ফখরুলইসলামতারেক: ২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা। এরই মধ্যে ৫ জনের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। বাকি আসামিদের মধ্যে একজন হচ্ছে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জের কলঙ্কিত সন্তান সাবেক সেনা কর্মকর্তা রাসেদ চৌধুরী। বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিলে পলাতক খুনি রাসেদ চৌধুরীর সম্পত্তির খোঁজে তার পৈতৃক বাড়িতে গিয়ে জানা যায় রাসেদ চৌধুরী হাজীগঞ্জ উপজেলার ৬নং বড়কুল ইউনিয়ন সোনাইমুড়ী গ্রামের উকিল বাড়ির মৃত মওলানা সিহাব উদ্দিনের দ্বিতীয় সন্তান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মওলানা সিহাব উদ্দিন একাত্তরে ছিলেন ওই এলাকার নামকরা রাজাকার। স্বাধীনতাবিরোধী এই রাজাকার জোর করে মানুষের সম্পত্তি ছিনিয়ে নিয়েছে বলে এলাকাবাসী জানায়। বেশির ভাগ সম্পত্তি রয়েছে তার মা ছায়েদুন্নেছার নামে।
রাজাকার সিহাব উদ্দিনের ছিল ৮ ছেলে ও ১ মেয়ে। রাসেদ চৌধুরীর বড়ভাই খাদের চৌধুরী কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে রয়েছে, ২য় বঙ্গবন্ধুর খুনি হিসেবে খ্যাত রাসেদ চৌধুরী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন, ৩য় মাজুদ চৌধুরী ঢাকার নামকরা ব্যবসায়ীদের একজন, ৪র্থ মাসুদ চৌধুরী মারা গেছেন। ৫ হামিদ চৌধুরী ঢাকার ব্যবসায়ী, ৬ষ্ঠ মাহ্মুদ চৌধুরী ঢাকায় শেয়ার ব্যবসা সিন্ডিকেটের একজন হিসেবে খ্যাত, ৭ম তোফায়েল চৌধুরী গ্রামের বাড়িতেই বসবাস করছেন ও ৮ম জামিল চৌধুরী লন্ডন প্রবাসী। একমাত্র বোন সুলতানা গ্রামে বিয়ে হলেও বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করছেন বলে এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্রে আরো জানা যায়, তাদের মাঠে ১১ ও বসতবাড়িতে প্রায় ২ কানি পৈতৃক সম্পত্তি রয়েছে। এর মধ্যে খুনি রাসেদ চৌধুরীর ভাগে প্রায় ১১০ শতাংশ সম্পত্তি রয়েছে যার বর্তমান মূল্য কোটি টাকার ওপরে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুর খুনি রাসেদ চৌধুরী ১৯৭৪ সালে নিজ এলাকার মৃত ইউসুফ আলী বেপারির ছেলে প্রতিবাদী লতিফ মাস্টারকে নোয়াখালী জেলার ছাগলনাইয়া নামক স্থানে হত্যা করে লাশ বস্তাবন্দি করে ব্রিজের নিচে ফেলে দেয়। এ ব্যাপারে মামলা হলে ওই সময় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলে লতিফ মাস্টারের পরিবারের দাবি।
৬নং বড়কুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সোনাইমুড়ী গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম জানান, রাসেদ চৌধুরীর বাবা মওলানা সিহাব উদ্দিন ছিলেন ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর দোসর। তার ছেলে সেনা কর্মকর্তা রাসেদ চৌধুরী ও তার ভাইদের দাপটে এলাকার সবাই থাকতো সন্ত্রস্ত।
রাসেদ চৌধুরীর ভাই বর্তমানে গ্রামের বাড়িতে বসবাসরত তোফায়েল চৌধুরীর স্ত্রী শিক্ষিকা শরীফা বেগম জানান, বছর দেড়েক আগে তাদের ভাইদের সম্পত্তি ভাগ হয়েছে। তিনি আরো জানান, ৬ষ্ঠ ভাই মাহ্মুদ চৌধুরীর সঙ্গে রাসেদ চৌধুরীর যোগাযোগ রয়েছে। তার কাছে ফোনে সম্পত্তিগত তথ্য জানতে চাইলে তিনি ইতিপূর্বেও বহু সাংবাদিক লেখালেখি করেছে উল্লেখ করে নিজে ব্যস্ত বলে লাইন কেটে দেন।
স্বাগত জানিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করাসহ অবিলম্বে তাদের দেশে এনে ফাঁসি কার্যকর করার দাবি মানবতাবাদী সচেতন মহলের।