শুধু বাবাই নয়, তার ঘরে জন্ম নেয়া তিন সন্তানই প্রতিবন্ধীত্বের শিকার। নিজের এবং সন্তানদের চিকিৎসা করাতে করাতে সর্বস্ব হারিয়ে এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন ফরিদগঞ্জ উপজেলার হাঁসা গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী লোকমান মিজি ও তার পরিবার। তবে লোকমান মিজি জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী নন। পাঁচ বছর বয়স থেকে তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধীত্বের শিকার হন। আর নিয়তির এমনই খেলা! তার ঘরে জন্ম নেয়া তিন সন্তানই শারীরিক প্রতিবন্ধী। এখন নিজে এবং সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকতে ভালো চিকিৎসার জন্যে সমাজের বিত্তবান ও সমাজপতিদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার আবেদন করেছেন। রমজান তথা ঈদ এলেই ফরিদগঞ্জের আনাচে কানাচে সমাজের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক ব্যক্তি ও বিত্তবানরা যাকাতের নামে যে কাপড় বিতরণ করে থাকেন তার পরিবর্তে লোকমানের মতো অসহায় পরিবারগুলোকে তারা স্বাবলম্বী ও চিকিৎসা করার ব্যবস্থা নিতে পারেন। এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম জানান, লোকমানের মতো অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো বিত্তবানসহ সমাজের সচেতন মহলের কর্তব্য। তিনি নিজে লোকমানের পরিবারের জন্য একটি গভীর নলকূপ প্রদান করেছেন বলে জানান।
জানা যায়, হাঁসা গ্রামের সিকান্দার মিজির স্ত্রী তৈয়বেন্নেছা শারীরিক প্রতিবন্ধী (তালু ফাটা) হলেও তার তিন ছেলে এক মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে লোকমান মিজিই শুধু শারীরিক প্রতিবন্ধীত্বের শিকার হন। লোকমান মিজি জানান, চার বছর পর্যন্ত তিনি সুস্থই ছিলেন। বয়স যখন ৫ বছর তখন থেকেই তার দু’পায়ের মাংসপেশী শুকিয়ে যেতে থাকে। পা দুটি অবশের মতো হয়ে চলাফেরা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। তারপরও পরিবারের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে দুই হাতকে ব্যবহার করে টেইলারিংয়ের কাজ শিখেন। পরে এক সময় বাড়ির সামনে হাঁসা মাদ্রাসার সামনে রাস্তার পাশে একটি দোকান দিয়ে বসার পর কিছুটা ভালো অবস্থায় পৌঁছার পর বাবা ও মার অনুরোধে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তিনি। বিয়ের পর তার ঘরে একে একে এক ছেলে ও দুই মেয়ে জন্ম নেয়। তারাও হতভাগ্য বাবার মতো শারীরিক প্রতিবন্ধীত্বের শিকার হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী লোকমান মিজি তার সন্তানদের সুস্থ করতে নিজের সবকিছু বিক্রি করেও তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারেননি। ধীরে ধীরে নিজেও চলার শক্তি হারিয়ে ফেলায় আয়ের পথটুকুও বন্ধ হওয়ার পথে। লোকমান মিজি জানান, তার দোকান ও বাড়ির দূরত্ব বেশি না হলেও রিক্সা ছাড়া আসা যাওয়া করতে পারেন না। একই অবস্থা তার ছেলে রাকিব (১৮), দুই মেয়ে নিশু (১৬) ও মুক্তা (১৪)’র। তারা বসে থাকলে উঠতে পারে না, আবার দাঁড়িয়ে থাকলেও নিজে নিজে চলতে পারে না।
ইতিপূর্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, চলন শক্তি হারানো রোগটি দেখা দিলে আক্রান্ত ব্যক্তির পায়ের মাংস পেশী শুকিয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে ধীরে ধীরে চলাফেরায় অক্ষম হয়ে পড়ে। জন্মগতভাবে এ রোগ প্রাপ্ত ব্যক্তির পরিবারের সন্তানরাও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এদিকে এই রোগের চিকিৎসা এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়েছে কিনা তা জানা না গেলেও লোকমান মিজি তার ও সন্তানদের সুস্থ করতে চিকিৎসা ব্যয় মিটাতে গিয়ে সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। পরিবারের সদস্যদের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এমতাবস্থায় সহৃদয়বান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি অসহায় এ পরিবারটিকে বাঁচাতে এবং চিকিৎসা করাতে এগিয়ে আসে তবে হয়তবা ভিক্ষা নামক পেশাটিকে বেছে নিতে হবে না এ পরিবারের সদস্যদের। যদি কেউ সাহায্য করেন তা পাঠানোর ঠিকানা মোঃ লোকমান হোসেন মিজি, সঞ্চয়ী হিসাব নং- ৬১৪৬, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, ফরিদগঞ্জ শাখা, চাঁদপুর।
( লেখাটি পড়া হয়েছে ১৬ বার )