মো. শিমুল হাছান
এককালের খর¯্রােতা ডাকাতিয়া নদী এখন মৃত প্রায়। নদীতে নেই জোয়ার-ভাটার উত্তাল ঢেউ। নির্বোধ মানুষের অবৈধ দখল আর দূষনে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে ডাকাতিয়া নদী। নদী রক্ষায় বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টরা ঐশি^রিক নানা বাণী শোনালেও এখন পর্যন্ত কার্যত কোন উদ্যোগ নিচ্ছেনা। এমনো দেখা যাচ্ছে যাদের কাঁধে নদী রক্ষার দায়িত্ব তারাই নদী ভরাট করে চলেছে।
নদীর বিভিন্ন স্থানে কতিপয় ব্যক্তি বাঁধ সৃষ্টি করে পানির স্বাভাবিক গতিকে রুদ্ধ করে দিচ্ছে। সাপের মত এঁকে-বেঁকে বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদীটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার প্রায় সবগুলো ইউনিয়নকে মায়ের মমতায় জড়িয়ে ছিলো। এক সময় এ উপজেলার অন্যতম প্রধান যাতায়াত ব্যবস্থা ছিলো এ নদী। ব্যবসায়ীদের একমাত্র ভরসা ছিলো ডাকাতিয়া। আজ সেই ভরসায় নদীকে ভুলতে বসেছি। একটু একটু করে নষ্ট করছি তার নাব্যতা, দখল চলছে তার ভূমি। জনগন আর প্রশাসনের অবহেলায় ডাকাতিয়া হারিয়ে ফেলছে তার অতিত ঐহিত্য। নদীটির অধিকাংশ জায়গা জুড়ে দখল করে আছে কচুরিপানা।
উপজেলার সচেতন নাগরিকরা মনে করে প্রশাসন ইচ্ছে করলে নদী দখল ও দূষণ রোধ করে সুস্থ নদীর তীরে সুস্থ নগর গড়ে তুলে এক আধুনিক ফরিদগঞ্জ উপহার দেওয়া যায়। তাঁরা সীমানা জরিপ করে ডাকাতিয়া নদী দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।
সময়ের পরিক্রমায় ডাকাতিয়া নদী নানা সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে সংকটজনক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। বর্তমানে ডাকাতিয়া নদীটি সেচপ্রকল্পের অংশে পড়ায় পানি সীমিতকরণের আওতায় পড়ে এমনিতেই ক্ষীণ হয়ে পড়ছে। অপরদিকে কিছু অপরিণামদর্শী মানুষের কাজের ফলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ডাকাতিয়া। নদীর কিনারা থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন, তীরবর্তী বিভিন্ন স্থান দখল ও দূষণের ফলে নদীটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে। ফরিদগঞ্জ পৌর সদর বাজারের সমস্ত বর্জ্য কেরোয়া ব্রিজ সংলগ্ন নদীতে ফেলা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পৌরসভার কর্তৃপক্ষ নিরব ভূমিকা পালন করছে। এ অবস্থায় যেমন নদী দখল ও দূষিত হচ্ছে তেমনি দূষিত হচ্ছে পরিবেশও। কেরোয়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকার বাতাস সবসময় দুর্গন্ধযুক্ত থাকে। পথচারিদের নাকে কাপড় দিয়ে এ পথ পাড়ি দিতে হয়।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, মৎস্য ও জলজ প্রাণীর জীবন ধারণের জন্য পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন প্রতি লিটারে ৫ মিলিগ্রাম বা এর ওপরে থাকা প্রয়োজন। ফরিদগঞ্জের ১নং বালিথুবা ইউনিয়নের টুগবী এলাকায় ডাকাতিয়ার পানির দূষণমাত্রা পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করে জানাতে পারে, এখানে পানিতে পিএইচ এর পরিমান ৭.২ এবং অক্সিজেনের পরিমান ৬.৫। তবে ফরিদগঞ্জ বাজার সংলগ্ন নদীতে পরিমাপ করলে ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠতো। তাছাড়া বর্তমানে নদীতে পর্যাপ্ত পানি থাকায় সহনীয় পর্যায়ের সর্বনি¤œ অবস্থানে রয়েছে। শুকনো মৌসুমে পরিমাপ করলে নদীটির দূষনের মাত্রা ভয়াবহভাবে চিত্রিত হতো।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল আহাদ লাজু বলেন, কচুরিপানা অপসারনের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত প্রতিবেদন প্রেরন করা হয়েছে। তবে অচিরেই জেলে পরিবারগুলোর সুফল প্রাপ্তির জন্য ডাকাতিয়া নদীর কচুরিপানা অপসারন করে সরকারের ফি বছর মাছের পোনা অবমুক্তির সফলতা আনায়নের লক্ষে এডিবিতে প্রকল্প আকারে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।
ফরিদগঞ্জ মৎস্য অফিসের ক্ষেত্র সহকারী নজরুল ইসলাম বলেন,‘পানিতে ডিওর মাত্রা প্রতি লিটারে ৬ মিলিগ্রামের নিচে নেমে গেলে ছোট ছোট মাছ বাঁচে না। এছাড়া প্রাণী বৈচিত্র নষ্ট হয়ে যায়।’ তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি আরো বলেন,‘‘ডাকাতিয়া নদী ফরিদগঞ্জ অংশের পানিতে পিএইচ এর পরিমান ৭.২ এবং অক্সিজেনের পরিমান ৬.৫।’ ফরিদগঞ্জের কোথায় মাপা হয়েছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ১নং বালিথুবার টুগবী এলাকায়।’ তিনি আরো বলেন, এখন নদীতে পর্যাপ্ত পানি রয়েছে। যখন নদীতে পানি কম থাকে অথবা শুকনো মৌসুমে এর পরিমান আরো কমে যায়।’
টুগবী এলাকায় নদীতে কোনো প্রকার বর্জ্য পেলা হয়না । তারপরও এ অবস্থা। আর ফরিদগঞ্জ সদরের অবস্থা কি রকম হতে পারে তা ভাবতেই শরীর শিউরে ওঠে। আর শুকনো মৌসুমে এ ফরিদগঞ্জ সদর দিয়ে বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়ার নদীর চিত্র থাকে ভয়াবহ।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. শহীদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ফরিদগঞ্জ বাজারের কেরোয়া ব্রিজ সংলগ্ন এবং ডাক বাংলো এলাকায় এমনকি আপনি লক্ষ্য করেছেন কিনা আমাদের উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের পুকুরের পাশেও বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এ সব অপসারন করতে আমরা ‘পরিচ্ছন্ন ফরিদগঞ্জ’ নামে একটি কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা স্থানীয় সাংবাদিক, বাজার ব্যবসায়ী এবং পৌরসভার কর্তৃপক্ষদের সাথে নিয়ে বসেছি। পৌরসভা বলতেছে ময়লা ফেলার জায়গা নেই। আমি বলেছি আপনার একটি নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারন করেন।’ তিনি আরো বলেন,‘ আমি এ উপজেলায় এসেছি মাত্র তিন মাস হয়েছে। প্রাথমিক কাজ আমি করে যাচ্ছি।’
শিরোনাম:
শুক্রবার , ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ , ২১ মাঘ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।