মিজান লিটন
ফরিদগঞ্জে সোমবার সকালে চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর সড়কের টিএন্ডটি এলাকায় এবং কেরোয়া রোডে আওয়ামী লীগ বিএনপি এবং পুলিশের ত্রিমুখী ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে শিশুসহ ৪জন গুলিবিদ্ধ এবং প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ এ সময় ১৯ রাউন্ড শর্ট গানের এবং ১ রাউন্ড গ্যাস গানের গুলি ছোড়ে। গুলিবিদ্ধ শিশু আবু তাহের (১২), ছাত্রদল নেতা মানিক (২৭) ও ছাত্রদল নেতা হুমায়ুন (২৬)কে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে এবং প্রজন্ম দলের জুয়েল রানাকে ফরিদগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুপুরে শিশু আবু তাহেরকে চাঁদপুর থেকে ঢাকা রেফার করা হয়েছে ।
এদিকে উভয় পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় আহতদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সোহেল আমজাদ (৩৫), যুবলীগ নেতা শিমুল পাটওয়ারী (২৮), রুহুল আমিন রুবেল (৩৩), ছাত্রলীগ নেতা সরোয়ার (১৭), উপজেলা ছাত্রলীগের সম্পাদক মাহবুব আলম সোহাগ (২৬), উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জহিরুল ইসলাম সুজন (২৬), যুবলীগ নেতা মিজান (৪০), মশিউর রহমান (৩০), মাহবুবুর রহমান সুজন (৩০), আমজাদ হোসেন রিপন (২৬), স্বেচ্ছাসেবক লীগের রফিক (২৫), দীন ইসলাম (২২), বাবুল (২৭), শাহিন (৩০), নাছির (২৫), সোহেল বানু (৩৫), কাহার (৩২)সহ বিএনপি তথা ২০ দলের বেশি কিছু নেতা-কর্মী আহত হলেও আটকের ভয়ে নেতৃবৃন্দ তাদের নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছে না। তবে সোমবার সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় দলের অন্তত অর্ধশত নেতা-কর্মীসহ পথচারী আহত হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় প্রজন্ম দলের জুয়েল রানাকে আটক করেছে। এছাড়া টিএন্ডটি এলাকায় ইটপাটকেল নিক্ষেপকালে মেহের আলী পাওটয়ারী বাড়ি রোডের বেশ কয়েকটি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সোমবার সকালে গণতন্ত্র রক্ষা দিবস উপলক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন মিছিল করে। একটি মিছিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের পাটওয়ারীর নেতৃত্বে টিএন্ডটি চত্বর হয়ে বাসস্ট্যান্ড দিয়ে কালির বাজার চৌরাস্তা এলাকা দিয়ে ফরিদগঞ্জ বাজার প্রদক্ষিণ করে অস্থায়ী কার্যালয়ে অবস্থান নেয়। প্রায় দশ মিনিটের মধ্যেই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও দলের সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকারের নেতৃত্বে ভাটিয়ালপুর থেকে একটি মিছিল কালির বাজার চৌরাস্তা দিয়ে ফরিদগঞ্জে প্রবেশ করে। মিছিলটি উপজেলা পরিষদ এলাকায় আসার পর উভয় মিছিলের কর্মীরা একত্রিত হয়ে পুনরায় মিছিল শুরু করে। চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর সড়কের টিএন্ডটি এলাকায় মিছিলটি পৌঁছলে বিপরীত দিকে আল মদিনা হাসপাতালের সামনে অবস্থান করা বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের সাথে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে উভয় দলের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। পুলিশ এ সময় উভয় পক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড শর্ট গানের গুলি ছোড়ে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলা উভয় দলের মধ্যকার ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং ইট পাটকেল মারার ঘটনায় টিএন্ডটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ গুলি চালিয়ে বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার পরও মেহের আলী পাটওয়ারী বাড়ি রোডে থাকা বেশ কিছু ২০ দলীয় জোটের কর্মীদের সাথে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময়ও বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। দুই পক্ষের হামলা পাল্টা হামলার ঘটনায় মেহের আলী পাটওয়ারী রোডের বেশ কয়েকটি ভবন ভাংচুরের শিকার হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাড়তি ফোর্স নিয়ে আল মদিনা হাসপাতালের সামনে অবস্থান নেয়। ওই সময় বড়ালি স্কুলের সামনে ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। প্রায় দুই ঘণ্টা পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ শান্ত হয়।
এদিকে টিএন্ডটি চত্বরে সংঘর্ষ চলাকালে ফরিদগঞ্জ শহরের কেরোয়া রোডে কেরোয়া এলাকা থেকে বিএনপির লোকজন বাজারে ঢুকে পূর্ব বাজারে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে রাস্তায় অবরোধ সৃষ্টি করে। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সেখানে গেলে উভয়ের মধ্যে বেশ কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে রাখে এবং টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এখানেও বেশ কয়েক রাউন্ড শর্ট গানের এবং গ্যাস গানের গুলি ছোড়ে ।
এদিকে বাজারের ভেতরে এবং টিএন্ডটি এলাকায় সৃষ্ট ঘটনায় বিকেল পর্যন্ত থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। ঘটনার সময় বাজারের ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ফেলে।
ঘটনার ব্যাপারে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান টিপু ফোনে জানান, আমরা গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে শান্তিপূর্ণ মিছিল করতে জড়ো হলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাদের ওপর সরকারি দল এবং পরে পুলিশ হামলা করে। এদিকে ঘটনার ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের পাটওয়ারী বলেন, আমরা পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনকালে তারা অযথা আমাদের ওপর হামলা করে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকার জানান, তার নেতৃত্বে মিছিলটি টিএন্ডটি এলাকা পার হওয়ার সময় আল মদিনা হাসপাতালের সামনে থাকা বিএনপি জামাত জোটের ক্যাডাররা উস্কানি দিয়ে হামলা করে। আত্মরক্ষার্থে আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা পাল্টা হামলা করে। তবে তাদের ইটপাটকেলের আঘাতে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী আহত হন।
ঘটনার ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নাজমুল হক জানান, দুই গ্রুপের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৯ রাউন্ড শর্ট গানের গুলি এবং ১ রাউন্ড গ্যাস গানের গুলি চালায়।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়নাল আবদিন জানান, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।