চাঁদপুরে চুরির অপবাদে এক নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে অভিযান চালিয়ে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।
এর আগে গত শুক্রবার বিকেলে স্বর্ণের চেইন চুরির অপবাদ দিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছিল প্রতিবেশীরা। তবে নির্যাতিতা নারী এবং তার স্বজনরা জানান, মিথ্যা অপবাদ দিয়ে এমন অমানবিক ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।
গত শুক্রবার বিকেলে জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার রুস্তমপুর গ্রামে এই ঘটনায় গুরুতর আহত স্বামী পরিত্যক্তা ওই নারী এখন চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাকে বেধড়ক পেটানোর ফলে মাথাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে মারাত্মকভাবে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
এদিকে, নির্যাতিতা নারী তাসলিমা বেগম রবিবার সন্ধ্যায় ৫ জনকে আসামি করে ফরিদগঞ্জ থানায় মামলা করেন করেন। এরপরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত মোফাচ্ছের হোসেন (২৮) ও তার ছোট ভাই মো. ইয়াসিন (২৩)কে গ্রেপ্তার করে। এই মামলায় অন্য আরো যে তিন আসামি রয়েছে তারা হচ্ছেন- রায়হান হোসেন (২০), শামসুন্নাহার (৫০) ও আমেনা বেগম (২০)। জেলা পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ জানান, এই তিনজনকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
যেভাবে চালানো হয় নারীর ওপর নির্যাতন: ঘটনাস্থলের পাশ থেকে মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, এক যুবক কাঠের গুড়ি দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছে এক নারীকে। আর ওই যুবককে সহায়তা করছে আরো কয়েকজন। দুই মিনিটেরও বেশি ওই ফুটেজে এমন ঘটনার শেষের দিকে নির্যাতিতা নারীকে রক্ষায় কয়েকজন এগিয়ে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের রুস্তমপুর গ্রামে গত শুক্রবার বিকেলে এমন নির্মম ঘটনা ঘটে।
বৃদ্ধ আব্দুল মান্নানের সাত ছেলে, দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট তাসলিমা বেগম। গত আট বছর আগে বিয়ে হয় তার। কিন্তু স্বামী তাকে ছেড়ে যাবার পর বাবার বাড়িতেই থাকেন তিনি। গত কয়েক মাস আগে প্রতিবেশী মোস্তফা মিয়ার ছেলে কাউসার আলমের স্ত্রীর গলার একটি সোনার চেইন হারিয়ে যায়। কিছুদিন আগে সেটি খুঁজে পেলেও এর জন্য দায়ী করা হয় একই বাড়ির স্বামী পরিত্যক্তা তাসলিমা বেগমকে। নির্যাতিতা তাসলিমা বেগমের বড় বোন আমেনা বেগম জানান, এই জন্য তাঁর ছোট বোনকে দায়ী করা হয়। আর এমন ঘটনার জের ধরেই কাউসার আলমের ছোট দুই ভাই ইয়াসিন ও মোফাচ্ছের এবং তাদের মা শামছুন্নাহার এমন পৈশাচিক নির্যাতন চালায় তাসলিমা বেগমের ওপর। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী তাসলিমা বেগম জানান, বিনা কারণেই ঘর থেকে ডেকে নিয়ে বাড়ির উঠোনে তার ওপর হামলা চালানো হয়। তিনি চুরির কোনো ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে স্বজনরা ঘটনার বিচার দাবি করে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন।
এদিকে, হাসপাতালে ভর্তির পর ঘটনার শিকার নারীর শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। তবে আপাতত শঙ্কামুক্ত। তাই আরো কয়েকদিন হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিতে হবে রোগীকে। এমন তথ্য জানালেন, সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মনিরুল ইসলাম। অন্যদিকে রবিবার দুপুরে নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান, জেলা পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ। এই জন্য ফরিদগঞ্জ থানাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
এরপরই ভুক্তভোগী ওই নারী থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করে।