স্টাফ রিপোর্টার
ফরিদগঞ্জের গাব্দেরগাঁও গ্রামের তিনটি সংখ্যালঘু পরিবারকে দীর্ঘদিন ধরে জমি দখলসহ নানাভাবে উচ্ছেদের চেষ্টা করছে পার্শ্ববর্তী একটি প্রভাবশালী চক্র। ইতিপূর্বে সৃজনকৃত একটি বাগান দখলের পর গত রোববার ওই চক্রটি বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি বাশ ঝাঁড়ের বাঁশ কেটে নিয়ে যায়। এ নিয়ে সংখ্যালঘু পরিবারের লোকজন বাধা দিলে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাদের উপর হামলার চেষ্টা করে তারা। এ সময় তারা দ্রুত সেখান থেকে পিছু হটলে কোনো ধরনের রক্তক্ষয়ের ঘটনা ঘটেনি।
সরজমিনে গেলে ভুক্তভোগী তিনটি ব্রাহ্মণ পরিবারের লোকজন জানায়, পূর্ব পুরুষদের নিকট থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে তিনটি পরিবার পরিমল চক্রবর্তী গং, দিপক কুমার চক্রবর্তী গং এবং প্রবীর চক্রবর্তী গং ২৯৮নং গাব্দেরগাঁও মৌজায় সিএস ৪১৭ এসএ ৩৬৪ বিএস ৪৩৭ ও ৪৫০ নং খতিয়ানভুক্ত ১৭০, ১৭১, ১৭৭, ১৭৮, ১৭৯ , ৫০ ও ৯৪ দাগে সর্বমোট ৪. ২৪ একর ভূমির মালিক ও সর্বশেষ ১৯৮৪ সালের ২১ জুন স্থানীয় ভূমি অফিস কর্তৃক ৩৫৪৫৯৮ নং দাখিলা মূলে স্বত্ববান হয়ে ভোগদখল পূর্বক জীবনযাপন করছেন। কিন্তু তাদের প্রতিপক্ষ আঃ রশিদ গং পরিমল চক্রবর্তীর পিতামহ কাশি চন্দ্র চক্রবর্তীর থেকে ১৯৯০ সালের ৭ মার্চ ১৭০ ও ১৭৯ দাগে ০.১৩ একর ভূমি ও ১৯৯৬ সালের ১৭ জানুয়ারি দিপক কুমার চক্রবর্তীর পিতা মৃত কুমুদবিহারী চক্রবর্তীর ও প্রবীর চক্রবর্তীর পিতা মৃত জগদীশ চক্রবর্তীর নিকট থেকে ১৭৯ দাগে ০.২৪ একরসহ সর্বমোট ০.৩৭ একর সম্পত্তি ক্রয় করে। অপরদিকে পরিমল, দিপক ও প্রবীর চক্রবর্তীর পূর্ব পুরুষদের আরেক অংশীদার যোগেশ্বর চক্রবর্তী বর্তমানে ভারতে অবস্থান করায় তার মালিকানাধীন ১৭০, ১৭১, ১৭৭, ১৭৮, ১৭৯ দাগে ‘ক’ তফসিলভুক্ত অর্পিত সম্পত্তির তালিকায় ২.৩৩ একর ভূমি তালিকাভুক্ত হয়। এই সম্পত্তিটি অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হওয়ার পর ১৯৬৬-৬৭ অর্থ বছরে জনৈক খলিলুর রহমানকে ২৮৫/৬৬-৬৭ নং লিজ মোকাদ্দমা মূলে ১.৬ একর ভূমি সরকার লিজ প্রদান করে। পরবর্তীতে পরিমল দিপক ও প্রবীর চক্রবর্তী গং ওই লিজ মোকদ্দমার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মুন্সেফ আদালতে টিএস নং-৩০৭/৬৭ দায়ের করে। বিজ্ঞ আদালত মামলার রায়ে বিবাদীগণের তফসিলভুক্ত সম্পত্তির উপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পরবর্তীতে ১৯৮৯-৯০ সালে উক্ত খলিলুর রহমান গং ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর তোয়াক্কা না করে ১/৮৯-৯০ নং লিজ কেস নথি সৃজন করে। ভুক্তভোগী পক্ষ অর্পিত ওই সম্পত্তি অবমুক্তকরণের নিমিত্তে বিজ্ঞ জেলা জজ ও অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনালে ১৬৮৪/২০১৩ খ্রিঃ মোকদ্দমা দায়ের করে। যা বর্তমান বিচারাধীন রয়েছে।
কিন্তু প্রতিপক্ষরা মাত্র ০.৩৭ একর সম্পত্তি ক্রয় করেও ধারাবাহিকভাবে ওই তিনটি ব্রাহ্মণ পরিবারের উপর বছরের পর বছর ধরে নানাভাবে হয়রানি, হুমকি ধমকি দিয়ে প্রায় ২ একর সম্পত্তি দখল করে রেখেছে। এই দখল প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় তারা পুকুর থেকে মাছ লুট করে, বাগান থেকে গাছ কর্তন, বাঁশ ঝাড়ের বাঁশ কেটে নেয়। এক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করলে তাদের উপর নেমে আসে হামলা ও হুমকি-ধমকি। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ ও থানায় বেশ ক’টি অভিযোগ করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১২ সালের ১১ জুলাই কৃষি ব্যাংক ফরিদগঞ্জ শাখার এক কর্মচারী আইয়ুব আলীকে প্রধান অভিযুক্ত করে পরিমল চক্রবর্তী নার্সারী দখল ও পুুকুরের মাছ লুটের চেষ্টার অভিযোগ করে থানায় অভিযোগ দেন।