ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর): চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-০২ ফরিদগঞ্জ জোনাল অফিসের আওতাধীন পল্লী বিদ্যুতের এক গ্রাহকের ব্যবহৃত মিটারে ১২০টাকার বিপরীতে একমাসে ৭৮হাজার ৬শত ৭৯টাকা এসেছে। ভুতুরে এই বিলে দিশেহারা ঐ অসহায় পরিবারটি।বিল পরিশোধে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের চাপে বাড়ী ছাড়ার উপক্রম পরিবারটির। গোজামিল দিয়ে বিল পরিশোধের নিয়মিত তাগিদে আরো অসহায় হয়ে পড়েছে পরিবারটি। ঘটনাটি উপজেলার ১৬নং ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ গ্রামের।
সরেজমিনে গিয়ে প্রতিবেশী, এলাকাবাসী এবং ভূক্তভূগিদের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, মিটারটিতে মাত্র একটি এনার্জি লাইট ও একটি ফ্যান এর সংযোগ দেয়া আছে এবং প্রথম থেকেই এ দুটি জিনিষ ব্যবহার করে আসছে পরিবারটি। প্রতিবেশী ঘরের লোকজন জানান, আমরা এ পর্যন্ত কখনও দেখি নাই একটি লাইট এবং একটি ফ্যানের বেশী ব্যবহার করতে।
সাহেবগঞ্জ গ্রামের বেপারী বাড়ির মাঈনুদ্দিনের স্ত্রী গৃহবধু রুমা আক্তার মিটারের গ্রাহক। ব্যবহৃত পল্লী বিদ্যুৎ (হিসেব নং ০৩-৫৩৬-১১৭৮) নং মিটার টিতে।
আশ্চর্যের ব্যপার হলো বাড়ীর প্রতিবেশী, এলাকাবাসী বা কেউ কিছু না দেখলেও ফরিদগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের অদক্ষ ডিজিএম মোহাম্মদ নুরুল হোসাইন যাচাই বাছাই ছাড়াই গায়েবীভাবে ভুতুরে বিলের বিষয়ে পরিস্কার ধারনা দিয়েছেন। তার মতে হয়ত মটর ব্যবহার করে পানি দিয়েছে নির্মানাধীন ভবনে, অথবা অটো রিক্সা চার্জ দিয়েছে নতুবা শর্ট সার্কিটের কারনে এ বিল এসেছে। ভূক্তভোগি রুমা আক্তারের স্বামী মাঈনুদ্দিন ঢাকাতে রাজ মিস্ত্রির কাজ করেন। অভিবাবকহীন রুমা আক্তারকে পাশ^বর্তী উপজেলা রায়পুর থেকে বৃদ্ধ বাবা এসে দেখভাল এবং সহযোগিতা করেন। বেশ কিছুদিন ধরেই বাবা মেয়েকে ফরিদগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে সংলিষ্ট কর্মকর্তাদের টেবিলে টেবিলে ঘুরতে দেখা গেছে। কিন্তু সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি কোন ব্যক্তি। তাদের আচরনে ক্ষোভ প্রকাশ করে রুমা আক্তার বলেন, বিদ্যুতের এ মিটারটির সংযোগ পেয়েছি অনেক কষ্টে। আমার স্বামী একজন সাধারন শ্রমিক। খেয়ে না খেয়ে জীবনে বেচে আছি। সংযোগের পর প্রতি মাসে আমগো বিল আসতো একশ বিশ টাকা। কিন্তু গত মার্চ ২০২১ মাসে বিল আসে ৭৮হাজার ৬শত ৭৯টাকা । মোবাইল ম্যসেজেও প্রতিবারের মত বিলের পরিমান জানিয়ে দেয়।বিলের কাগজটি অফিস নিয়ে গেছে। পূর্বের পরিশোধীত সকল বিলের কাগজ আমাদের কাছে আছে এবং আমরা তা অফিসে দেখিয়েছি। কিন্তু আমাদের কথা না শুনে আমাদেরকে অফিস থেকে বের করে দিয়েছে। তাই প্রতিকারের আশায় সাংবাদিকদের কাছে এসেছি।
এদিকে স্থানীয়দের সাথে নিয়ে রুমা আক্তারের ব্যবহৃত মিটারটিতে একটি ফ্যান ও একটি বাতি ছাড়া অন্য কিছরু ব্যবহার কিংবা সর্ট সার্কিট এর কোন আলামত পাওয়া যায়নি। পল্লী বিদ্যুৎ কতৃপক্ষের দায়িত্বশিল কোন কর্মকর্তা ঘটনার স্থান পরিদর্শনে গিয়েছেন এমন তথ্যও কেউ দিতে পারেনি।
এবিষয়ে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-০২ এর ফরিদগঞ্জ জোনাল অফিসে কর্মরত ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মুহাম্মদ নূরল হোসাইনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, গ্রাহক বিদ্যুৎ ব্যবহার না করলে তো আর বিল আসে না, আমি খোঁজ নিয়েছি ওই খানে সর্ট সার্কিট হয়েছে, কেউ বলছে মটর ব্যবহার করে নির্মানাধীন ভবনে পানি দিয়েছে, কেউ বলছে ব্যটারীচালিত রিক্সা চার্জ করা হয়েছে। আমি ৪(চার) হাজার টাকা গড় করে প্রতিমাসের বিলের সাথে পরিশোধের জন্য বলে দিয়েছি। আপনার ধারনার মধ্যে যে জিনিষগুলি ব্যবহার হয়েছে তাতে এক মাসে এত বির আসার সম্ভাবনা কতটুকু এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন এ বিষয়ে আমি আর কথা বলতে চাই না। আপনারা ইউএনও মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করেন, ইউএনও স্যার বিষয়টি জানেন এবং উনার সাথে সিদ্ধান্ত ক্রমে এটি করেছি।
বিষয়টি নিয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরির সাথে কথা হলে তিনি জানান, এমন কোন ঘটনা আমার জানা নেই। তিনি ডিজিএমকে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানতে চাইলে ডিজিএম কোন সদউত্তর দিতে পারেন নি।
ভূক্তভোগি রুমা আক্তার এবং সাধারন মানুষ জানতে চায় যাদের নুন আনতে পানতা ফুরায় তাদের উপর নিয়মবহির্ভূত অবৈধ অস্বাভাবিক ভূতোড়ে বির চাপিয়ে দিলে তার সমাধান কিভাবে হবে? যাদের সংসার চলে দৈনিক মজুরির টাকায় , করোনাকালীন দুঃসময়ে একমাসে প্রায় ৭৯হাজার টাকার বোঝা কিভাবে সইবে? কোন সচ্ছল ব্যক্তিই কি এটা মেনে নিবে? এর প্রতিকারের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করছেন রুমা আক্তার।
এদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিং এবং অনিয়মের কারনে গত ২৪ মে উপজেলার ৭ ও ৮নং ইউনিয়নবাসী ডিজিএম মোহাম্মদ নুরুল হোসাইন এর অপসারন চেয়ে মানববন্ধন করে।
সংবাদদাতা/চাঁদপুরনিউজ/