ফরিদগঞ্জ: ফরিদগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৫০ বছরের পুরানো ৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে জনমনে বাড়ছে আতঙ্ক। রোববার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ অফিসারের টেবিলে হঠাৎ করে ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ে। এ ঘটনায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয়। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে যে কোনো মুহূর্তে প্রাণহানিসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে অনেকেই।
পুরানো এই ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণার জন্য বহু আগে থেকেই চিঠি চালাচালি করে আসছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এতে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এখন মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই চলছে চিকিৎসার কার্যক্রম। দুর্ঘটনা এড়াতে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় দায়সারাভাবে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম।
সরজমিনে রোববার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গিয়ে দেখা যায়, অর্ধশত বছরের পুরানো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনের পিলার, দেয়াল ও ছাদের ভিমে অসংখ্য ফাটল দেখা দিয়েছে। খসে পড়েছে জানালার সানসেটের পলেসত্দরা। সংস্কারের নামে কোনো রকম ঘষা মাজা আর চকচকে রং করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ফাটলের অংশ বিশেষ। রোববার বিকেল পর্যন্ত ভর্তি রোগী ছিলো মাত্র ৭ জন।
পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া রোগী কালিরবাজার এলাকার খোকন তার মাথার উপর ছাদের ফাটল ধরা ভিম দেখিয়ে বলেন, ভাই বড় আতঙ্কে আছি। মনে হচ্ছে আমার মাথার উপর ভিমটি ভেঙ্গে পড়ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার দেলোয়ার হোসেন ভবনটির ফাটল ধরা বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখিয়ে বলেন, এটি পরিত্যক্ত ঘোষণা না করলে যে কোনো মুহূর্তে সাভারের রানা প্লাজার মতো ট্রাজেডির আশঙ্কা রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দায়িত্বশীল অনেকে জানান, বর্তমানে এখানে প্রতিদিন প্রায় দু-আড়াইশ’ বহিরাগত রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আর দায়সারা চিকিৎসার কারণে কেউ ভর্তি হতে চায় না। নিরূপায় হয়ে গ্রামের দরিদ্ররা এখানে ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছে।
উপজেলার বড়ালী এলাকায় ১৯৬০ সালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালের ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। বহু পুরানো ভবনের কারণে পর্যায়ক্রমে এ ভবনটির বিভিন্ন দেয়াল ও ছাদে ফাটল দেখা দেয়ায় এটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। প্রায় ৪ বছর পূর্বে তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ শাহজামাল এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পুরানো ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিক চিঠি দিয়েছেন। এর আগে চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ শাহনেওয়াজ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা চেয়ে এর করুণ দশা বর্ণনা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছেন। এই চিঠি দেয়ার পর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা না করে গত কয়েক বছর যাবৎ সংস্কারের নামে ঘষা মাজা করে রাখা হচ্ছে।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আমিনুল ইসলাম স্বপন ভবনটির বিভিন্ন ফাটল আর প্লাস্টার খসে পড়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, প্রতিনিয়ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অবগত করা হচ্ছে। বলতে গেলে এখন মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করার জন্য প্রায় ৪ বছর পূর্বেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা না করে এখন সংস্কারের নামে এটি ঘষা মাজা করে রাখা হয়েছে। বর্তমানে এই ভবনটির যে নাজুক অবস্থা দেখা যাচ্ছে এতে করে যে কোনো মুহূর্তেই বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।