মিজানুর রহমান রানা
গত ক’দিন ধরে চাঁদপুরের জনস্বাস্থ্য নিয়ে মেঘনাবার্তায় প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো নিয়ে জেলায় ছিলো সাধারণ মানুষের ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। ‘চাঁদপুর সদর হাসপাতালের ডাক্তার হামিমা নিজেই একজন মানসিক রোগী!’ প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছিলো টক অব দ্যা টাউন।
চাঁদপুরের ডাক্তার-ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের আঁতাত বাণিজ্যের বিষয়টি নিয়ে গতকাল বুধবার চাঁদপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. প্রদীপ কুমার দত্তের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন না। চাঁদপুরের স্থানীয় পত্র-পত্রিকা তিনি বেশ ক’দিন ধরেই পড়েন না। গত মঙ্গলবার চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ডাক্তার হামিমার কাছে তথ্য চাইতে গেলে সাংবাদিকদের সাথে যে রূঢ় আচরণ করেছেন তাও তিনি জানেন না। এছাড়াও ডা. হামিমা রোগীদের সাথে যে খারাপ আচরণ করেন এ ব্যাপারে তার কোনো ধারণা নেই। তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আগামী দিন (আজ) পত্রিকা নিয়ে আসেন আমি দেখে তারপর মন্তব্য করবো। এছাড়াও চাঁদপুরে ডাক্তারদের ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে যে ঔষধ স্যাম্পল, উপঢৌকন দেয়া নেয়া সম্পর্ক তাও তিনি জানেন না বলে জানান।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. এএসএম আবদুস সাত্তার মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান যে, তিনি ছুটিতে বরিশাল আছেন। এ ক’দিনে মেঘনাবার্তা বা স্থানীয় পত্র-পত্রিকা দেখার সুযোগ হয়নি। তিনি আরো জানান, চাঁদপুর সদর হাসপাতালের সমস্যার বিষয়টি আমার দেখার বিষয় নয়। এটি দেখার বিষয় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের। তবে গত পরশু দিন নয়া দিগন্তে হাসপাতাল সম্পর্কে কিছু নিউজ এসেছে, আমাকে চট্টগ্রাম বিভাগের ডাইরেক্টর সাহেব তা জানিয়েছেন। বিষয়টি ডাইরেক্টরের কন্ট্রোলে। আর স্থানীয় পর্যায়ে এ বিষয়ে দায়িত্ব তত্ত্বাবধায়কের। সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক যদি বিষয়টি না দেখে তাহলে আমার বলা কিছুই নেই। কারণ বিষয়টি আমার দেখার বিষয় নয়। আর আইনগতভাবে সেখানে যাবারও আমার অধিকার নেই। তবুও আমি মাঝে মাঝে তা দেখার চেষ্টা করি।
তবে ডাক্তার হামিমা সম্পর্কে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে আরো জানা যায়, এই উগ্রভাবপন্থী, মানসিক বিকারগ্রস্ত ডাক্তার কাউকে পরোয়া করে না। তিনি খামখেয়ালীভাবে যা খুশি তাই করেন। চাঁদপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কোনো রোগী চিকিৎসার জন্য এলে তাদের সঠিক চিকিৎসাপত্র না দিয়ে রোগীর অভিভাবক কথা বললে তিনি তারস্বরে চিৎকার চেঁচামেচি করে জরুরি বিভাগের পরিবেশ কলুষিত করেন। আরো জানা গেছে, গত ২০ এপ্রিল শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. শফিউল্লাহ মামুনের ব্যক্তিগত চেম্বারে এক শিশু রোগী দেখানোর পর শিশুটির স্বাস্থ্যগত সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করলে ডাক্তার শফিউল্যাহ মামুন শিশুটিকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ দেন। শিশুর অভিভাবক শিশুটিকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তির জন্য নিয়ে টিকেট করে ডাক্তার হামিমার নিকট নিয়ে গেলে ডা. হামিমা ওই শিশুটিকে ভর্তি করেননি। তিনি বর্হিবিভাগ থেকে টিকেট করে ডাক্তার দেখানোর নির্দেশ দেন। গত দু’তিনদিন আগে জনৈক গর্ভবতী নারী রোগী প্রসব যন্ত্রণায় হাসপাতালে ভর্তি হতে আসলে তিনি ভর্তি করতে রাজি হননি। তার অপরাধ ছিলো ওই রোগী পূর্বে অন্য গাইনী চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন কেনো? তিনি ওই রোগীর কাগজপত্র দেখেই রোগীর সাথে উদ্ভট আচরণ করে তাকে বের করে দেন। ডাক্তার হামিমা যে দালাল পোষেণ তাদের দিয়েই তিনি প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করেন। এ ব্যাপারে একটি সূত্র জানায়, তিনি যে অঢেল সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন তাতে করে তার চাকুরি ভয়ও তিনি করেন না। সেজন্যে তিনি রোগী, রোগীর অভিভাবক, সাংবাদিক সহ কাউকে পরোয়া করতে রাজি নন।
হাসপাতালের সাধারণ মানুষ, রোগী, অভিভাবকদের সাথে আলাপকালে আরো জানা যায়, ডাক্তার হামিমার বিষয়ে স্বয়ং তত্ত্বাবধায়ক পর্যন্ত কথা বলতে ভয় পান। কারণ তাহলে ডাক্তার হামিমার ভাড়া করা বাহিনী, দালাল চক্রের হাতে তাকেও নাজেহাল হতে হবে। তাই তিনি ডাক্তার হামিমার প্রসঙ্গে আলোচনাসভায় কোনো উঠলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
শিরোনাম:
শনিবার , ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৩ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।