আনিছুর রহমান সুজন:
১৯৭১ সালের ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের তরতাজা স্মৃতি এখনো হাতড়িয়ে বেড়ায় সেই বীরসেনানী মুক্তিযোদ্ধারা। অনেকেই নতুন প্রজন্মের কাছে বলতে পারছেন না স্থান কালের অভবে। এসব না বলা কথা নিয়ে বিজয়ের মাসে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১০নং গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের পুর্ব হাসা গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা গাজী মোহাম্মদ সিরাজের সাক্ষাৎকার ।
নাম গাজী মোহাম্মদ সিরাজ । জন্ম ১৯৪৭ সালের ১০ মে ফরিদগঞ্জ উপজেলার পূর্ব হাসা গাজী বাড়ীতে। পিতা মৃত লনি মিয়া গাজী , মাতা মৃত- আফিয়া খাতুন। স্বাধীনতা পুর্ব থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত ঢাকার ওই সময়ের রমনা থানা আওয়ামীলীগের সহসভাপতিসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিনের গ্রীণরোড পুর্ব ইউনিট আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন।
১৫ বছর বয়সেই ঢাকায় চলে যান। ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলে শ্রমিক হিসেবে চাকুরী নেন। চাকুরির সাথে সাথে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা হিসেবে জাতীয় শ্রমিক লীগের কর্মকান্ডের সাথে নিজে সম্পৃক্ত হন। গাজী সিরাজ বলেন, সর্বশেষ বঙ্গবন্ধুর সাথে আমাদের বৈঠক হয় ৩রা মার্চ। ২৫শে মার্চ সেই কালো রাতের পর পরদিন ২৬শে মার্চ সকালে হোটেল ইন্টার কন্টিন্টোল থেকে বেরিয়ে আমি মোটর সাইকেল যোগে চলে যাই আগরতলা। সেখান থেকে আমি দেশে ফিরে আসি এক মাস পর। এসে আমার গ্রামের বাড়ীতে আমার মা বাবাকে নিয়ে একটি মিলাদ মাহফিল করে আমি যুদ্ধে নেমে যাই। পাশাপাশি এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে কাজ শুরু করি।
যখন শুনতে পাই পাকহানাদার বাহিনী পাশ্ববর্তী চরভাগল গ্রামের জাভেদ আলী মোক্তার বাড়ির ১৩জন লোককে হত্যা করে । এরপরে যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন আমার মামা শহীদ আঃ রশিদ হানিফ।
সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছিল ভাটিয়ালপুর ও ধানুয়ায়। মাহবুব রহমান সরকারের নেতৃত্বে আমিসহ সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেয় খোরশেদ আলম, আলী হোসেন ভূঁইয়া, সোলেমান, সফিউল্যা সরকার সহ অন্তত ৫০জন সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করি। সেখানে আমাদের তোপের মুখে পাক হানাদার বাহিনী পিছু হটতে শুরু করে।
এছাড়া আমি যুদ্ধে অংশ নেই নীলকমল, হাইমচর, চাঁদপুর সদর, ধানুয়া, ভাটিয়ালপুর।শেষে স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা জয় লাভ করি, ২৫শে নভেম্বর ফরিদগঞ্জ শত্রুমুক্ত হয়। তারপর আমি ও আমার কিছু সহকারীরা পার্শ্ববর্তী উপজেলা ও জেলার আশপাশে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিলাম। আমি গাজী সিরাজ ঢাকায় যাওয়ার চেষ্টা করি। পরে ১৪ই ডিসেম্বর রাতে একটি ছোট ট্রলার নিয়ে আমি ও আমার সাথে আরো কয়েকজন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করি। ১৫ই ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকায় পৌঁছে যাই। ওই দিনই হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে অবস্থানরত মিত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল অরোরার সাথে সাক্ষাৎ করার সোভাগ্য হয়েছিল। ১৬ই ডিসেম্বর ভোরে আমি হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল পাকিস্তানি পতাকা খুলে আমি প্রথম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করি। আবার আমার কর্ম জীবন শুরু করি হোটেল ইন্টার কন্টিনে।
আমি গাজী সিরাজ রমনা থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলাম ১৯৮৪ইং সাল পর্যন্ত। দীর্ঘ সময় হোটেল ইন্টার কন্টিন এর শ্রমিকলীগের সভাপতি ছিলাম। বর্তমানে জেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে রয়েছি ও কিছু সামাজিক কাজ করার চেষ্টা করছি। আমার চাকুরীর ৫০% টাকা আমি রাজনীতিতে ও মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেছি। আমার এলাকায় পূর্ব হাসা গাজী বাড়ীতে একটি মসজিদ ও একটি মক্তব চালু করিয়াছি ও একটি কবরস্থান প্রতিষ্ঠা করেছি আমার টাকা দিয়ে।
আমি আওয়ামীলীগ করার কারণে ২০০২ সনের ১৩ই মে হয় হোটেল ইন্টার কন্টিনেটটাল থেকে আমাকে চাকুরি চ্যুত করা।
প্রশ্ন ঃ- মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আপনার স্বপ্ন কি ?
উত্তর ঃ- আমি মুক্তিযোদ্ধাদের একজন সংগঠক হিসেবে আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসী ও আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে শ্রদ্ধাভরা হৃদয়ে বলতে চাই, এই দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যেন দেশের কোন মানুষ ব্যাঙ্গ না করে ও যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দেখে যেতে চাই। আমার দাবী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার পাশাপাশি সারা দেশে রাজাকারের তালিকা হওয়া দরকার। #
শিরোনাম:
সোমবার , ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৫ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।