ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর): ফরিদগঞ্জ উপজেলার যত্রতত্র চলছে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন। বিশেষ করে বিশেষ রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে চলছে এ অবৈধ কাজটি। প্রশাসন চেষ্টা করে বন্ধ করতে পারছে না, না কি চেষ্টার নামে চলছে আইওয়াশ!
ফরিদগঞ্জ উপজেলা আ,লীগের রাজনীতি একাধিক ধারায় ও নেতৃত্বে বিভক্ত হয়ে আছে। এ কারনে কর্মীরাও বিভক্ত ও নেতার অনুসারী হয়ে বিভিন্ন কর্মকান্ড চালাচ্ছে। ভিন্ন ভিন্ন নেতার অনুসারীরা আড়াআড়ি করে কোথাও না কোথাও ফসলি জমি নষ্ট করে ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে লক্ষ লক্ষ ফুট বালু উত্তোলন করছে। উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের আনাচে কানাচে চলছে এ অবৈধ ড্রেজিং। প্রশাসনকে প্রায়ই বিভিন্ন এলাকায় ড্রেজার মেশিন ভেঙ্গে ফেলতে বা নষ্ট করে ফেলতে দেখা গেছে। কিন্তু নষ্ট করার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ ফুট বালু উত্তোলন করা হয়ে যায়। প্রতি ফুট বালু স্থান ভেদে ১৪টাকা থেকে ১৬টাকা দরে বিক্রি করা হয়। ভালো ড্রেজার মেশিন হলে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০হাজার ফুট বালু উত্তোলন সম্ভব।
গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ১২ নং চর দুখিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের লাড়–য়া গ্রামের ভুইয়া বাড়ির পূর্ব পাশে লোকমান হোসেন লুকু ভূইয়া ও জাকির হোসেন প্রতিযোগিতা দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে ফসলি জমি থেকে। অবৈধ এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে লুকু ভূইয়া বলেন, আমরা সাংবাদিক ও প্রশাসনকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেই বালু উত্তোলন করছি। এ ছাড়াও আমার চাচা ইউএনও’র ক্লাসমেট আমার ড্রেজার ভাঙবে কে? তিনি দম্ভ করে আরো বলেন, ইউএনও’র টাকায় ড্রেজার কিনিনি যে, আমার ড্রেজার ভাঙবে! এলাকাবাসী জানায়, গত কয়েক বছর ধরেই কাওকে তোয়াক্কা না করে ১২ নং চর দুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের আত্বীয় পরিচয় দিয়ে অবৈধ ড্রেজিং করে মাটির ব্যবসা করে আসছেন লুকু ভূইয়া।
এক প্রশ্নের জবাবে জাকির হোসেন বলেন, ড্রেজিং অবৈধ হলেও আমরা অনেকের চাহিদা পুরন করে বছরের পর বছর বৈধ করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। জাকির হোসেন ও তার সহযোগী লিটন হোসেন জানান আমরা ড্রেজার চালাই অনেক আগে থেকেই, কোন ঝামেলা হলে ম্যানেজ করে নেই, কোন সমস্যা হয়না।
ড্রেজিং এর ব্যাপারে এলাকাবাসীরা জানান, লোকমান হোসেন লুকু, জাকির হোসেন ও লিটন দীর্ঘদিন যাবৎ এভাবে ড্রেজিং করে এলাকার ফসলি জমিগুলো শেষ করে দিচ্ছি। ড্রেজিং এর কারনে মানুষের ভাল জমির পাড় ও বাড়ীঘর ভাঙতে শুরু করছে। এ ব্যপারে আমরা কোন আইনি সহায়তা পাইনি।
এ ব্যাপারে ১২ নং চরদুঃখিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল হাই এর সাথে যোগাযোগ করা হলে ওনাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সারমিন আক্তার আইনি ব্যখ্যা দিয়ে বলেন, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ধারা ৫-এর ১ উপধারা অনুযায়ী, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারী দুই বছরের কারাদ- ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। আমারা সর্বদা এ বিষয়ে সজাগ থেকে কাজ করে যাচ্ছি। খবর পাওয়া মাত্রই অভিযান পরিচালনা করি। তিনি আরো বলেন, অপরাধকারীরা বরাবরই কারো না কারো নাম ভাঙ্গিয়ে অথবা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। প্রমান থাকেনা বলে আমরা অনেক সময় আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারি না।
একই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরি জানান, অভিযোগ পেয়েছি দ্রুত অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে লক ডাউনের কারনে যথাসময়ে সব কিছু করে উঠা সম্ভব হয় না।
সংবাদদাতা/চাঁদপুরনিউজ/