মিজানুর রহমান রানা/ এম এ আকিব
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে এক গৃহবধূকে হত্যার পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে অবশেষে নাটকীয়ভাবে নেশার ঔষধ খাইয়ে বরিশালের লঞ্চে উঠিয়ে দেয় পাষণ্ড স্বামী।
জানা যায়, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের পশ্চিম বড়ালি গ্রামের মৃত আবুল খায়েরের কন্যা মাজেদা আক্তার বিপুল (১৮)-এর সাথে গাব্দেরগাঁও চৌকিদার বাড়ির আলী আকবর ()-এর সাথে গত ৫ মাস পূর্বে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর থেকেই আলী আকবর ও তার পরিবারের লোকজন বিভিন্ন অজুহাতে স্ত্রী মাজেদা আক্তার বিপুল-এর সাথে দুর্ব্যবহার করে আসছিল। এক পর্যায়ে তারা মাজেদা আক্তার বিপুলকে বাপের বাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে টাকা আনার জন্যে চাপ প্রয়োগ করে। নিরূপায় হয়ে মাজেদা আক্তার বিপুল কয়েক দফা বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে স্বামী আলী আকবরকে প্রদান করে। এর পরেও তার স্বামী এতে ্যান্ত না হয়ে আরো টাকা-পয়সা তাকে এনে দেওয়ার জন্যে তার ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালায়। শুধু তার স্বামীই নয়, স্বামীর পরিবারের অন্য সদস্যরাও তার সাথে যোগ দিয়ে মাজেদা আক্তার বিপুলকে মারধর করতে থাকে। সর্বশেষ গত ০৩ অক্টোবর শুক্রবার বিকেলে মাজেদা আক্তার বিপুল-এর ভাইয়ের স্ত্রী (ভাবী) তাকে দেখতে ও ঈদের দাওয়াত দিতে গেলে তার সাথে বিভিন্নভাবে দুর্ব্যবহার করে তাকে চোর সাব্যস্ত করে তাকে হেয় ও অপমানিত করে। পরে এ নিয়ে সন্ধ্যায় বিপুলকে তার স্বামী ও পরিবারের লোকজন গালমন্দ ও মারধর করে। এরপর নাটকীয়ভাবে বিপুলকে তার স্বামী ‘ভুল’ হয়েছে একথা বলে বিপুলকে নিয়ে বেড়ানো ও মার্কেটিং করার কথা বলে সিএনজি যোগে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে নিয়ে আসে। আসার সময় বিপুলের চাচা কুচক্রি মহলের হোতা আনোয়ার উল্যাহ বিপুলকে তার স্বামীর কথামতো কাজ করার জন্য বলে দেয়। এরপর তাকে চাঁদপুর নিয়ে এসে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে লঞ্চে উঠতে বললে বিপুল তাতে সায় না দিলে তাকে মারধর করে জোর করে লঞ্চে উঠিয়ে ছাদে নিয়ে রুটি খেতে দেয়। বিপুল রুটি খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লে স্বামী আলী আকবর এ সুযোগে সটকে পড়ে। পরে আলী আকবর নিজে পরদিন ফরিদগঞ্জ থানায় এসে তার স্ত্রী টাকা-পয়সা, স্বর্ণ-গহনা ইত্যাদি নিয়ে পালিয়েছে মর্মে অভিযোগ দায়ের করে। অপরদিকে বিপুলের স্বামীর পরিবারের লোকজন বিপুলের পরিবারের লোকজনকে ডেকে এনে অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ বিপুল পালিয়েছে এ ঘটনার বিচার ও বিয়ের খরচ সহ তিপূরণ দাবি করে। অন্যদিকে বিপুল অজ্ঞান হয়ে লঞ্চে করে বরিশাল চলে গেলে লঞ্চের লোকজন তাকে বরিশালের জনৈক ফিরোজা বেগম (৪০) সেবা দিলে বিপুলের জ্ঞান ফিরলে তাকে উজিরপুর গুঠিয়া বন্দরের দি আসমা ড্রাগ হাউজে চিকিৎসা গ্রহণ করে। পরে বিপুল সুস্থ হয়ে তার গ্রামের বাড়িতে মোবাইল ফোনে এসব ঘটনা বিস্তারিত জানায়। পরিবারের লোকজন খবর পেয়ে তাকে বরিশাল থেকে উদ্ধার করে ১০ অক্টোবর শুক্রবার ফরিদগঞ্জ থানায় নিয়ে আসে এবং তার স্বামী আলী আকবর ও তার চাচা আনোয়ার উল্যাহকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়। বিপুলকে উদ্ধার করার পর থেকে তার স্বামী আলী আকবর বিভিন্ন ভাবে লোকজনের মাধ্যমে বিপুল ও তার পরিবারের লোকজনকে হুমকি ধমকি দিতে থাকে এবং থানায় মামলা না করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে।
এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানার ওসি নাজমুল হক বলেন, আমরা ভিকটিম মাজেদা আক্তার বিপুলের বিষয়ে যাবতীয় ঘটনা বিস্তারিত জেনেছি। শ্রীঘ্রই এ ব্যাপারে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. আমির জাফরও অবগত হয়েছেন এবং তিনি এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ প্রদান করেছেন।
শিরোনাম:
মঙ্গলবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৬ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।