ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর): ফরিদগঞ্জ উপজেলার ষোলদানা গ্রামের বেগ বাড়ীর মৃত হাফেজ আবদুল লতিফের ছেলে মো. আবুল কালাম বেগ। নির্দিষ্ট কোন পেশা নেই এই ব্যাক্তির। দুই ছেলে প্রবাসে দুই ছেলে দেশেই কাজ করেন। বিদেশে থাকা দুই ছেলের বরাত দিয়ে বিদেশে লোক পাঠাবেন বলে মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে প্রতারণা করেন এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। আবার প্রতারণা করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে তার নিজ বাড়ীর মো. আবদুল গণির কাছ থেকে সম্পত্তি বিক্রি করবেন বলে ৩শ’ টাকার স্ট্যাম্পে ৫ লাখ টাকা বায়না করে প্রতারণা, থানায় মিথ্যা অভিযোগসহ বড় ধরণের অপরাধমূলক কাজ শুরু করেছেন। স্থানীয় শালিশ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে করছেন খারাপ আচরণ। মূলত তার খুঁটির জোর কোথায়! এমন প্রশ্ন ভুক্তভোগীদের।
আবুল কালামের বিরুদ্ধে চাঁদপুর পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ, সম্পত্তি বিক্রিয়কারী বায়না দলিলের সাক্ষী, স্থানীয় লোকজন ও ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, স্থানীয় লোকজনের কাছে আবুল কালাম বেগ প্রতারক হিসেবে পরিচিত। কারণ তিনি তার ছেলেদের মাধ্যমে বিদেশে পাঠাবেন বলে উপজেলার আমিরা বাজারের রাব্বানি ও আস্টা বাজারের মহসিন পাটওয়ারীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ওয়াদা রক্ষা করতে পারেননি। এভাবে আরো মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফেরৎ না দিতে পেরে বেকায়দায় পড়েন। নিজেকে রক্ষা করতে তার নিজ বাড়ীর সম্পর্কে ভাতিজা মো. আবদুল গণির কাছ থেকে ১৮ শতাংশ জায়গা বিক্রি করবেন বলে ৩শ’ টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প বায়না দলিল করে নগদ ৫ লাখ টাকা নেন। ওই টাকা দিয়ে কিছুটা ঋন পরিশোধ করে আবদুল গণির সাথে টালবাহানা শুরু করেন।
এই বিষয়ে প্রতারণার শিকার আবদুল গণি বলেন, আবুল কারাম বেগ আমার বাড়ীর সম্পর্কীয় চাচা। তিনি বিপদে পড়েছেন বলে সম্পত্তি বিক্রি করবেন বলে আমাকে জানান। একদিনের মধ্যে আমি তাকে ৫ লাখ টাকা স্টাম্পে বায়না দলিল করে দেই। কাগজপত্রে কিছু ঘাটতি আছে এমন সমস্যার কথা উল্লেখ করে জায়গায় দিতে দেরি করেন তিনি। পরবর্তীতে ৩ মাস পরে পূর্ন টাকা দিয়ে যায়গা আমাদের নামে রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়ার কথা বলে আশ্বাস দেয়। ৩ মাস পর জায়গা আমাদের নামে রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়ার কথা বললে তখন তিনি আরও দুই মাস সময় চান। দুই মাস সময়ের জন্য অনেক কাকুতি-মিনতি করে। তখন আমরা বাড়ির কাকা এবং মানবিক দিক বিবেচনা করে আরো ২ মাস সময় দেই। পরবর্তীতে ৫ মাস পার হওয়ার পর আমরা উনার কাছে জায়গা চাইলে উনি আমাদেরকে জায়গা না দেওয়ার কথা বলে। জায়গা কেন দিবে না বিষয়টা কালাম বেগের কাছে জানতে চাইলে উনি আমাদেরকে অনেক হুমকি ধামকি দেয় এবং আমাদের বায়নার টাকা না দেওয়ার কথা বলে। তখন আমরা নিরুপায় হয়ে চাঁদপুর পুলিশ সুপারের বরাবর আবেদন করি বিষয়টা তদন্ত করার জন্য। তখন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার বিষয়টি তদন্তের জন্য বাড়িতে ডিবি পুলিশ পাঠায়। ডিবি পুলিশ বাড়িতে এসে তদন্ত করার এক পর্যায়ে কালাম বেগ ডিবি পুলিশের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে যায় এবং খারাপ আচরণ করে। তখন ডিবি পুলিশ চলে যায়।
গনি আরো বলেন, ওই দিন ডিবি পুলিশ যাওয়ার পরে কালাম বেগ ও তার ছেলে সাফায়েত বেগ এবং তার মেয়ে মনি আক্তার আমাদেরকে নির্যাতন করার জন্য এগিয়ে আসে। তখন আমরা নিরুপায় হয়ে আত্মরক্ষার জন্য আমাদের নিজ ঘরে অবস্থান করি। পরেরদিন কালাম বেগের দ্বিতীয় ছেলে শফিউল। আমাদের ঘরে এসে আমার বাবা-মা ও ভাবিকে আক্রমণ চেষ্টা চালায়। অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন এবং পরবর্তীতে তারা আমাদের নামে মিথ্যা মামলা ও নিউজ করবে বলে হুমকি দেয়। পরবর্তীতে কালাম বেগ গণমাধ্যমে একটি মিথ্যা অপপ্রচার করে। ওই সংবাদের তথ্যগুলো সঠিক নয়। মূলত কালাম বেগ তার অপরাধ আড়াল করার জন্য সাংবাদিকদেরকে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করেন। আমি নিজ পেশাগত কাজে ঢাকায় থাকি সংবাদে উল্লেখিত ঘটনার সাথে আমি কিংবা আমার পরিবারের কেউই জড়িত নেই।
কালাম বেগের বায়না দলিলের সাক্ষী খলিল এই প্রতিনিধিকে জানান, আমার উপস্থিতিতে কালাম বেগকে ১৮শতাংশ জমি বিক্রি করবেন বলে বায়না দলিলের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা দেন। কিন্তু তিনি টাকা নিয়ে তার আদম ব্যবসার মক্কেলদের টাকা পরিশোধ করেন। পরবর্তীতে সম্পত্তি লিখে দেয়ার জন্য তার সাথে কয়েকবার শালিশ বৈঠক করেও কোন সুরাহ করতে পারিনি। তিনি পুলিশের সাথেও খারাপ আচরণ করেছেন। মূলত তিনি এলাকায় এই ধরণের প্রতারণা ও অপরাধমূলক কাজের সাথে দীর্ঘদিন জড়িত। তার কঠিন শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
এদিকে বক্তব্যের জন্য আবুল কালাম বেগ এর ব্যাক্তিগত মোবাইল নম্বরে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হলে মোবাইল বন্ধটি বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি আবদুল গনি গংদের বিরুদ্ধে থানায় যে অভিযোগ করেছেন তার কোন তদন্ত কিংবা হদিস পাওয়া যায়নি।
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট/চাঁদপুরনিউজ/এমএমএ/