তিন বছরের ফুটফুটে সন্তান ও স্ত্রী রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করতে যেয়ে বিয়ের আসর থেকে হাতেনাতে আটক হয়েছে বিয়েপাগল প্রবাসী যুবক সুমন। স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় এখন তার ঠিকানা হয়েছে চাঁদপুর জেলা কারাগার। এলাকাবাসী রসিকতা করে বলছেন, দ্বিতীয় শ্বশুর বাড়ির সন্ধানে যেয়ে সুমন এখন ‘তৃতীয় শ্বশুর বাড়ি’তে ঠাঁই পেয়েছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলার শাশিয়ালী গ্রামের পাটওয়ারী বাড়ির তাজুল ইসলামের ছেলে কুয়েত প্রবাসী মোজাম্মেল হোসেন সুমন ২০১০ সালের ২৮ জুন ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক একই উপজেলার গোবারচিত্রা গ্রামের দেলোয়ার হোসেন খানের কন্যা রেবেকা সুলতানাকে বিয়ে করে। বিয়ের সময় রেবেকার পরিবার ৬ ভরি সোনা ও ২ লাখ টাকার আসবাবপত্র প্রদান করে। বিয়ের কিছু দিন পর সুমন চাঁদপুর শহরের বিটি রোড এলাকায় জমি ক্রয়ের জন্য ফেরৎ দেয়ার শর্তে নগদ ১০ লাখ টাকা হাওলাত নেয় তার শ্বশুরের কাছ থেকে। কিন্তু পরবর্তীতে ওই টাকা দিতে অস্বীকার করে এবং এই টাকা যৌতুক হিসেবে নিয়েছে বলে দাবি করে। শুধু তাই নয়, এরপর আরো মোটা অংকের টাকা যৌতুক হিসেবে দাবি করে সুমন ও তার পরিবারের সদস্যরা। তাদের চাহিদা অনুযায়ী যৌতুক দিতে অস্বীকার করায় রেবেকার উপর বিভিন্ন সময়ে নির্যাতন করে আসছিল তার স্বামী, শাশুড়িসহ শ্বশুর পরিবারের লোকজন। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে বহুবার শালিসও হয়েছে। এ ব্যাপারে ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি ফরিদগঞ্জ থানায় একটি জিডি (নং ৬২৯) করেছিল রেবেকা।
এমনকি যৌতুকের দাবি পূরণ না করায় রেবেকা ও তার অবুঝ শিশুকে শ্বশুর বাড়িতে থাকতে দেয়া হয়নি। শ্বশুর বাড়ি গেলেই রেবেকাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে তাড়িয়ে দেয়া হতো। প্রবাসে থাকাকালে স্ত্রী ও সন্তানের কোন খোঁজ-খবর নিত না সুমন। এমনকি তাদের ভরণপোষণ বাবদও কোনো খরচ দেয়নি।
গত ৪ সেপ্টেম্বর মাসে দেশে আসে সুমন। পরদিন ৫ সেপ্টেম্বর স্ত্রী রেবেকা সুলতানা খবর পেয়ে শ্বশুর বাড়িতে যায়। এবারও যৌতুকের দাবিতে স্বামী ও শ্বাশুড়িসহ পরিবারের অন্য লোকজন মিলে রেবেকা সুলতানাকে মারধর ও নির্যাতন করে তাড়িয়ে দেয়। নিরুপায় হয়ে রেবেকা তার শিশুসন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে এসে চিকিৎসা নেয়। এ নিয়ে গত ঈদুল আযহার এক সপ্তাহ পর উভয় পরিবারের মধ্যে শালিস বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। সংসার টিকিয়ে রাখার স্বার্থে রেবেকা তখন এ বিষয়ে কোনো মামলা-মোকদ্দমা করেনি।
এ অবস্থায় গত ৭ অক্টোবর মোজাম্মেল হোসেন সুমন তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তানের বিষয়টি গোপন রেখে চাঁদপুর শহরের বিষ্ণুদী এলাকার গাজী বাড়িতে বিয়ে করতে আসে তার পিতাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে। গোপন সূত্রে শেষ মুহূর্তে রেবেকা সুলতানার অভিভাবকরা সুমনের দ্বিতীয় বিয়ে আয়োজনের বিষয়টি জানতে পারে। দ্বিতীয় বিয়ে বন্ধ করতে রেবেকা সুলতানার পিতা দেলোয়ার হোসেন খান দ্রুত চাঁদপুর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করে। এসআই মানিক মিয়ার নেৃতত্বে একদল পুলিশ বিষ্ণুদীতে যেয়ে বিয়ে পড়ানোর পূর্ব মুহূর্তে বিয়ের আসর থেকে প্রতারক বর সুমনকে গ্রেফতার করে। গাজী বাড়ির লোকজন জানান, প্রথম স্ত্রী ও সন্তানের কথা গোপন রেখে সুমন ও তার পরিবার দ্বিতীয় বিয়ে ঠিক করেছিল।
রেবেকা সুলতানা ওই দিনই বাদী হয়ে সুমনসহ ৫জনকে আসামী করে নারী নির্যাতন, যৌতুক ও প্রতারণা করে অন্যত্রে বিয়ে করতে যাওয়ার অভিযোগে ফরিদগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ সুমন আটক করে আদালতে প্রেরণ করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করে। মামলার অন্য আসামীরা হলো ঃ সুমনের মা সাফিয়া বেগম, ভাই মোঃ মোফাচ্ছের হোসেন ও কাউছার হোসেন এবং সুমনের মামা মোঃ জসিম উদ্দিন। দ্বিতীয় বিয়ে আয়োজনের মূল হোতা সাফিয়া বেগম ও জসিম উদ্দিন।
এদিকে মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য বাদী রেবেকা সুলতানার পরিবারকে মোবাইল ফোনে ও প্রকাশ্যে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে সুমনের পরিবারের লোকজন। তারা বলছে, সুমনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করা না হলে রেবেকা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে লাগাতার মামলা দিয়ে হয়রানী করা হবে। পাল্টা মামলার হুমকির বিষয়টি চাঁদপুরের পুলিশ সুপার, ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে রেবেকার পরিবারের পক্ষ থেকে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোঃ রহমত আলী জানান, মামলার তদন্ত চলছে।
পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফর ও ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নাজমুল হক জানান, আইন মোতাবেক পুলিশ মামলার তদন্ত করছে। আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শিরোনাম:
সোমবার , ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ , ২৫ ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।