলে মনে করি।
দোকান মালিক শরিফ জমাদার (৫০) বলেন, আমার পৈত্রিক সম্পত্তিতে কোনো খাস ভূমি নেই। আমাদের সাবকবালা দলিল, জমা খারিজ খতিয়ান, বিএস খতিয়ান ও খাজনা দাখিলসহ যাবতীয় কাগজপত্র রয়েছে। প্রায় ৪০ বছর যাবৎ বংশ পরম্পরায় এ সম্পত্তি আমরা ভোগ দখল করে আসছি। এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, নির্বাহী অফিসার ও এসি (ল্যান্ড) কেও লিখিতভাবে অবহিত করেছি।
এ ব্যাপরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগেরই উপজেলা পর্যায়ের এক নেতা বলেছেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। এতে করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান লতিফ পণ্ডিত বলেন, যে স্থানে দোকানঘরটি রয়েছে এই জায়গার কিছু অংশ সরকারি। তবে রাতের অাঁধারে কে বা কারা তা দখলে নিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নামে সাইন বোর্ড ঝুলিয়েছে তা জানা নেই।
এ ব্যাপারে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, এমন একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তবে কেউ আবেদন করেই কোনো ভূমির দখল নিতে পারে না। সেখানে কোনো খাস জমি আছে কিনা তা সার্ভে করে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, কোনো পেরীফেরী বাজারে দোকান ঘর ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে লিজ দেয়ার বিধান নেই।