প্রতিনিধি
মনসুর এখন ফরিদগঞ্জের সেকদি গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে এক আতঙ্কের নাম। পরিবারে কলহ সৃষ্টির মূল হোতা মনসুর এখন গ্রামের পাড়া-মহল্লায় ছড়িয়ে দিচ্ছে সর্বনাশা মাদক। মনসুর তথা তার পরিবারের কাছে সেকদি গ্রামের বহু পরিবার এখন জিম্মি হয়ে পড়েছে। এ পরিবারটি প্রতিনিয়ত নানাভাবে এলাকার নিরীহ গ্রামবাসীকে হয়রানি করছে এমন ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে। মনসুরের বিরুদ্ধে ফরিদগঞ্জ থানায় একাধিক মামলা থাকলেও পুলিশের নীরব ভূমিকায় প্রশ্ন তুলেছে এলাকাবাসী। আর সেকদি গ্রামের মানুষ ফুঁসে উঠেছে মনসুরের পরিবারের বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে সেকদি গ্রামের লোকজন মনসুর ও তার পরিবারের বিচার দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল করে।
কে এই মনসুর : পুরো নাম মোঃ মনসুর বেপারী (২৫)। ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১ নম্বর পশ্চিম বালিথুবা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সেকদি গ্রামের হাজী মোঃ লোকমান হোসেনের ছেলে। স্কুলের গণ্ডি পেরুতে পারেনি মনসুর। ছোটবেলা থেকে বখাটেপনা করতে করতে এখন সমাজের এক কীটে পরিণত হয়েছে সে। চরিত্রহীন মনসুরের অসামাজিক কর্মকাণ্ড মারাত্মক প্রভাব ফেলছে বিভিন্ন পরিবারে। যে কারণে অনেক সংসারও ভেঙ্গেছে। তার এ কর্মকাণ্ড ও নির্যাতনের কারণে বিয়ে করার পর একবছরও সংসার টিকে নি।
মনসুরের বাবা লোকমান হোসেনের বয়স পঞ্চান্ন কি ষাট। লোকমানের পরিবারকে বংশ পরম্পরায় দুষ্ট পরিবার হিসেবে চেনে গ্রামবাসী। এলাকায় বিশৃঙ্খলা করা তাদের বংশগত কাজ। পূর্ব পুরুষদের অপকর্মের রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন নতুন রেকর্ড করছে মনসুর ও তার পরিবার। মনসুরের বাবা লোকমান হোসেন, ভাই অপু ও তাদের চাচা শাহাদাত হোসেন ওই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে বিভিন্ন অপকর্ম চালাচ্ছে। যদিও নেপথ্যে তাদের সহযোগিতা করেন লোকমানের প্রবাসী আরেক ভাই ইব্রাহিম হোসেন।
মামলার এজাহার ও বিভিন্ন সূত্রসহ সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, স্থানীয় সুমন মেম্বারের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় মনসুর। এ ঘটনায় থানায় মামলা চলমান রয়েছে। মামলার নাম্বার ১০৩/১৪। একই গ্রামের মহসীন বেপারীর স্ত্রী রেহানা আক্তারকে মারধরের ঘটনায়ও একটি মামলা রয়েছে মনসুরের বিরুদ্ধে। মামলা নং ৪৭৯/১১। শুধু তাই নয়, মনসুর এতই হিংস্র হয়েছে যে, বাবা লোকমান হোসেনও তার বিরুদ্ধে মামলা করে থানায় এবং সে মামলায় দীর্ঘদিন জেলও খেটেছে মনসুর। মামলা নং ৫৪৫/১০। এছাড়া স্থানীয় নূর মোহাম্মদ নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা করার চেষ্টা চালায়। সে মামলাটিও চলমান রয়েছে। যার নং ২১/১৩। এছাড়াও ফরিদগঞ্জ থানা ও চাঁদপুর আদালতে বহু মামলার আসামী এ মনসুর।
সেকদি গ্রামের হাজী আবুল বাশার। তিনি দীর্ঘ তিন দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যে ছিলেন। এখন তার একমাত্র ছেলে ওমর ফারুক হেলালও বাবার মতো প্রবাসে জীবনযাপন করছেন। আবুল বাশার জানান, তিনি দীর্ঘকাল প্রবাসে থাকায় গ্রামের বাড়িতে বেশ কিছু সম্পদ ক্রয় করেন। দেশে ফিরে তৈরি করেন তিন তলা বিশিষ্ট একটি দালান। আর এই সম্পদের ওপর শ্যেনদৃষ্টি পড়ে প্রতিবেশী লোকমান হোসেন, তার ছেলে মুনসুর, অপু ও তাদের চাচা শাহাদাত হোসেনের। সম্প্রতি ছেলে হেলাল দেশে ফিরলে বৃদ্ধ আবুল বাশার ও তার ছেলের নামে ডাকযোগে কাফনের কাপড় ও একটি ধারালো দা বাড়িতে পাঠায় মনসুর। শুধু তাই নয়, তাদের বাপ-ছেলেকে একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করে মনসুরের সাঙ্গপাঙ্গরা। আবুল বাশার বলেন, এ সব ঘটনায় ফরিদগঞ্জ থানায় একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু আদালত থেকে সন্ত্রাসীরা জামিনে মুক্ত হয়ে ফের সন্ত্রাসী কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এলাকার ইউপি সদস্য সুমন গাজী বলেন, লোকমান ও শাহাদাত আর তাদের ছেলের বিচার করতে গিয়ে তারা আমার ওপরও হামলা করে। তারা শুধু সন্ত্রাসীই নয়, এলাকায় মাদক ব্যবসা করে থাকে। গ্রামের প্রবাসী শুক্কুর আলীর স্ত্রী রাবেয়া বেগম বলেন, গত মাসে লোকমানের ছেলে মনসুর আমার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এই বিষয়ে আমি থানায় মামলা দিয়েছি। আঙ্কুরের নেছা নামে আরেক বৃদ্ধা বলেন, আমাদের গ্রামের নাকমুখ কেটে দিয়েছে লোকমান-শাহাদাত পরিবার। আবুল বাশারের স্ত্রী মাহফুজা বেগম বলেন, সন্ত্রাসীদের এতোই দাপট যে, তারা এখন আমাদেরকে ভিটেবাড়ি থেকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা করছে। গ্রামের অনেকেই ভয়ে ভয়ে বলেন, শুধু এমন পরিবারই নয়, আমরা এখন ভীত সন্ত্রস্ত। কারণ, যে কোনো সময় ওরা আমাদের ওপরও ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। এ ব্যাপারে লোকমানের স্ত্রী খুকি বেগম বলেন, আমার ভাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, কেউ পারলে কিছু করে দেখান। তবে স্বামী ও ছেলেদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
এ ব্যাপারে কথা বলতে মনসুরদের বাড়িতে গিয়ে তার মা খুকি বেগমকে ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায় নি। তিনি বলেন, আমার ভাই ফরিদগঞ্জের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, কেউ পারলে কিছু করে দেখান। তবে স্বামী ও ছেলেদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তিনি মিথ্যা বলে দাবি করেন। এছাড়া মনসুরের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে নিজের পরিচয় গোপন রেখে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
মনসুর ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ফরিদগঞ্জ থানায় একাধিক বিভিন্ন মামলা রয়েছে বলে স্বীকার করেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা ওই পরিবারের বিভিন্ন মামলার তদন্ত কর্মকতা উপ-পরিদর্শক মোঃ ইব্রাহিম।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফর বলেন, ওই এলাকায় অনেকগুলো ঘটনা রয়েছে। মনসুর প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং সংশ্লিষ্ট থানাকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।