অব্যাহত টানা বর্ষণ ও ভরা বর্ষার কারণে দেশের বৃহত্তর চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের (সিআইপি) অধিকাংশ এলাকায় পানিবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। প্রকল্পের বাহিরে মেঘনা নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্পের পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হওয়ায় প্রকল্প এলাকার ফরিদগঞ্জ, রায়পুরসহ ছয় উপজেলায় মারাত্মক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ সময়ের পানিবদ্ধতার কারণে প্রকল্পের ভিতরে বহু আমন বীজতলা বিনষ্ট হয়ে গেছে এবং রোপণ করা আমন ক্ষেত ৩ হতে ৫ ফিট পর্যন্ত পানির নিচে ডুবে আছে। এ কারণে চলতি মৌসুম আমন চাষ করা নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন হাজার হাজার কৃষক। সেচপ্রকেল্পর অভ্যন্তরের আবাদকৃত শত শত মাছের ঘের পানির চাপে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও নি¤œাঞ্চলের কৃত্রিম পানিবদ্ধতা বন্যায় রূপ নিয়েছে। শত শত পুকুর ও ঘেরের চাষ করা মাছ ভেসে চলে গেছে। অনেক এলাকার রাস্তা ঘাট ও ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। পানিবদ্ধতায় এসব এলাকার লোকজন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। পানি কমে গেলে পুনরায় আমন চাষ করতে গিয়ে কৃষকদেরকে আমন চারা সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার জানিয়েছেন, কৃষকরা নষ্ট হয়ে যাওয়া বীজতলার স্থলে রাস্তার পাশেসহ বিভিন্ন স্থানে নতুনভাবে বীজতলা তৈরি করেছেন। তবে সেচ প্রকল্পের অন্য এলাকার অবস্থা তথৈবচ। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা চাঁদপুর সেচপ্রকল্পের অভ্যন্তরের বিভিন্ন স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল দখল করে বাঁধ ও রাস্তা নির্মাণ করার কারণে সামন্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের। অপরদিকে প্রকল্পের ভিতরের অধিকাংশ খাল গত একদশকেও খনন না করায় বোরো মৌসুমে সেচ সরবরাহ ব্যাহত হয়। প্রতি মৌসুমেই একারণে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে প্রকল্পভুক্ত ৬ উপজেলার ১০ লাখ কৃষককে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য পাউবো’র অধীনে ১৯৬৩-১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ফরিদগঞ্জ উপজেলা, রায়পুর উপজেলা লক্ষ্মীপুর সদর (আংশিক), রামগঞ্জ (আংশিক) ও চাঁদপুর সদর (আংশিক) ও হাইমচর উপজেলার ১০০ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। ৫৮ কিলোমিটার আয়াতনের ডাকাতিয়া নদী এই প্রকল্পের প্রধান জলাধার। প্রকল্পের ভিতরে ৫৭ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ও ৫০ লাখ অধিবাসী রয়েছে। আর কৃষক রয়েছে ১০ লাখেরও বেশি। প্রকল্পের পানি নিষ্কাশনের জন্য হাজীমারা এলাকায় অত্যাধুনিক স্লুইচ গেইট নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তা সংস্কার না হওয়ায় রেগুলেটরের ভিতরে ও বাহিরে নদীতে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। প্রকল্পে এলাকার লোকজন ও পানি নিষ্কাশনের সাথে সংশ্লিষ্ট সিআইপি কর্তৃপক্ষ জানান, চলতি টানা বৃষ্টিপাত হতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা গত ১৫ বছরও দেখা দেয়নি। প্রকল্পভুক্ত কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, হাজিমারা রেগুলেটরের মুখের ভিতরে ও বাহিরে নদীতে পলি জমাট হওয়ায় পানি নিষ্কাশন বিঘিœত হচ্ছে। এতে বর্ষা মৌসুমে গত ২০দিন ধরে টানা বৃষ্টি হওয়ায় সেচ প্রকল্পের ভিতর পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে বিভিন্ন গ্রামে কৃত্রিম বন্যা দেখা দেয়। প্রকল্প এলাকায় শাকসবজি ও পেঁপে গাছ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পানিবদ্ধতা আগে প্রকল্প এলাকার প্রায় অর্ধেক জমিতে আমনের চারা রোপণ করা হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে তা বিনষ্ট হয়ে গেছে। বাকি জমিগুলোতে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে থাকায় কৃষকরা এখনও ক্ষেতে আমন চারা রোপণ করতে পারেনি। সিআইপি কৃষি সম্প্রসারণ সুপারভাইজার জহিরুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে সিআইপি এলাকায় ১৬ হাজার ৭শ’ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে। পানিবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নেয়ায় বহুকৃষকের আমন বীজতলা ও চারা রোপণ করা আমন ক্ষেত বিনষ্ট হয়ে গেছে। পানি কমে গেলে পুনরায় আমন চাষ করতে গিয়ে কৃষকদেরকে আমন চারা সংকটে পড়তে পারে। সিআইপির উপ-সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) বদর উদ্দিন মোল্লা জানান, মেঘনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্পের ভিতর হতে হাজিমারা ও চরবাগাদি ¯ুøইজ গেইট দিয়ে পানি নিষ্কাশনের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। চরবাগাদি পাম্প হাউজের মোট ১২শ’ কিউসেকের ৬টি পাম্প মেশিন দ্বারায় বিরতিহীনভাবে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে। নিষ্কাশিত হওয়া পানির চেয়ে বৃষ্টির পানির পরিমাণ বেশি হওয়ায় প্রকল্প এলাকায় বর্তমানে পানিবদ্ধতার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসও) মো. আলাউদ্দিন বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় পলি অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অর্থ বরাদ্দ পেলে টেন্ডারের মাধ্যমে পলি মাটি অপসারণের কাজ করা হবে।