মিজান লিটন=
চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের বহরিয়া বাজার এলাকা হরতাল সমর্থক ও প্রতিরোধকারীদের মারমুখী আচরণে রণৰেত্র হয়ে উঠে। উভয় পক্ষের মারমুখী আচরণে উভয় দলের প্রায় ৫০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়। ঘণ্টা দুয়েক সংঘর্ষে লিপ্ত থাকার পর পুলিশ ও বিজিবির স্ট্রাইকিং ফোর্স পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সৰম হয়। এ সময় সহকারী কমিশনার রাজিবুল ইসলাম ও চাঁদপুর সদর সার্কেলের এএসপি সৈকত শাহীন উপস্থিত ছিলেন।
১৮ দলীয় জোটের ব্যানারে বিএনপির ডাকা ৬০ ঘণ্টার হরতালের গতকাল ৬ নভেম্বর ছিলো শেষ দিন। এ দিন সকাল ৯টার দিকে হরতালের সমর্থনে বিএনপির নেতৃত্বে একটি মিছিল বহরিয়া বাজার অভিমুখে আসতে চাইলে হরতাল প্রতিরোধকারীদের বাধার মুখে পড়ে। শুরু হয় উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা। হরতাল প্রতিরোধকারীদের বাধার মুখে পড়ে এক পর্যায়ে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে তারা পুনরায় সংঘবদ্ধ হয়ে বহরিয়া বাজারের পূর্ব দিকে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাফেজ বেপারীর হ্যাচারীর সামনের রাস্তা দিয়ে বাজারের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। তখন তাদের হাতে শোভা পায় দা, কুড়াল, ছেনী, হকিস্টিকসহ দেশীয় অস্ত্র। তাদের মারমুখী আক্রমণে পিছু হটে হরতাল প্রতিরোধকারীরা। এক পর্যায়ে তারাও শক্তি সঞ্চয় করে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। মুহূর্তের মধ্যে বহরিয়া বাজার রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। উভয় পক্ষের ছোঁড়া ইটে প্রায় ৫০ জনের মতো আহত হয়। আহতদের ক’জন চাঁদপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও বাকিরা পুলিশের ভয়ে সদর হাসপাতালে না এসে নিজেদের সুবিধাজনক স্থানে চিকিৎসা নেয়। এরই মাঝে হরতালের সমর্থক ও প্রতিরোধকারীরা আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি সমর্থকদের দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। তাদের হামলায় বহরিয়া বাজারের বিল্লাল হোসেন জমাদারের সার ও ঔষধের দোকান, বাবুল গাজীর স্টেশনারী দোকান, রুহুল আমিন দর্জির চায়ের দোকান, মোঃ রুবেলের স্টেশনারী দোকান, নূর ইসলাম কবিরাজের ফলের দোকান, জুয়েল খাঁর স্টেশনারী দোকান, হারুন খাঁর চায়ের দোকান, আবুলের চায়ের দোকান, ইব্রাহিম মিয়ার চায়ের দোকান, শাহআলমের চায়ের দোকান, আলমাস গাজী ও সাহেব আলী গাজীর মুদি দোকান, নূর খাঁর চায়ের দোকান, রফিক ডাক্তারের ঔষধের দোকান, টুকু হাজীর হার্ডওয়্যারের দোকান, হাবিব ডাক্তার ও জাহাঙ্গীর ডাক্তারের ঔষধের দোকান, মোঃ নাসির খানের কাঠ-ফার্নিচারের দোকান কম বেশি ভাংচুর হয়। বেশি ৰতিগ্রসত্দ হয় চায়ের দোকানগুলো। এ সকল দোকানের অসহায় মালিকগণ তাদের ক্ষতি হয়ে যাওয়া দোকানের চিত্র দেখিয়ে অনেকেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন। তারা জানতে চান, আমাদের অপরাধ কোথায়। আমাদের দোকানে সকল দলের নেতা-কর্মীরাই আসে। অথচ তাদের একবারও বুক কাঁপলো না আমাদের গরিবের পেটে লাথি মারতে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মাঝে এ সংঘর্ষের সংবাদ শহরে ছড়িয়ে পড়লে উভয় দলের কর্মী-সমর্থকরা দল বেঁধে বহরিয়া বাজার অভিমুখে ছুটে যায়। এদের মাঝে কিছু উৎসুক কর্মীও এ মারামারিতে যোগ দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশসহ বিজিবি কর্মীরাও ছুটে যান। তারা উভয় পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে লাঠিচার্জ করলেও পরে ১৪ রাউন্ড রাবার বুলেট ৪ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেন। এতে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা সোহাগ (১৫), কবির হোসেন (১৭), মোঃ নাজিম (১৫), রুবেল হোসেন (১৯), আউয়াল (১৮), মোঃ হুমায়ুন কবির (২১), মোস্তফা (১৬), মমিন হোসেন (১৮), মোঃ রাজীব (১৮), মোঃ সুমন (২০)কে আটক করে। পুলিশের ২/৩টি গাড়ি ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এরই মধ্যে দুপুর ১২টায় আওয়ামী লীগের একদল কর্মী ইউনিয়ন বিএনপির অফিসে অগি্নসংযোগসহ অফিসের পাশে থাকা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ভূঁইয়ার ভাঙ্গারির দোকানে হামলা চালায় এবং দোকানটি ভাংচুর করে। তখন ৫০ গজ দূরেই পুলিশের একটি দল অবস্থান করছিলো। বিএনপি অফিসে অগ্নি সংযোগের সাথে সাথে অদূরে থাকা পুলিশ সদস্যসহ স্থানীয়রা তা নিয়ন্ত্রণে আনে। যার জন্য বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারেনি। যদি তাৎক্ষণিক আগুন নিয়ন্ত্রণে না আনা যেতো তাহলে বহরিয়া বাজারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ছিলো। আর তাহলে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কারো দোকানই রৰা পেতো না। অবশ্য আগুনের সংবাদ শুনে পুরাণবাজার ফায়ার সার্ভিসের পানিবাহী দুটি অগ্নি নির্বাপণ গাড়ি ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। তখন সময় সাড়ে ১২টা। উভয় দলের সংঘর্ষ চলাকালীন পুলিশ ও বিজিবির উপস্থিতিতে কোনো দলেরই ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রথম সারির নেতাকে চোখে পড়েনি। গতকালের সংঘর্ষ শেষে বহরিয়া বাজারের ৰতিগ্রসত্দ দোকানগুলোর দৃশ্য দেখে অনেকেই আঁৎকে উঠেন। অনেকেই জানতে চেষ্টা করেন শহরতলীর এ ছোট্ট বাজারে কী আছে। কী কারণে এ প্রতিহিংসা, হরতালকে কেন্দ্র করে এ হিংসাত্মক কার্যকলাপের পেছনে কী কারণ রয়েছে। অনেকে আবার গতকালকের এ সংঘর্ষকে এর আগের দিনের জের হিসেবে দেখছেন। এর আগের দিন অর্থাৎ হরতালের দ্বিতীয় দিন হরতালকে কেন্দ্র করে বিএনপি, জামায়াত, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ কর্মীদের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। শুরু হয় উভয় পক্ষের মাঝে মারমুখী হামলা। এ হামলায় উভয় দলের প্রায় ৪০ জনের মতো আহত হয়। এ হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে ৮ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৫ রাউন্ড টিয়ারশেল নিৰেপ করতে হয়। এ ঘটনার পর থেকেই এলাকাবাসীর মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছিলো। গতকালকে পুনরায় এ হামলার কারণে নিরীহ এলাকাবাসী আরো বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তাদের ভয়, আবার কখন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য পুনরায় উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেন।