‘জাতির পিতার সম্মান, রাখবো মোরা অম্লান’ এ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে কুষ্টিয়া জেলায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গার প্রতিবাদ জানিয়েছেন চাঁদপুর জেলায় কর্মরত জেলা পর্যায়ের সকল সস্তরের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। গতকাল ১২ ডিসেম্বর শনিবার সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ উপলক্ষে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভাপ্রধানের বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান। বক্তব্য রাখেন জেলা ও দায়রা জজ এসএম জিয়াউর রহমান, পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান (পিপিএম বার), চাঁদপুর আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ হাবিব উল করিম, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামানের পরিচালনায় প্রতিবাদ সভায় আরো বক্তব্য রাখেন এনএসআই চাঁদপুরের উপ-পরিচালক শাহ আরমান আহমেদ, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাহাব উদ্দিন, জেলা কৃষি অফিসার জালাল উদ্দিন, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ইউনুছ বিশ্বাস, জেলা আনসার কমান্ডার ইব্রাহিম খলিল, জেলা পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডাঃ মোঃ ইলিয়াছ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা ও চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্লাহ।
কালেক্টরেট জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মোশারফ হোসেনের কোরআন তেলাওয়াত ও ইঞ্জিঃ তম্ময় দেবের গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এ প্রতিবাদ সভায় আরো বক্তব্য রাখেন কালেক্টরেট কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম মিজানুর রহমান ও তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী সমিতির উপদেষ্টা সাইফুল ইসলাম।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীনতা বিরোধীদের উত্তরসূরীরা নতুনভাবে মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু আর ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ এক এবং অভিন্ন। আজ যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তারা মূলত: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। জাতির পিতার সম্মান অমস্নান ও অক্ষুণ্ন রাখতে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করার আহ্বান জানান বক্তারা।
এডিএম মোঃ জামাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) কাজী আবদুর রহীম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সি্নগ্ধা সরকার, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) গিয়াসউদ্দিন মিলনসহ প্রতিবাদ সভায় জেলার সর্বস্তরের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ অংশ নেন। এছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবাদ সভায় চাঁদপুর জেলা ও দায়রা জজ এসএম জিয়াউর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের বাঙালি জাতির জন্যে, বাংলার মানুষের জন্যে যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা পৃথিবীতে বিরল। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন। তিনি বাংলার মানুষকে যতটা ভালোবাসেন, আমরা বিশ্বাস করি বাঙালি জাতিকে অন্য কেউ এতোটা ভালোবাসেন নি এবং তিনি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবদ্দশায় বলে গেছেন, তার সবচেয়ে শক্তি হচ্ছে তিনি বাংলার মানুষকে ভালোবাসেন। তার সবচেয়ে দুর্বলতা হচ্ছে বাংলার মানুষকে বড় বেশি ভালোবাসতেন। অথচ আমাদের দুর্ভাগ্য সেই ভালোবাসার মানুষ আমাদের জাতির পিতাকে এদেশের কিছু কুলাঙ্গার দেশী-বিদেশী চক্রান্তে পনরই আগস্ট হত্যা করেছিলো।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে আমাদের দেশ গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। আমাদের পরম সৌভাগ্য বিদেশে থাকার কারণে তাঁর দুই কন্যা বেঁচে গেছেন। আজ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমাদের অহঙ্কার গৌরব সংবিধান স্বীকৃত জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাঙ্গা হয়েছে। কিছু দুষ্কৃতকারী এ অপকর্ম করে ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত করেছে। আমরা চাই যারা এ ধরনের ধৃষ্টতা দেখিয়েছে আইনের আওতায় তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। অবশ্যই সেটা হবে বাংলার মাটিতে।
জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান তাঁর বক্তব্য বলেন, বঙ্গবন্ধু মহামানব। এ মহামানবের জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না। তাঁর দর্শন আদর্শের প্রতি আঘাত এসেছে। আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, এদেশের নাগরিক। আমাদের নৈতিক অধিকার রয়েছে জাতির পিতার সম্মান সমুন্নত রাখা। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এখন আর সেই বাংলাদেশ নেই। সামান্য একটু আঘাত করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধ্বংস করবেন এতো সহজ নয়। জাতির পিতার অসম্মান কোনোভাবেই হতে দেবো না। তাঁকে আরো সম্মানিত করবো, মান উন্নত করবো এবং আরও উঁচুতে নিয়ে যাবার জন্যে সর্বদা কাজ করবো।
পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, পুলিশে আমার বিশ বছরের চাকরি জীবনে এ ধরনের প্রতিবাদ সভায় কখনো যোগদান করিনি। আমরা সবাই ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছি। ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস। এই ডিসেম্বর মাসকে নাশকতার জন্যে বেছে নেয়া হয়েছে। আজ পদ্মা সেতু যখন দৃশ্যমান, ডিজিটাল বাংলাদেশ যখন সত্যি হচ্ছে, ঠিক তখনি প্রগতিশীল বিরোধী শক্তিগুলো আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবার চেষ্টা করছে। তাদের ভেতরের পশুত্ব এখনো জেগে আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির অবিচ্ছেদ্য নেতা বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু এ দুটি শব্দকে কখনো বিচ্ছিন্ন করা যায় না। আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের উপর আঘাত মানে বাঙালি জাতিসত্তার প্রতি একটি গভীর কুঠারাঘাত। আমাদের প্রতিটি মানুষের মধ্যে সত্যিকারের মনুষত্ব জাগিয়ে তুলতে হবে। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করে বাংলাদেশের অগ্রগতি কখনো সম্ভব নয়। অগ্রগতির মাহেন্দ্রক্ষণে তারা বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের এই অপতৎপরতা আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে।