প্রতিনিধি
নামে আন্তর্জাতিক কুটির শিল্প বাণিজ্য মেলা। কিন্তু মেলা মাঠে এর কোনো কিছুই দেখা যায়নি। গ্রামাঞ্চলে এ মেলা কুটির শিল্প বাণিজ্য মেলা নামে চলছে ফরিদগঞ্জের ভাটিয়ালপুরে। অথচ মেলা মাঠে সার্কাসের নামে চলছে অশ্লীল নৃত্য। মেলার মাঝ মাঠের এক পাশে কর্তৃপক্ষ আয়োজন করেছে জমজমাট জুয়ার আসর। সে আসরে দেখা গেছে চরকি, ওয়ানটেনসহ সুঁই খেলা। প্রতি বোর্ডে আয়োজকরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আর এ জুয়া খেলার জন্য টাকা যোগাড় করতে গিয়ে প্রতিদিনই ঘটছে চুরি, ছিনতাইসহ সংঘর্ষের ঘটনা।
সরজমিনে গত মঙ্গলবার রাতে ওই মেলাস্থল জুয়ার বোর্ডের ভেতর গিয়ে দেখা গেছে, খেলা পরিচালনাকারী চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন এলাকার বাবুলের সাথে খেলায় অংশগ্রহণ করা কয়েকজনের হাতাহাতির দৃশ্য। পরে জানা গেলো, খেলোয়াড়দের ধোকা দিয়ে টাকা নেয়ার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। কয়েকজন দর্শনার্থী ওই সময় বলতে থাকেন, মেলার নাম দিয়েছে কুটির শিল্পের, অথচ আয়োজকরা জুয়া খেলা চালাচ্ছেন। এ সময় বাবুল তাদের সামনে এসে বলেন, প্রশাসন ও সাংবাদিকদের টাকা দিয়ে আমরা এখানে মেলা করছি। আপনাদের চেঁচামেচি করে কোনো লাভ নেই। জুয়া খেলা পরিচালনাকারী বাবুলের সাথে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, এ খেলা বাবদ চাঁদপুরের প্রশাসনকে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা, ফরিদগঞ্জ থানাকে ৫ হাজার টাকা ও ফরিদগঞ্জের ওসিকে ৫ হাজার করে টাকা দেয়া হয়। চাঁদপুরের স্থানীয় ১৩টি দৈনিক পত্রিকার টাকা জনৈক কালু পাটওয়ারীর মাধ্যমে সম্পাদকদের কাছে পাঠানো হয়। ফরিদগঞ্জের ৬ জন সাংবাদিককে প্রতিদিন ১ হাজার করে টাকা দেয়া হয়। আপনারা এসে দেখছেন খেলা চলছে, এটা ২ দিন ধরে চালিয়েছি। তো আপনারা লেইখা আর কী করবেন।
মেলা মাঠের ফরিদগঞ্জের সোহেল ডিসকো ডেন্সের আয়োজন করেছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় ডেন্সের মঞ্চে লতা, নদীসহ ক�জন তরুণী অশ্লীলভাবে নৃত্য পরিবেশন করে দর্শকদের কাছ থেকে নগদ টাকা নিচ্ছে। হৃদয়-ঝুমুর পুতুল নাচে লায়ন সার্কাসের নামে একই দৃশ্য দেখা গেছে। মেলা মাঠেই ফরিদগঞ্জ থানার এসআই নিজাম ক�জন পুলিশকে নিয়ে বিভিন্ন প্যান্ডেলে ঘোরাঘুরি করছেন। তার কাছে মেলা মাঠে জুয়া চলছে এ বিষয়টি জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ওসি স্যার বিষয়টি জেনেছে। আমি মেলা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার জন্য বলতে এসেছি। তবে এ বিষয়টি পুরোপুরি মেলার আয়োজক মহসিন জানে।
মেলা মাঠের কন্ট্রোল রুমে মহসিনকে খুঁজতে গেলে অপারেটর মিলন বলেন, আপনারা সাংবাদিকরা ভেতরে ঢুকেছেন আমরা শুনেছি। আপনাদের পত্রিকার ব্যাপারে মহসিন ও বাবুল সম্পাদক ও মালিকদের সাথে কথা বলেছে। আপনারা কেনো এসেছেন? পুলিশের লোক এসেছে, আমরা তাদের ম্যানেজ করেছি দেখেন না? তারা কিছু বলবে না।
এ দিকে এ জুয়া খেলার প্রভাবে ফরিদগঞ্জের গ্রামাঞ্চলে রাতে চুরি ও ছিনতাই বেড়ে গেছে। প্রতিদিন রাতে চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ-রায়পুর সড়কের কোনো না কোনো জায়গায় ছিনতাই হচ্ছে। গত ক�দিন আগে রাতে চাঁদপুরের এক চিকিৎসক ফরিদগঞ্জে তার পেশাগত কাজ সেরে চাঁদপুর আসার সময় মেলার কাছাকাছি স্থানে ক� যুবক ওই চিকিৎসকের মোটর সাইকেলের গতিরোধ করে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে নগদ টাকা ও মোবাইল সেট ছিনিয়ে নেয়। তা ছাড়া মেলায় গিয়ে দেখা গেছে উঠতি বয়সের স্কুল-কলেজের ছেলের বিচরণ বেশি। এতে যুব ও ছাত্র সমাজ ধ্বংস হচ্ছে। ফরিদগঞ্জবাসী এ অপরাধমূলক অনৈতিক কাজ অনতিবিলম্বে বন্ধ করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।