সোহেল, মতলব, চাঁদপুরঃ শিল্পীর রংতুলি দিয়ে আঁকা হাজারো নদীর মোহনায় সবুজের অরণ্যে ঘেরা দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত একটি দেশ। এর আয়তন প্রায় ৫৫,৫৯৮ বর্গমাইল বা ১৪৪,৫৭০ বর্গকিলোমিটার। এদেশের উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, অরূনাচল ও আসাম রাজ্য, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে আসাম, ত্রিপুরা রাজ্য ও বার্মা বা বর্তমানে মায়ানমার এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ।
ইতিহাসের প্রাচীনতম দেশ বাংলাদেশ। হাজারো বছরের প্রাচীন এ জনপদ বর্তমানে বাংলাদেশ নাম পরিগ্রহ করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে বাংলাদেশকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা যায়, যা অতি সংক্ষিপ্ত আকারে শাসনভিত্তিক ভাবে পর্যায়ক্রমে তুলে ধরার চেষ্টা করা হল :
ক)প্রাচীন যুগ
খ)মধ্যযুগ
গ)আধুনিক যুগ
প্রচীন সভ্যতার অভ্যুদয় ঘটে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশে। আফ্রিকার মিশর এবং এশিয়ার মেসোপটেমিয়া, ভারত ও চীন সভ্যতার লীলাভূমি। ভারতীয় উপমহাদেশে সবচেয়ে পুরনো সভ্যতার সন্ধান পাওয়া যায় সিন্ধু নদের অববাহিকায়। পন্ডিতগণ অনুমান করেন খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০ অব্দ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ অব্দ পর্যন্ত এ সভ্যতা স্থায়ী ছিল। প্রাচীন ভারতে প্রচলিত ছিল ব্রাক্ষী ও খরোষ্টী নামে দুই রকেমের লিপি। আমাদের বাংলা বর্ণমালা এসেছে ব্রাক্ষী লিপি থেকে। ১৯২১-২২ সালে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্যার জন মার্শাল মাটি খুড়ে এ সভ্যতার নিদর্শন বের করেন।
সিন্ধু সভ্যতা কিভাবে ধবংস হয়েছিল তার কোন সঠিক সন্ধান আজও পাওয়া যায়নি।সিন্ধু সভ্যতার পর কোন এক সময় সম্ভবত পারস্য দেশ থেকে এদেশে আগমন ঘটে আর্যদের। আর এ সময়ে বৌদ্ধ ধর্মের উদ্ভব ঘটে। এ ধর্মের প্রবর্তক ছিলেন গৌতম বুদ্ধ।
ধারণা করা হয় ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম সম্রাজ্য হল মৌর্য সম্রাজ্য। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এ সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা এবং ভারতের প্রথম সম্রাট। বাংলাদেশে কখন মানুষের বসবাস শুরু হয়েছে তার সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে আর্যদের বাংলাদেশে আসার আগে অজয় নদের সভ্যতার কিছু নিদর্শন পাওয়া যায়। গ্রিক লেখকদের বর্ণনামতে, ৩২৭ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডারের উত্তর পশ্চিম ভারত আক্রমনকালে প্রাচীন বাংলায় ”গঙ্গারিডই” নামে একটি শক্তিশালী রাজ্য ছিল। চন্দ্র্রগুপ্ত মৌর্যের মৃৃত্যুর পর তার পুত্র সম্রাট অশোক সিংহাসনে আরোহন করেন। সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে (২৩২-২৬৯) খ্রিষ্টপূর্ব উত্তর বাংলায় মৌর্য শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। মৌর্য সম্রাজ্য পতনের পাঁচশত বছর পর গুপ্ত বংশ ক্ষমতায় আসে। এ বংশের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্ত। তিনি ৩২০ সাল থেকে ৩৪০ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তার মৃত্যুর পর ৩৮০ সাল থেকে ৪২৫ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন সমূদ্রগুপ্তের ছেলে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত। গুপ্ত সম্রাজ্যের পতনের পর অরাজকতা দেখা দেয়। এ সুযোগ গৌড়ের স্বাধীন রাজা হন শশাঙ্ক। এ মহাদেশে তখনকার সময় অর্থাৎ ৬৪৭ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন রাজা হর্ষবর্ধন।
এর পর ৭০৫ সালে উমাইয়া খলিফা আল ওয়ালিদ প্রথম ভারতের পশ্চিমাঞ্চল জয় করেন। কিন্তু বাংলায় এরও অনেক পরে মুসলমানরা ক্ষমতায় আসেন। শশাঙ্ক পরবর্তী যুগে বাংলাদেশ খুব দুর্দিনে পতিত হয়। যা ”মাৎস্যন্যয়” নামে পরিচিত। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বাংলায় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণ নিজেদের মধ্য থেকে রাজা গোপালকে নির্বাচিত করেন। আনুমানিক তিনি ৭৫৬ সাল থেকে ৭৮১ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তারপর ছেলে ধর্মপাল ৭৮১ থেকে ৮২১ সাল এবং তার ছেলে দেবপাল ৮২১-৮৬১ সাল এবং তার ছেলে দেবপাল ৮২১ সাল থেকে ৮৬১ সাল পর্যন্ত শাসন করেন। এরপর কতৃত্ব চলে যায় দেবপালের পিতৃভব্য বাকপালের বংশধরের হাতে। বিভিন্ন বিপর্যয় কাটিয়ে রাজা মহীপাল ৯৯৫-১০৪৩ এবং পরবর্তীতে রাজা রামপাল ১০৮২ সাল থেকে ১১২৪ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। রামপালের মৃত্যুর পর যোগ্য উত্তরাধিকারীর অভাবে পাল বংশের পতন হয়। এ সময় বাংলায় দক্ষিণ- পূর্বে শাসন করত দেব ও চন্দ্র বংশ। দেব বংশের রাজা ছিলেন শ্রী শান্তিদেব, শ্রী বীরদেবম, শ্রী আনন্দদেব ও শ্রী ভবদেব। তারা আনুমানিক ৭৫০ থেকে ৮০০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। চন্দ্র বংশের রাজারাও আনুমানিক ৯০০ থেকে ১০৫০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। যেসব রাজা ক্ষমতায় ছিলেন তারা হলেন, মহারাজাধিরাজ ত্রৈলোক্যচন্দ্র, রাজা শ্রীচন্দ্র, রাজা কল্যাণচন্দ্র, লডহচন্দ্র ও গোবিন্দচন্দ্র।
রামপালের একজন অন্যতম সামন্ত ছিলেন হেমন্তসেন। এই হেমন্তসেন বাংলায় পাল বংশের পতনের পর সেন বংশকে ক্ষমতায় আনেন। সেন বংশের বিজয় সেন, বল্লালসেন ও লক্ষণসেন ১২০৫ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। ১২০৪-০৫ সালের কোন এক সময় মুসলমান সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী হঠাৎ করে সেন রাজ্য আক্রমন করে বাংলায় নদীয়া দখল করে নেন। আর এই সাথে শুরু হয় বাংলায় মুসলিম শাসন ব্যবস্থা ।